• Uncategorized

    রোগীর প্রতি টিকিটে পাঁচ টাকা কর্মচারীর পকেটে

      প্রতিনিধি ৯ জানুয়ারি ২০২১ , ৪:০৬:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    রোগীর প্রতি টিকিটে পাঁচ টাকা কর্মচারীর পকেটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে দুটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা- ‘রোগীর টিকিট মূল্য ১০ টাকা। রোগীর ভর্তি ফি ১৫ টাকা। উপরোক্ত টাকার বেশি দিবেন না। দাবী করলে কর্তৃপক্ষকে জানান।’ কিন্তু এখানে অহরহই নেয়া হয় বাড়তি টাকা। হাসপাতালে জরুরি সেবা নিতে গিয়ে এই বাড়তি টাকা নেয়ার ব্যাপারে কেউ কর্তৃপক্ষকেও জানান না।

    কাউন্টারে টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার অপরাধে সম্প্রতি এক কর্মচারীকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। তারপরও অন্যদের অতিরিক্ত টাকা আদায় থামেনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোগীর ভর্তি ফি’র ১৫ টাকার বদলে নেয়া হয় ২০ টাকা। তবে টিকিটের মূল্য নির্ধারিত ১০ টাকার বেশি নেয়া হয় না। রোগীর ভর্তি ফি’র ১৫ টাকার ক্ষেত্রে খুচরা নেই জানিয়ে টিকিটপ্রতি পাঁচ টাকা বেশি নেয়া হয়। এ টাকা দায়িত্বরত দুই কর্মচারীই সমান হিসেবে ভাগ করে নেন। তারা কখনও কখনও ভর্তি ফি ২০ টাকারও বেশি নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

    গত ২ জানুয়ারি ‘আমাদের রাজশাহী সিটি’ নামের একটি ফেসবুক আইডিতে এ ব্যাপারে একটি পোস্ট দেয়া হয়। ‘ন্যায়বান বিজয়ী’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া পোস্টে বলা হয়, ‘রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে দুর্নীতিতে সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ। রোগী ভর্তির টিকিট ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা নিয়ে থাকে এবং ভর্তি ফরম ১৫ টাকার জায়গায় ৩০ টাকা জোরপূর্বক নিয়ে থাকে। এ থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

    এমন পোস্ট নজরে আসার পর ২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে জরুরি বিভাগে গিয়ে বেশি টাকা নেয়ার চিত্র দেখা যায়। সে রাতে কাউন্টারে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন জহিরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। জরুরি বিভাগের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েই অন্তত ১৫ জন রোগীকে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি টাকা আদায়ের চিত্র দেখা যায়।

    এর মধ্যে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী সালমা (১৩), একই সময় একই ওয়ার্ডের আরেক রোগী শিমু (২০), ৮টা ৪৫ মিনিটে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী ঈশিতা (২০), একই সময় একই ওয়ার্ডের আরেক রোগী জান্নাতুন্নেসা (২৪), ৮টা ৫০ মিনিটে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া তিন দিন বয়সী শিশু বাবু, একই সময় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের রোগী সাদেক আলী (৬০) এবং একই সময় একই ওয়ার্ডের রোগী আজিমুদ্দিনের (৪৫) স্বজনদের কাছ থেকে ১৫ টাকার ভর্তি ফরমের জন্য ২০ টাকা নিতে দেখা গেছে। রোগীর যেসব স্বজন ভর্তি ফরম সংগ্রহ করছিলেন তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অথচ ভর্র্তি ফরমের ওপরেও লেখা আছে এর মূল্য ১৫ টাকা।

    রামেক হাসপাতালে কোন রোগীকে ভর্তি করতে হলে তার জন্য দুইবার টিকিট কাউন্টারে যেতে হয়। রোগীকে আনার পর প্রথমে ১০ টাকার একটি টিকিট নিয়ে রোগীকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে দেখাতে হয়। এরপর তিনি যদি রোগীকে ভর্তি করানোর প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে তার জন্য এবার ভর্তি ফরম কেনার প্রয়োজন পড়ে। প্রথমবার টিকিটের দাম ১০ টাকা রাখা হলেও পরেরবার নেয়া হয় পাঁচ টাকা বেশি। তবে কেউ ১৫ টাকা দিলে বাড়তি টাকা চেয়ে নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু কেউ ফরমের দাম জানতে চাইলে ২০ টাকা বলতে দেখা গেছে। মূল্য ১৫ টাকা লেখা থাকার বিষয়ে রোগীর স্বজন জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে তখন বলা হয়, তাহলে খুচরা ১৫ টাকা দিন।

    তবে জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা পাঁচ টাকার জন্য বাগবিতণ্ডায় জড়ান না। ২০ টাকা দিয়ে তারা ফরম নিয়ে ছোটেন। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ জন রোগী ভর্তি হন। প্রতিটি ভর্তি ফরমের জন্য পাঁচ টাকা বেশি নেয়া হলেও তা সাড়ে তিন হাজারে দাঁড়ায়। বাড়তি নেয়া এই টাকা কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। সময় ভাগ করে নিয়ে টিকিট কাউন্টারে এখন মোট ১৪ জন কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১২ জনই দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী। আর দুইজন নিয়মিত কর্মচারী। দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীরাই অতিরিক্ত টাকা নেয়ার দিকে বেশি মনোযোগী।

    ২ জানুয়ারি ফরমের মূল্য বেশি নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান তা অকপটে স্বীকার করেন। তবে তারা দাবি করেন, অনেক সময় অজ্ঞাত রোগী নিয়ে আসা হয় জরুরি বিভাগে। হাসপাতালে তার কোন স্বজন থাকে না। কিন্তু তার ক্ষেত্রেও ২৫ টাকার দুটি টিকিটের প্রয়োজন হয়। তখন অন্যদের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত পাঁচ টাকা এই রোগীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।

    বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, কাউন্টারে টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার কারণে সম্প্রতি এক কর্মচারীকে পাবনায় বদলি করা হয়েছে। আরও কারও নামে যদি এ অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগ নেই।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ