• রাজনীতি

    নেতাশূন্য হেফাজত কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে

      প্রতিনিধি ২৮ জানুয়ারি ২০২২ , ১২:১৯:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    রাজনৈতিক ডেক্সঃ

    ২০২০ সালের শুরুতে একটি সমাবেশে আল্লামা আহমদ শফী, জুনায়েদ বাবুনগরীসহ উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা, যাদের অনেকেই এখন নেই।নানা কারণে অতীতে বিভিন্ন সময় আলোচনায় থাকলেও এখন অনেকটাই আলোচনার বাইরে ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। পরপর দু’জন আমির ও মহাসচিবের মৃত্যুর কারণে অনেকটাই খুঁড়িয়ে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম।

    গত ২৬ মার্চ ও এর পরবর্তী সময়ে সহিংস কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটি ব্যাপক চাপে পড়ে। জামিনে বেরিয়ে এলেও হেফাজতের অনেক নেতা এখনও কারাগারে রয়েছেন।
    অতীতে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক এই সংগঠনটি আল্লামা আহমদ শফীর ইমেজ কাজে লাগিয়ে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে নানা ধরনের দাবি আদায় করেছে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে।

    সংকটের শুরু

    হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা আহমদ শফীর জীবদ্দশাতেই সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ পেয়েছিল। সেসময় তৎকালীন মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং শফীপুত্র আনাস মাদানীর মধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসা ও হেফাজত কেন্দ্রীক বিভিন্ন কোন্দলের খবর বাইরে এসেছে অনেকবার।

    এরমধ্যে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতের তৎকালীন মহাসচিব বাবুনগরী কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্বের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেন। যেটিতে শফীপুত্র আনাস ও তাদের অনুসারীদের বাদ দেওয়ায় সংগঠনটির কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

    সেসময় আল্লামা শফীর অনুসারীরা ওই কমিটিকে বাবুনগরীর ‘ফটিকছড়ি কমিটি’ ও ‘রাজনৈতিক কমিটি’ আখ্যা দেয় এবং অচিরেই আল্লামা শফীর নীতি আদর্শকে ধারণ করে নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেন।

    এরমধ্যে গত ২৬ মার্চ ও এর পরবর্তী সময়ে দেশব্যাপী নেতাদের গ্রেফতার ও নানামুখী চাপে গত বছরের ২৫ এপ্রিল রাতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বাবুনগরী।

    পরে ৭ জুন ঢাকার খিলগাঁওয়ের মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে আমির পদে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও মহাসচিব পদে মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদীসহ ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটিতে ফের বাদ পড়েন শফীপন্থীরা। এসময় পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দিলেও এতদিনে কোনো কমিটি দেননি তারা।

    এরমধ্যে গত ১৯ আগস্ট আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ইন্তেকাল করেন। একই বছরের ২৯ নভেম্বর সংগঠনটির মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীও মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মহাসচিব আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী মারা যান।

    এভাবে পরপর দু’জন আমির ও দু’জন মহাসচিব হারিয়ে অনেকটাই নেতৃত্ব সংকটে ভূগছে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসা সংগঠনটি।

    হেফাজত কীভাবে এগুতে চাইছে?

    গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর কেন্দ্র করে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত সহিংসতার মামলায় সারাদেশে টানা গ্রেফতার অভিযানসহ নানামুখী চাপে পড়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

    এসব মামলায় হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় ৩০ নেতাসহ সারাদেশে এক হাজার ২৩০ জনেরও অধিক গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই মামলাগুলোর তদন্ত করছে পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই।

    এরমধ্যে হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন।

    রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘হেফাজত তাণ্ডব’র ঘটনায় চলতি বছর ১৬৫টি মামলা হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় হেফাজতে ইসলামের চার হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই হাজারের বেশি। এদের মধ্যে জামিন নিয়েছেন প্রায় এক হাজার ৩০০ আসামি। এই মুহূর্তে কারাগারে আছেন প্রায় ৭০০ জন। বাকি দুই হাজার আসামি জামিন নেননি। এমন পরিস্থিতিতে কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করাটাই এখন হেফাজতের বড় চ্যালেঞ্জ।

    বর্তমানে হেফাজতের কার্যক্রম কিভাবে চলছে?

    শুরু থেকেই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল থেকে শুরু করে সব ধরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম হেফাজত দূর্গ বলে খ্যাত চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে পরিচালিত হত।কিন্ত মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী দায়িত্ব নেওয়ার পর তার পরিচালিত ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসা থেকে কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এরমধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে বেরিয়ে আসে হেফাজত।

    গত ২৯ নভেম্বর মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া মহাসচিব পদে দায়িত্ব পেয়েছেন মাওলানা সাজিদুর রহমান। তিনি সংগঠনটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার আমির ছিলেন।

    জাতীয় রাজনীতি বা কওমি অঙ্গনে তিনি তেমন ‘ক্যারিশমাটিক’ হিসেবে পরিচিত নয়। আল্লামা আহমদ শফী ও বাবুনগরীর সময়ে মূল নেতৃত্বেও ছিলেন না তিনি। সবমিলিয়ে নেতৃত্বশূন্যতায় এখন অনেকটা খুঁড়িয়ে চলছে আলোচিত সংগঠন হেফাজতের কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, নেতাশূন্য হেফাজত কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে?

    হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, হেফাজত ১৩ দফা দাবিকে সামনে রেখে গঠিত হয়েছে। এ দাবিগুলোর উপর আমরা অটল রয়েছি। যখনই কোনো গোষ্ঠী আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) অবমাননা করেছে আমরা সেটির প্রতিবাদ করেছি। ভবিষ্যতেও এসব ইস্যুতে আমরা কাজ করব। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তাই সবসময় আমাদের সরব থাকতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

    আটক নেতাদের মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যেসব নেতাকর্মীকে এখনো কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের জামিনের জন্য আইনগত চেষ্টা করছি। কিন্তু আদালত স্বাধীন না হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো সবই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এসব মামলা প্রত্যাহার হবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। পুরাতন মামলাগুলো প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন মামলাগুলোতে যেন অভিযোগপত্র দেওয়া না হয় সে বিষয়ে কথা হচ্ছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ