• আমার দেশ

    শিশু সুমাইয়ার ভীক্ষায় চলে সংসার করে

      প্রতিনিধি ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৫:৪৯:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    বাবা মানে হাজার বিকেল আমার ছেলে বেলা। বাবা মানে রোজ সকালে পুতুল পুতুল খেলা। বাবা মানে কাটছে ভালো যাচ্ছে ভালো দিন। শত কষ্ট সহ্য করে সন্তানের মুখে হাসি ফোটান বাবা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ৫ বছর বয়সে বাবাকে চিরতরে হারিয়ে সেই মুখে আজ হাসি নেই। চোখের জলে দিন কাটছে ৭ বছরের শিশু সুমাইয়ার। পাঁচ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে গ্রামীণ জনপদে ভিক্ষা করে ৭ বছরের সুমাইয়া। ভিক্ষা করেই এই শিশুটিকে নিজের ও পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে হয়। এভাবেই সে তার পরিবারের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়। যে শিশুটির এই বয়সে পুতুল খেলায় মগ্ন থাকার কথা তাকেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। যে বয়সে হাতে খাতা-কলম থাকার কথা সে বয়সে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে ঘুরছেন দুয়ারে দুয়ারে। ২ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টায় বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখাযায় সুমাইয়াকে। দুয়ারে দুয়ারে সুমাইয়া করুণ সুরে ভিক্ষা চায় আমাকে দু’মুঠো ভাত দেয়া যায় আমি কিছু খাইনি। সুমাইয়া ভিক্ষা করে দুমুঠো ভাত নিজে খায় ও পরিবারের অন্যদের জন্য প্লাস্টিকের বাটি ভরে নিয়ে যায়। সুমাইয়ার পরিবারের খোঁজখবর নিতে সুমাইয়া কে সাথে নিয়ে ছুটে যায় সংবাদমাধ্যম
    তার বাড়িতে।

    বাড়িতে গেলে দেখা যায় সুমাইয়ার মা মুকুল বেগম ঝুপড়ি ঘরটির সামনে অসুস্থ স্বামী শিশু সন্তানদের নিয়ে বস্তার চটের উপর শুয়ে আছেন। ঝুপড়ির একদিকে রান্নার জন্য কিছু লাকড়ি আর অন্যদিকে থাকার বিছানা। বৃষ্টি আসা মাত্রই সবকিছু ভিজে যায়। জীবন কতটা অসাহায় সেই ঘটনা তুলে ধরে তিনি জানান, এর আগে আমার বিবাহ হয়েছিল ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার খোকন নামের এক হকার ব্যাবসায়ির সাথে। সেখানে তার দুই সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম সন্তান সুমাইয়া, দ্বিতীয় সন্তান হালিমা। আড়াই বছর শেষ হলো আমার স্বামী স্টক করে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার দুই কন্যা সন্তান সুমাইয়া ও হালিমাকে নিয়ে তখন অসহায় হয়ে পরি আমি। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের ভ্যানগাড়ি চালক আলমগীর হোসেন এর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে আবদ্ধ হই। সুখের ঘরে দুখের আগুন ভুলে নতুন করে বাঁচতে সংশার শুরু করলেও সুখ জোটেনি কপালে। এই ঘরেও আমার দুই কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করেছে। আমার স্বামী আলমগীর হোসেন ভ্যানগাড়ি চালাতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতেছে। কর্মহীন হয়ে পরেছেন তিনি ছয়জনের এই সংশারের হাল ধরেছেন শিশুকন্যা সুমাইয়া। আমিও মাঝে মধ্যে ভিক্ষা করি।

    সরেজমিনে দেখা যায়, ভ্যানগাড়ি চালক আলমগীর হোসেনের ছয় সদস্যের পরিবারটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। ঘরের উপরে নেই টিনের চালা। ঝড়-বৃষ্টিতে ছিড়ে গিয়ে পলিথিনের চালার ফাক দিয়ে আকাশ দেখা যায়। খরকুটার তৈরি ঘরে বৃষ্টিতে পানি ঢুকে পরে ঘরের ভিতরে। অসহায় পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কোন বৃত্ত শালী মানুষ। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য হলেও পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের অসাহায় পরিবারটির বেলায় কথাটি সম্পূর্ণ বিপরীত। পরিবারটির কাছে এসে দেখা যায় জীবন দুর্দশার চিত্র। এর আগেও সুমাইয়ার পরিবারের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। আশ্বাস দিয়েছিলেন বিত্তবান’রা ও রাষ্ট্রীয় কর্তারা কিন্তু সহায়তার হাত বাড়ায়নি কেউ। একটি শিশু সমাজের বোঝা নয় কথায় থাকলেও বাস্তবে তা বহুদুর। দায়িত্ববান মানুষ গুলো দায়িত্ব থেকে দূরে সরে গিয়েছে। সমাজ ব্যবস্থা আজ চরম অবক্ষয়। এর বাস্তব উদাহরণ অসহায় সুমাইয়ার পরিবার।

    কথা হয় মুকুল বেগমের দ্বিতীয় স্বামী আলমগীর হোসেনের সাথে তিনি জানান, দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারনে কাজে যেতে পারছি না। সড়ক দুর্ঘটনায় আমার মেরুদণ্ডে সমস্যা হয়। গ্রাম থেকে মাঝে মধ্যে শাকসবজি নিয়ে বাজারে বিক্রি করতাম। শারীরিক অসুস্থতা ও অর্থের অভাবে তাও এখন করতে পারতেছি না। সুমাইয়ার ভিক্ষায় আমাদের সংশার চলে। খেয়ে না খেয়ে অসুখে – বিসুখে মানবেতর দিন কাটছে আমাদের পরিবারের। অর্থের অভাবে পারিনি মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে। গোয়ার ঘরের মত একটি ঝুপড়ি ঘরে ঝর বৃষ্টিতে ভিজে শেষ বয়সে মানবেতর জীবন যাপন করতেছি পরিবার নিয়ে। সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত আমরা। স্থানিয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে গিয়েও পায়নি কোনো সাহায্য। আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউ।
    চোখেরজলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাহায্য চান তিনি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ