• আইন ও আদালত

    সিনহা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর

      প্রতিনিধি ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৪:৫৪:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেক্সঃ

    অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ড মামলার রায়ের সংবাদটি শোনার পরপরই ‘জাস্টিস হারিড ইজ জাস্টিস বারিড; জাস্টিস ডিলেড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’ এই প্রবাদটির কথা মনে পড়ে গেল। মামলা দায়েরের দেড় বছরের মাথায় রায় হয়ে যাওয়ার পর ভাবছিলাম তাড়াহুড়া হয়ে গেল না তো? বাংলাদেশে অন্যান্য হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া (বিচারিক আদালত পর্যন্ত) শেষ হতে যে সময়ক্ষেপণ হয় সে তুলনায় কিছুটা দ্রুত হয়েছে বলে মনে হয়েছে। আমাদের মতো বাঙালিদের ওই একটিই বদ স্বভাব! সব বিষয় নিয়েই কোনো না কোনো খুঁত ধরা।

    আবার এ মামলার রায় কার্যকর হতে যদি দেরি হয় তাহলেও হয়তো আমরা সমালোচনামুখর হয়ে পড়ব। এর কারণও আছে। আসলে আমাদের দেশে দুর্নীতি, লুটপাট ও মারাত্মক অপরাধ করেও যেভাবে লোকজন পার পেয়ে যায়, তা দেখে মানুষের মনে এক ধরনের আস্থাহীনতার জন্ম নিয়েছে। অতীতে হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি রাজনৈতিক পরিচয় ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যেভাবে রাষ্ট্রপতির বিশেষ মার্জনা পেয়ে দেশ পাড়ি দিয়েছে, তাতে মানুষের সন্দেহ দিন দিন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

    মেজর সিনহাকে হত্যার আগে এত কুকর্ম করেও বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপকে যেভাবে ‘ছাড়’ দেওয়া হয়েছে, তাতেও এই মামলা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছিল। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য ‘চুজ অ্যান্ড পিক’ সিস্টেম বেশ কার্যকর। মেজর সিনহা হত্যা মামলা চুজ অ্যান্ড পিক সিস্টেমের অন্যতম একটি উদাহরণ। এ কারণেই এই মামলার রায় প্রত্যাশিত সময়েই ঘোষিত হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

    মামলার তদন্ত কাজ চলাকালে র‌্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার মূল আসামিদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বলেছিলেন, ‘যাতে করে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি সাজা না পায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যতম মূল আসামি ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মেজর সিনহাকে ফায়ার করতে কারা কারা উৎসাহ দিয়েছিল, কীভাবে দিয়েছিল। সবকিছু অ্যানালাইসিস করে আমরা (র‌্যাব) একটা সন্তোষজনক তদন্ত সম্পন্ন করব, তাড়াহুড়া যেন না হয় এবং দেরিও যেন না হয়। এসব বিবেচনা করে কাজ করছি।’

    কর্নেল তোফায়েল মামলায় উল্লেখিত অভিযুক্তরা ছাড়াও সিনহা হত্যাকাণ্ডে অন্য কেউ জড়িত আছেন কিনা সেদিকেই হয়তো ইঙ্গিত করেছিলেন। তবে তিনি তার বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেননি। মেজর সিনহার হত্যাকাণ্ডকে জাস্টিফাই করার জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন লিয়াকতকে মিথ্যা গল্প শিখিয়ে দিয়ে যে অপরাধ করেছেন, এ জন্য তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে কিনা তার বক্তব্যে তা স্পষ্ট করেননি!

    মেজর সিনহাকে গুলি করার পর লিয়াকত ও এসপি মাসুদের সেলফোনে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড তখন দেশের সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। ওই অডিও রেকর্ডে শোনা গেছে এসপি মাসুদ লিয়াকতকে শিখিয়ে দিচ্ছেন, ‘তোমাকে গুলি করেছে তা তোমার গায়ে লাগেনি। আত্মরক্ষার্থে তুমি যে গুলি করেছ তা তার গায়ে লেগেছে।’ লিয়াকত সিনহাকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার পর রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে এসপি মাসুদকে সেলফোনে কল দিয়েছিলেন। সিনহা তখনও জীবিত ছিলেন এবং মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ থেকে অধীনস্থদের অন্যায়ভাবে বাঁচানোর যে কোনো প্রচেষ্টাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ

    । এ ক্ষেত্রে এসপি মাসুদ গুরুতর অপরাধ করেছেন। তাকে আসামি করার জন্য মেজর সিনহার বোন শারমিন ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়। আদালত অবশ্য এ ব্যাপারে বলেছে, তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে কেউ প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তদন্ত কর্মকর্তার হাতে আছে। তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার এএসপি খাইরুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, মেজর সিনহাকে হত্যার পর এসপি মাসুদ প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় কেবল জড়িত-ই ছিলেন না, তিনি জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসাবে অপেশাদারত্ব ও অবহেলামূলক আচরণও করেছেন।

    তিনি প্রতিবেদন লিখেছেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর পুলিশ সুপারের এহেন আচরণ প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয় এবং জনমনে তার পক্ষপাতিত্বমূলক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করে বলে মনে হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের শনাক্ত করার বিষয়ে এসপি মাসুদের দায়িত্ব পালনে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে তদন্ত কর্মকর্তার মনে হয়েছে। তারপরও তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদকে মামলার আসামি না করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন। পুলিশের বিভাগীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে দেশের মানুষের কী ধারণা তা এখানে উল্লেখ না করাই ভালো। অনেকেই মনে করেন, তদন্ত কর্মকর্তা চাইলেই আসামি হিসাবে মাসুদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারতেন।

    মাসুদকে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড মামলায় আসামি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করায় ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন রয়েই গেছে। মাসুদের অধীনে থেকে টেকনাফে ২২ মাসের চাকরিতে ১৪৪টি বন্দুকযুদ্ধে প্রদীপ যে ২০৪ জনকে হত্যা করেছে, তাদের সবাই অপরাধী ছিলেন না। তা ছাড়া নারী ধর্ষণ, নির্যাতন ও অর্থ লোপাটসহ প্রদীপের নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য মাসুদের বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জনসম্মুখে প্রকাশ না হওয়ায় মানুষের ভেতর বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।

    ২০২০ সালের ৩১ জুলাই মেজর সিনহাকে হত্যার পর আগস্টের ৫ তারিখ সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের দেড় বছরের মধ্যে ৩১ কার্যদিবসে ৬৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে আদালতের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও আসামি প্রদীপের চরম জিঘাংসার বহিঃপ্রকাশ। আদালতের বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ