• আন্তর্জাতিক

    রবার্ট ক্লাইভের শেষ পরিণতি-আলোকিত ৭১ সংবাদ

      প্রতিনিধি ২০ জুলাই ২০২২ , ৬:৩৭:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

    ১৭৫৭ সালের মার্চ মাসে চন্দননগরের ফরাসি উপনিবেশ অধিকার করেন তিনি। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে উৎখাত করার জন্য ক্লাইভ জগৎ শেঠ ও উর্মিচাঁদের সঙ্গে ১৯ মে ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তি করেন।
    .
    সেই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী পলাশীতে প্রহসনমূলক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে নবাবের পরাজয় হয়। নবাব বন্দী হন এবং তাঁকে হত্যা করা হয়। আর চুক্তি অনুযায়ী মসনদে বসেন প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খান।
    .
    রবার্ট ক্লাইভের ষড়যন্ত্রে বাংলা তার স্বাধীনতা হারাল। ক্লাইভ ইংরেজ জাতির কাছে সম্মানিত ও খ্যাতিমান হলেন। তবে ভারতীয়দের কাছে ঘৃণিত ও খল হিসেবেই চিহ্নিত হলেন। বাঙালির ইতিহাসে ক্লাইভ মন্দ ইয়াগোই হয়ে থাকলেন। রবার্ট ক্লাইভ দক্ষিণ ভারতে ধারাবাহিকভাবে বিজয়ী হলেও সম্পদশালী হতে পারেননি।
    .
    কিন্তু বাংলা বিজয়ের পর লুন্ঠিত ও প্রাপ্ত অংশের অর্থে তিনি বাংলার সব নবাব অপেক্ষা ধনী হয়ে যান। অবশেষে ১৭৬০ সালে অবসর গ্রহণের পর বিপুল অর্থবিত্তসহ ক্লাইভ লন্ডন চলে যান।
    .
    ব্রিটিশ বীর রবার্ট ক্লাইভ ‘ব্যরন ক্লাইভ অব পলাশী’, ‘নাইট অব দ্য বাথ’, ‘দিলার জং’, ‘সাইফ জং’, ‘মামিরুল মামালিক’, ‘সাবদাতুল মুলক’ ইত্যাদি উপাধি ও খেতাবে ভুষিত হন।
    .
    এর বেশ কয়েক বছর পর বাংলায় কোম্পানি শাসন পরিচালনার অপরিহার্য প্রয়োজনে আবার ক্লাইভকে ডেকে আনা হয়। তিনি ১৭৬৫ সালে কলকাতায় আসেন। এবার তিনি ষড়যন্ত্র করে হুমকি দিয়ে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দিওয়ানি লাভ করেন। তিনি রাজনৈতিক দুরদর্শিতার পরিচয় দেন।
    .
    তিনি দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগ ছাড়া মুনাফা এবং দায়িত্ব ছাড়া রাজস্ব আদায় করে ব্রিটিশদের অর্থনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করেন।
    .
    এই কৃতিত্বের কারণে ইংরেজদের জাতীয় বীরে পরিণত হন তিনি। তাঁর পূর্ণাবয়ব ও আবক্ষমূর্তি ইন্ডিয়া অফিস ও পার্লামেন্ট ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়। তিনি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
    .
    কিন্তু রবার্ট ক্লাইভের কর্মক্ষেত্র বাংলায় তিনি বরাবরই ঘৃণিত থেকেছেন। জনগণ-মনে খল হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। একজন নিচ ও ষড়যন্ত্রকারী, শঠ ও প্রতারক হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।
    .
    লর্ড ক্লাইভ ভারতবর্ষের দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে যান লন্ডনে। সেখানে তিনি নিঃসঙ্গ অবস্থায় অবসর জীবনযাপন করেন। ওই নিঃসঙ্গ সময়ে বিগত জীবনের সমুদয় নিচুতা, অতীতের গ্লানি ও পাপ চিন্তায় তার মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।
    .
    অবশ্য ক্লাইভের জীবনীকার ম্যালকম বলেন−ক্লাইভ শৈশব থেকেই বিষণ্নতাজাত মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তবে ভারতবাসী বিশ্বাস করত, ক্লাইভের পাপই তাঁকে অসুস্থ করে দেয়।
    .
    এবং পাপ চিন্তায় জর্জরিত ও অভিশপ্ত লর্ড রবার্ট ক্লাইভ ১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর স্বীয় গৃহে নিজ পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। ক্লাইভের মৃত্যুতে অনেক ইংরেজই বেদনার্ত হয়ে কেঁদেছে। তবে একজন ভারতবাসীও কাঁদেনি বরং গোপনে আনন্দ উল্লাস করেছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ