• রাজশাহী বিভাগ

    সিরাজগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আমির হোসেন ভুলুর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী

      প্রতিনিধি ১৪ অক্টোবর ২০২২ , ৩:০৩:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ লুৎফর রহমান লিট-সিরাজগঞ্জ:

    ১৩ অক্টোবর, স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সিরাজগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের সর্বা‌ধিনায়ক (চীফ অব কমান্ড), সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক বর্ষীয়ান রাজনী‌তি‌বিদ আমির হোসেন ভুলুর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৭ সালের এইদিনে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মরহুম আমির হোসেন ভুলু সিরাজগঞ্জ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ-জাপান মৈত্রী সমিতি, সিরাজগঞ্জ শাখা এর সাধারন সম্পাদক (১৯৭২), বাংলাবাজার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, বাইতুল মুমিন জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

    সিরাজগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবীদ আমির হোসেন ভুলু ১৯৪০ সালে কাজিপুর উপজেলার তেকানী ইউনিয়নের দোরতার চরে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা বন্দে আলী সরকার সরিষাবাড়ীতে রেলী ব্রাদার্স পাটকুঠি কমিশনে পাটের ব্যবসা করতেন। মা আজিজুন নেছা গৃহিনী। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন দোয়েল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করার পর তারাকান্দি জুনিয়র হাইস্কুল থেকে ৭ম শ্রেণী পাশ করেন। পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ ভিক্টোরিয়া স্কুলে ভর্তি হয়ে ক্লাস ক্যাপ্টেন ও পরবর্তীতে জেনারেল ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হন। স্কুলজীবন থেকে তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেন।

    কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত হন। তিনি সিরাজগঞ্জ কলেজ সংসদে ছাত্রলীগের পক্ষে নির্বাচন করে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি সিরাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে আই.এ এবং বি.এ পাশ করেন। ষাটের দশকের সেই উত্তাল দিনগুলিতে তিনি বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে আসেন ও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি করাচী ইউনিভার্সিটেতে এম.এ ভর্ত্তি হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সেই সময় ৬ দফা আন্দোলনের উপর বক্তৃতা করার সময় পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বলায় তিনি পশ্চিম পাকিস্থানীদের হামলার শিকার হন এবং করাচী ইউনিভার্সিটি হইতে বহিস্কার হন।

    পরবর্তীতে তিনি অন্যের নামে কাটা বিমানের টিকিটে পূর্ব পাকিস্তান-এ ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ৭১’র জানুয়ারী মাসে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। একদিকে নবপরিনীতা বধু অন্যদিকে স্বাধীনতার ডাক। তিনি যৌবনের দূর্নিবার আকর্ষণকে ত্যাগ করে ও মৃত্যুভয়কে পায়ে দলে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার আন্দোলন তথা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর সারাদেশের মত সিরাজগঞ্জেও আওয়ামী সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। প্রয়াত মোতাহার হোসেন তালুকদারকে আহবায়ক ও আনোয়ার হোসেন রতুকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের আওয়ামী সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

    সেই সংগ্রাম পরিষদে ছাত্র নেতাদের মধ্যে আমির হোসেন ভুলু ও আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন। সংগ্রাম পরিষদ এর পক্ষ হতে আমির হোসেন ভুলুকে সিরাজগঞ্জ মহুকুমা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে সমন্বয় করে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। কারণ তিনি তৎকালীন ছাত্রনেতা মরহুম সিরাজুল ইসলাম খান, মরহুম আব্দুল লতিফ মির্জা, মরহুম আব্দুর রউফ পাতা, মরহুম গোলাম কিবরিয়া, ইসহাক আলী, আব্দুল হামিদ তালুকদার, আজিজুল হক বকুলসহ অনেকের রাজনৈতিক গুরু ও সকলের শ্রদ্ধেয় ভুলু ভাই। যুদ্ধ শুরুর প্রথম পর্যায়ে তিনি ভারতে যান এবং সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে দিক নির্দশনা নিয়ে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

    উল্লেখ্য, আমির হোসেন ভুলু’র নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের চুড়ান্ত মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়াই সিরাজগঞ্জ শহর হানাদার মুক্ত হয়েছিল।
    এদিন সকালে প্রিয় শহর দখলে নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। হাজারও কৃষক-শ্রমিক-জনতা জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে সিরাজগঞ্জের বাতাস। সিরাজগঞ্জ কলেজ মাঠে সেই দিন সকল মুক্তিযোদ্ধরা মরহুম আমির হোসেন ভুলুকে সিরাজগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং মরহুম আব্দুল লতিফ মির্জাকে সহ-অধিনায়ক ঘোষনা দেন।

    স্বাধীনতা পরবরর্তী সময়ে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। কাজিপুরে বাংলাবাজার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ৭৫’ এর পট পরিবর্তনের সময় সিরাজগঞ্জে তিনি বাঙ্গালীর অবিসাংবাদিত নেত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদের জন্য থানায় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য যান। যার প্রেক্ষিতে তিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল আমির হোসেন ভুলুকে। সেই নির্যাত‌নের স্মৃতিচিহ্ন তাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তিনি ১৯৭৯ সাল হইতে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারন সম্পাদক ছিলেন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ