• শিক্ষা

    ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দিন

      প্রতিনিধি ২২ জুলাই ২০২২ , ৩:৫৫:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

    একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু শিক্ষক নিয়োগদান করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। শিক্ষককে যথোপযুক্ত পদে বসানোরও প্রয়োজন রয়েছে। সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক স্থানে বসানো বা পদায়ন করা সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর শিক্ষা ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়। একজন শিক্ষককে যদি তার যথোপযুক্ত পদে (পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদির মাধ্যমে) অধিষ্ঠিত করা না হয়, সে ক্ষেত্রে ওই শিক্ষকের মনে অসন্তুষ্টি বা হতাশা সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক।

    এরূপ পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত ও অসন্তুষ্ট শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারেন না। এর ফলে সংশ্লিষ্ট পদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ/আগ্রহের অভাবে মনস্তাত্ত্বিকভাবেই শিক্ষকদের পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যায়। আর শিক্ষকদের পারফরম্যান্স খারাপ হলে ছাত্রছাত্রীরাও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে না। কেননা হাসিখুশিভাবে কর্মস্থলে আসা একজন শিক্ষক ও বিমর্ষভাবে কর্মস্থলে আসা শিক্ষকের পারফরম্যান্সের মধ্যে পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।

    উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে সরকারি কলেজে বদলি, পদোন্নতিসহ আকর্ষণীয় প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। তাই সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে উচ্চমাত্রার কার্যসন্তুষ্টি বিরাজ করছে।
    অন্যদিকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বদলির সুযোগ না থাকাসহ প্রণোদনামূলক ব্যবস্থার অভাবে (অভিশপ্ত অনুপাত প্রথার ভিত্তিতে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হতে পারলেও সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই, বাকিরা প্রভাষক হিসেবেই চাকরি জীবন সমাপ্ত করেন।

    একইভাবে যারা সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন, তাদের মধ্যেও অনেকেই অনুপাত প্রথার বলি হয়ে সহকারী অধ্যাপক পদেই চাকরি জীবন শেষ করবেন- একবিংশ শতাব্দীতে এসে এ ধরনের অমানবিক নীতিমালা কল্পনাও করা যায় না) তাদের মধ্যে হতাশা ও উচ্চমাত্রার কার্য অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে। তাছাড়া একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন অবস্থান করায় তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যেমন-

    ১. প্রশাসন-শিক্ষক-কর্মচারী ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব।

    ২. শিক্ষকদের মধ্যে বৈচিত্র্যের অভাব।

    ৩. সৃজনশীল শিক্ষকরা বদলির মাধ্যমে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় তাদের মেধার সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। অন্যভাবে বলা যায়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় তাদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তারা তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছেন।

    ৪. অনেক কলেজে উচ্চ ডিগ্রিধারী ও মেধাবী (এমফিল/এমএস/পিএইচডিধারী শিক্ষক) শিক্ষক থাকলেও বদলির মাধ্যমে অনার্স/মাস্টার্স কলেজে যাওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় অন্যতম মানবসম্পদ হিসেবে যথাযথ স্থানে তাদের মেধার সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।

    সরকার সম্প্রতি এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজের নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে বদলির ব্যবস্থা করলেও নিবন্ধনবিহীন ও পূর্বে নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা সম্বলিত কোনো পরিপত্র এখনও জারি করেননি। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যের মতো নতুনভাবে ইনডেক্সধারী-নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে, যা জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

    কেননা জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর ৬৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘সকল পর্যায়ের সকল ধারার সকল স্তরের এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণের চাকরি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় বদলিযোগ্য হবে। সরকারি প্রয়োজনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণকে সমধারার সমস্তরের প্রতিষ্ঠানে সমপর্যায়ের পদে বদলি করা হবে।’উপরের ধারা অনুযায়ী ইনডেক্সধারী ও নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি

    করার কোনো সুযোগ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এমতাবস্থায় নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকের পাশাপাশি ইনডেক্সধারী পুরনো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সব এমপিওভুক্ত শিক্ষককে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর বিধান মোতাবেক সর্বজনীন ও ন্যায়ঙ্গতভাবে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বদলির সুব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

    লেখক
    মোঃ সারোয়ার
    প্রভাষক ইংরেজী

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ