• চট্টগ্রাম বিভাগ

    হামলার পেছনে পরিচিত মুখ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

      প্রতিনিধি ২৭ অক্টোবর ২০২১ , ৪:২৭:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

    কুমিল্লার ঘটনার জেরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসবের পেছনে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের নাম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানতে পেরেছে বলে জানিয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ খুবই পরিচিত মুখ। শিগগিরই তাঁদের নাম প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।গতকাল সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত সংলাপে অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

    প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে কিছু নাম বলেছেন। আরো নিশ্চিত হয়ে শিগগিরই তা জানানো হবে। নোয়াখালীর ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমন নামও শুনবেন, যাঁরা আপনাদের খুবই পরিচিত ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘অপরাধী অপরাধীই। তাঁদের কোনো ছাড় নেই।’এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে কাকরাইল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনায় নেতৃত্ব দেন জাফরুল্লা খান নামের একজন। তিনি খেলাফত আন্দোলনের একাংশের আমির।

    ওই দিন সকাল ১১টার দিকেই তিনি চলে আসেন বায়তুল মোকাররম মসজিদে। ওই সময় বেশ কিছু যুবকও আসেন মসজিদটিতে। পরে জাফরুল্লা খান তাঁর অনুসারী তরুণ ও যুবকদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ লেখা বড় ফিতা মাথায় পরতে দেন। পরে ফিতা পরা যুবকরা মসজিদের উত্তর গেটে এসে দাঁড়ান এবং জুমার নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই নারায়ে তাকবির বলে আন্দোলনে নেমে যান তাঁরা। পরে কয়েক হাজার মানুষের এই মিছিল থেকে কাকরাইল এলাকায় পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পল্টন ও রমনা থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এ দুটি মামলায় চার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

    পল্টন থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে রয়েছেন। জাফরুল্লা খানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
    আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলি : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, ঘটনার দিন কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা ও দাউদকান্দি থানা এলাকায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়। পুলিশ শটগান থেকে ৮৩৪ রাউন্ড রাবার কার্তুজ এবং ১০ রাউন্ড সিসা কার্তুজ ফায়ার করে। ১১ রাউন্ড টিয়ার শেল ও একটি সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।

    এ ছাড়া আনসার সদস্যরা তিন রাউন্ড রাবার কার্তুজ ও দুই রাউন্ড সিসা কার্তুজ ফায়ার করেন। এ ছাড়া কক্সবাজার পেকুয়া থানা এলাকায় সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ৫০ রাউন্ড শটগানের গুলি করে। এ ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্যসহ চার-পাঁচজন আহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ১০৯ রাউন্ড শটগান এবং ১৫ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি ব্যবহার করে পুলিশ। সেখানে তিনজন নিহত ও চার-পাঁচজন আহত হন। নোয়াখালীতে তিন রাউন্ড গুলি ব্যবহার করে পুলিশ।

    তিন বিএনপি নেতা আলোচনায় : পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় বিএনপির কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। কয়েকজন জামায়াত নেতার নামও আলোচনায় আসছে। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারো নাম না বললেও প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা যেমন বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নাম শুনছেন, আমিও শুনছি। তবে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। আমরা আপনাদের শিগগিরই তা জানাতে পারব।’

    নোয়াখালীর মন্দিরে হামলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফয়সাল ইনাম কমল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুর নাম বলেছেন। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের আরো ১৫ নেতার কথাও ফয়সাল ইনাম বলেছেন বলে নোয়াখালীর এসপি শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার কারণে তিনিও আলোচনায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

    এদিকে কুমিল্লার এসপি ফারুক হোসেন কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে নিয়ে কোনো কোনো মহলে আলোচনা ওঠা সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, মনিরুল হক সাক্কু কোনো মামলায় আসামি নন। আমানউল্লাহ আমানের ভয়েস রেকর্ড ফাঁস হয়েছে, তাঁকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মামলাটি সিআইডিতে চলে গেছে তারাই বলতে পারবে।’

    যেসব ধারায় মামলা হয়েছে : বায়তুল মোকাররম থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন ও রমনা থানায় দুটি মামলা করা হয়। পৃথক এক ঘটনায় চকবাজার থানার পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চকবাজার থানায় আরেকটি মামলা করা হয়। পল্টন থানায় করা মামলায় ধারা উল্লেখ করা হয়েছে ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৩২/৩৫৩। রংপুরের পীরগঞ্জের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত ১৮ অক্টোবর পীরগঞ্জে উপপরিদর্শক ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে এজাহার নামীয় ৪১ জন ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন। এ মামলাটিতে দণ্ডবিধি ১৪৩/১৪৮/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৫৪/৩৭৯/৩৮০/৪৩৫/৪৩৬/৪১৭/২৯৫/৫০৬/১১৮ ও ৩৪ ধারায় মামলা করা হয়।

    ধারাগুলো নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, দাঙ্গার ঘটনায় ১৪১ ও ১৪৭ ধারায় মামলা করা হয়ে থাকে। এতে দুই বছরে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। ১৪৮ ধারায় দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়। এই ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছর জেলের বিধান রয়েছে। অবৈধ সমাবেশের দায়ে ১৪৩ ধারায় মামলা করা হয়। এতে ছয় মাসের জেলের বিধান রয়েছে।

    এ ছাড়া ৪৪৮ ধারায় সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড, ৩২৩ ধারায় এক বছর, ৩০৭ ধারায় যাবজ্জীবন, ৩৫৪ ধারায় দুই বছর কারাদণ্ড, ৩৭৯ ধারায় তিন বছর, ৩৮০ ধারায় সাত বছর, ৪৩৫ ধারায় সাত বছর, ৪৩৬ ধারায় যাবজ্জীবন, ৪১৭ ধারায় এক বছর, ২৯৫ ধারায় দুই বছর, ৫০৬ ধারায় দুই বছর, ১১৮ ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।সূত্রঃকালের কন্ঠ।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ