• ঐতিহ্য

    আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্ৰাম বাংলার মাড়াই‌ ঢেঁকি।

      প্রতিনিধি ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ১২:৪১:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ নুরুল আমিন সরকার-সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি:

    মানুষের জীবন ও জীবনের উপাদানও চলার পথে পাল্টে যায়। তেমনিভাবে পাল্টে গেছে গ্রাম বাংলার চিত্র আর ঢেঁকি। বদলে যাচ্ছে গাইবান্ধা জেলার, সুন্দরগঞ্জ থানার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ভবনের পর ভবন গড়ে উঠছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম হতে মাড়াই ঢেঁকি।গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এক সময় ঢেঁকি দিয়ে চাল তৈরি, চিড়া ভাঙা, আটা, গম, জব, পায়েসের চালের গুঁড়ো, খির তৈরির চাল বানানোর সেই ঢেঁকি-আজ অসহায় হয়ে পড়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে।

    কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোয়ায় বাংলা থেকে বিলীন হয়ে গেছে ঢেঁকি। কয়েকটি গ্রাম ঘুরেও তা দেখা মেলেনা আর। হয়তো জাদুঘরে তার স্থান হয়েছে। বর্তমান মানুষের প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ঢেঁকির ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবে এখনো দেশের কিছু কিছু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকির দেখা মেলে হয়তো।

    এসব ঢেঁকিগুলোর আবার ব্যবহার কমে এসেছে। চৈত্র মাস শেষে নতুন ধানের গন্ধে যখন গ্রাম বিমোহিত হতো তখনি গ্রাম্য মেয়েরা নতুন চাউলের পিঠা আর নানা খাবার তৈরিতে ব্যস্ত থাকতো। এখন আর সেদিন নেই। সব অতীত এখন স্মৃতির পাতায় জমা। আগে বারো মাস ব্যবহার করা হলেও এখন ঢেঁকি শুধু বিশেষ বিশেষ সময়েও দেখা যাচ্ছে না।

    বিশেষ করে শীতের সময় পৌষ ও মাঘ মাসে ঢেঁকির ব্যবহার অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। এক সময় ভোরে আজানের সঙ্গে সঙ্গে স্তব্ধতা ভেঙে চারদিকে ছড়িতে পড়তো ঢেঁকির শব্দ। পরিবারের নারীরা সে সময় দৈনন্দিন ধান, গম ও যব ভাঙার কাজ ঢেঁকিতে করতেন।

    পাশাপাশি চিড়া তৈরির মত কঠিন কঠিন কাজও ঢেঁকিতে করা হতো। বিশেষ করে তিন দশক আগেও সুন্দরগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় শবে বরাত, ঈদ, পূজা, নবান্ন উৎসবসহ বিশেষ বিশেষ দিনে পিঁঠা পুলি খাওয়ার জন্য অধিকাংশ বাড়িতে ঢেঁকিতে চালের আটা তৈরি করা হতো।

    সে সময় গ্রাম্য বধুদের ধান ভাঙার গান আর ঢেঁকির ছন্দময় শব্দে চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যেত। তাছাড়া ওই সময় এলাকার বড় কৃষকেরা আশপাশের দরিদ্র নারীদের টাকা বা ধান দিয়ে ঢেঁকিতে চাল ও আটা ভাঙিয়ে নিতেন।অনেক দরিদ্র পরিবার আবার ঢেঁকিতে চাল ভাঙিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ঢেঁকিতে ভাঙা পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু চালের বেশ কদর ছিল সেসময়। ধান গম ভাঙা যন্ত্র আবিষ্কারের এক সময়ের নিত্যপ্রয়োজনীয় ঢেঁকি আজ বিলুপ্ত প্রায়।

    সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব ঘটেছিল। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রাপথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি। যোগ হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য আর যন্ত্রপাতি। সময় বাঁচাতে গিয়ে এসব যন্ত্রের ওপর বাড়ছে মানুষের বাড়তি নজর।
    গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকিকে নিয়ে গান ও প্রবাদ প্রচলিত থাকলেও ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে।

    শহরে তো বটেই, আজকাল গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটির কথা জানলেও বাস্তবে অনেকের কৌতূহল কেমন করে মেশিন ছাড়া ধান থেকে চাল বের করা হতো। আসলে ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল বানানোই ছিল ঢেঁকির কাজ।কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়ে বিদ্যুৎ চালিত মেশিন (ধান ভাঙ্গার চাল কল) এর মাধ্যমে মানুষ এখন অতি সহজেই অল্প সময়ে ধান থেকে চাল পাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে বসছে চাল তৈরির কল।

    হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র আর প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো সে সবের দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে।
    তবে ঢেঁকি আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। ঢেঁকি একটি শিল্প হলেও এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প রক্ষায় সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন এলাকার প্রবীনরা।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ