• আমার দেশ

    যৌনতা যখন পুঁজিবাদী হাতিয়ার – ইফতেখার সিফাত

      প্রতিনিধি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৩:০২:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

    প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইন দিবসকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন কোম্পানি আর রেস্টুরেন্টগুলো এই ধরণের অফার ঘোষণা করে। হোটেলগুলোতে কাপলদের জন্য বিশেষ রুমের ব্যবস্থা, বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা সহ নানা ধরণের ক্যাম্পেইন চলে হারাম রিলেশনকে ঘিরে। অন্য দিকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হয় কাছে আসার গল্প নিয়ে অসংখ্য এড ও সিনেমা।

    মূলত আধুনিক সময়ে যৌনতা পুঁজিবাদীদের প্রধান একটি হাতিয়ার। এর মাধ্যমে তারা যেমন কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়। এজন্য দেখা যাবে, আধুনিক যুগের পুঁজিবাদি ও বিজনেস প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা যৌনতা কেন্দ্রিক। যৌনতার সহজলভ্যতা বা পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে তারা এই উন্মাদনাটাকে ব্যবহার করে। আর উন্মাদনায় মত্ত কাস্টমারগুলোর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের অর্থ, খুব সহজেই।তেমনিভাবে একটি জাতির মূল স্প্রিডকে যৌনতার জালে আটকে ফেলে। তখন সেই জাতি মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে। তারা তখন পুঁজিবাদীদের অন্যায় ও জুলুমগুলোকে অনুধাবন করতে পারে না। হারিয়ে ফেলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার চিন্তাশক্তি।

    এই যে হারাম একটি উপলক্ষ্যকে ঘিরে যিনা-ব্যাভিচার, অশ্লিলতা- বেহায়াপনার এতো এতো ক্যাম্পেইন, আয়োজন এবং প্রচারণা, এর পিছনে আইডিয়া ও ডিসিশন মেকার হিসেবে তারাই কাজ করছে যারা দিহান-আনুশকাদের নিয়ে মেকি অস্থিরতা প্রকাশ করে এবং মিডিয়া গরম করে তোলে। যারা যৌন সংযমতার পরিবর্তে উত্তেজনাকর যৌন শিক্ষার দাবি তুলে। যারা ফ্রি মিক্সিংকে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নারী সমাজের উন্নতি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে।

    যারা কাছে আসার গল্প তৈরির জন্য তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে, এর আড়ালে তারা কিন্তু আরো কিছু চিত্রের আবিষ্কার করছে। ডাস্টবিনে, নালা-নর্দমায় পরে থাকা, কুকুরের মুখে নবজাতক শিশুর লাশের চিত্র, গর্ভপাতের মাধ্যমে বছরে হাজার হাজার নিষ্পাপ বাচ্চার হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান, দিহান-আনুশকাদের নির্মম গল্পের মেকারও কিন্তু তারাই।

    অশ্লিলতার এমন অবাধ প্রচারণায় আপনি কিভাবে সমাজকে নিরাপদ রাখবেন? যারা এমন প্রচারণায় লিপ্ত তাদেরকেই আপনি সমাজ ও সংস্কৃতির রক্ষক ভেবে বসে আছেন। তাদেরকেই আপনি কালচারাল মডেল হিসেবে বিশ্বাস করছেন। অথচ আপনার রব তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
    إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

    যারা চায় যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লিলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা নুর, আয়াত-১৯)

    প্রিয় তানভির আহমাদ ভাই চরম এক বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।”সত্য হলো, ফেব্রিয়ারি মাস অনেকটাই যিনার মাস হয়ে গিয়েছে। এই মাস এলেই কোম্পানিগুলো যিনা ব্যভিচারের কারবার শুরু করে দেয়। ওদের দরকার কোনো একটা উপলক্ষ্য। সেটা হারাম হচ্ছে কিনা সেদিকে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই। আর প্রতি বছর মুসলিম ভাইবোনদের এত এত সতর্কতা, এত প্রচেষ্টার পরও এইসব কোম্পানিগুলো দম্ভভরে পরের বছর একই কাজে লিপ্ত হয়। কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ভ্রূক্ষেপের চিন্তাও নেই।

    কোম্পানিগুলোর এই যে যিনা ব্যভিচার প্রমোট করা সব ক্যাম্পেইন – এই ক্যাম্পেইনগুলোর আইডিয়া জেনারেশন, ডিসিশন মেকিং থেকে শুরু করে এক্সিকিউশন পর্যন্ত যারাই কাজ করে, এরা কিন্তু নিজেদেরকে মুসলিমই দাবিই করে। এইসব কর্মীদেরকে টার্গেট করে আলিমদের সম্মিলিত ফাতওয়া এলে উত্তম হতো। তাছাড়া আজকালের যুবক যুবতীদের বেশিরভাগই এখনও বিয়ের আগের প্রেম ভালবাসার মতো স্পষ্ট হারামকে শুধু হালালই না, অনেকক্ষেত্রে পবিত্রও মনে করে। অথচ স্পষ্ট হারামকে যারা হালাল মনে করে, তাদের ঈমানের দাবি তো ধোপে টেকে না।

    দাওয়াহর ক্ষেত্রে ঈমানের এমন পয়েন্টকে গুরুত্ব দিয়েই দাওয়াহ হওয়া উচিত। এমনকি ফাতওয়া আসা উচিত। আপনি সালাফি, হানাফি যে মাজহাব মাসলাকেরই হোন না কেন, এমন সুস্পষ্ট যিনা ব্যভিচারের বিরুদ্ধে তো অন্তত সবাই একমত। অতএব অন্তত এসব ব্যাপার তো সম্মিলিত প্রচেষ্টা আনা যেতো।”

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ