• Uncategorized

    সাহেদ গংরা আওয়ামিলীগে সক্রিয় হলেন যেভাবে

      প্রতিনিধি ১৮ জুলাই ২০২০ , ৮:৪২:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    স্টাফ রিপোর্টারঃ

    আওয়ামী লীগ-এর নৌকা এখন যেন নুহ নবীর (আ.) কিস্তিতে পরিণত হয়েছে। সব জাতের এবং সব মতের লোকজন এখন এখানে আশ্রয় নিচ্ছেন। বিএনপি তো আছেই। আছে জামাতও। এর সঙ্গে আছে তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দল, ছাত্রশিবির সবাই। এখন সবাই আওয়ামী লীগ হতে চায়। যা খবর পাই তাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ‘জনসংখ্যা’ হু হু করে প্রতিদিন বেড়েছে গত ১০ বছরে।

    আওয়ামী লীগের বর্তমান সময়ের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলেও প্রশাসন কিংবা খোদ আওয়ামী লীগে তারা বেশ সক্রিয় আছে। করোনাকালে যত বড় জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রায় সবার মূল উদঘাটন করতে গেলেই মেলে হাওয়া ভবন ও তারেক জিয়ার নাম। গেল কয়েকবছরে এমন অসংখ্যক মুখোশধারী সুযোগসন্ধানীকে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। এমনই কয়েকজনকে নিয়ে আজকের প্রতিবেদন। যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সরকারের ক্ষতি করে আদতে তারেক জিয়ার স্বার্থ হাসিল করেছে। তবে এমন অনেকে আছে বিএনপির নামেই তারা এখনো বেশ প্রভাব ধরে রেখেছেন।

    হাওয়া ভবন থেকে মিন্টো রোড, মহাখালী থেকে সচিবালয়, মন্ত্রীর দপ্তর থেকে বাসা-যুগের কিংবা সরকারের বদল হলেও স্বাস্থ্য খাতে ঠিকাদারি সাম্রাজ্যের গডফাদার হয়েই আছেন মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। বিএনপি আমলে যেমন খোদ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক জিয়াকে ধরেছিলেন, তেমনি আওয়ামী লীগ আমলে একজন মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সখ্য গড়ে স্বাস্থ্য খাতে যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রেখেছেন বছরের পর বছর ধরে।

    গা বাঁচাতে সাত বছর ধরে কিছুটা পর্দার আড়ালে থেকে চালাচ্ছেন নিজের গড়া সিন্ডিকেটের সব কিছু। থাকছেন কখনো দেশে, কখনো বা দেশের বাইরে। কেনাকাটার বাইরে স্বাস্থ্য খাতের সরকারি পর্যায়ে বদলি-নিয়োগেও রয়েছে তাঁর সমান নিয়ন্ত্রণ। নিজের সিন্ডিকেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে বসানো এবং অপছন্দের লোকদের অন্যত্র বদলি করানোর কাজও নিয়মিত করে ফেলছেন নানা প্রভাব খাটিয়ে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অভিযোগে সবশেষ তাকে দুদক ডাকলেও তিনি উপস্থিত হননি।

    করোনাভাইরাস শনাক্ত করার টেস্টের ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগে বন্ধ করা হয়েছে রাজধানীর বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল। তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটির মালিক মো. সাহেদ বিভিন্ন সময়ে নিজেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিলেও তার উঠে আসা মূলত বিএনপির শাসনামলে হাওয়া ভবন থেকে। বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের খুবই আস্থাভাজন ছিলেন প্রতারক সাহেদ।

    বিএনপির শাসনামলে হাওয়া ভবনে যাতায়াত করার কারণে তারেক-মামুনের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। পরে তারেক বিভিন্ন মামলা এড়াতে দেশত্যাগ করলে সাহেদ প্রতি মাসে ‘গুরু দক্ষিণা’ স্বরূপ তাকে কোটি টাকা পাঠিয়ে আসছেন। আর এদিকে বিষয়টিকে ধামা চাপা দিতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে ফটোসেশন করে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি।

    কাসিমপুর কারাগারে কয়েকমাস বন্দী ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে বিতাড়িত হওয়া বিএনপিতে যোগ দেওয়া সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। সেইসময় একই কারাগারে ছিলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুনসহ আরো অনেক পরিচিত বন্দী।

    রনি জানিয়েছেন, জেলখানায় তিনি বেশ প্রভাবশালী। এছাড়া জেল সূত্রও বলছে, মামুন অনেকদিন সেখানে থাকায় একটা গ্রুপ তৈরী ফেলেছেন। জেলখানাতেও যার প্রভাব বেশ। বিএনপি-জামাতপন্থী কেউ জেলখানায় গেলে মামুনের আশ্রয়েই সেখানে থাকেন। মামুন জেলখানায় রাজার হালে জীবন কাটাচ্ছেন। তার অনেক ব্যবসা নাকি আওয়ামী লীগের আমলেও চালু আছে।

    বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাকর্মী থেকে ভোল পালটে টাকার পাহাড় গড়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। একসময় লোকমান বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করা লোকমান আওয়ামী লীগের ১০ বছরে দাপটের সঙ্গে মোহামেডানকে শেষ করে বাণিজ্য করেছেন রমরমা। লোকমানকে প্রশ্রয় দিয়েছেন আওয়ামী লীগেরই অনেক প্রভাবশালীরা।

    তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন সেলিম প্রধান। তার মাধ্যমে তারেক রহমানের কাছে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা পাঠানো হয়। একসময় হাওয়া ভবনে যাতায়াতের মাধ্যমে তারেক রহমানের সঙ্গে সেলিম প্রধানের ঘনিষ্ঠতা হয়। সেলিম প্রধান তারেকের বিভিন্ন নৈশ পার্টির জন্য সুন্দরী তরুণীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেন। এছাড়া স্পা বিউটি পার্লারগুলোতে যেসব ভিআইপিরা আসা-যাওয়া করতেন তাদের মনোরঞ্জনের জন্য সেলিম প্রধান পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশগুলো থেকে তরুণীদের নিয়ে আসতেন।

    এছাড়া সিলেটের অবৈধ পাথর উত্তোলন এবং ভারত থেকে গরু চোরাচালানের কাজে তিনি জড়িত রয়েছেন। আওয়ামী লীগের আমলে এতদিন তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে সবশেষ ক্যাসিনো কাণ্ডে ধরা খেলো এই জালিয়াত। জানা যায়, সেলিম প্রধান কারাবন্দি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিজনেস পার্টনার ছিলেন। বিএনপি শাসনামলের আলোচিত ব্যক্তির নাম গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। বিএনপি সরকারের পতন হলেও সেলিম প্রধান থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

    ১/১১ সরকারের সময়ে জাহিদ নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সেলিম প্রধান বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সূত্র বলছে, সেলিম প্রধানের চলাফেরা দেখেই অনেকে হতভম্ব হয়ে যান। কারণ তার আশপাশে সবসময় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ১০ জন দেহরক্ষী থাকেন।

    তাবিথ আউয়াল বিএনপির রাজনীতিতে ‘নো বডি’। তিনি রাজনীতির সঙ্গে কখনও নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। ছাত্র রাজনীতিও করতেন না তিনি। তাবিথের একমাত্র পরিচয় তার পিতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, যিনি কিনা একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিক। তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ করেছেন। আর ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।

    আবদুল আউয়াল মিন্টুও তৃনমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ নন। বরং দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল বিত্তকে সংহত করার জন্যই তিনি রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সেই আবদুল আউয়াল মিন্টুর সন্তান তাবিথ আউয়াল দুইবার বিএনপির টিকেটে মেয়র নির্বাচন করেছেন। তবে তাবিথ আউয়াল মিন্টুর বড় পরিচয় হলো, তিনি তারেক জিয়ার এজেন্ট।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ