আলোকিত ইসলাম ডেস্কঃ
মুমিন বান্দা মুখে-হাতে, কথা ও কাজে আল্লাহর জিকির করে। মসজিদে বসে তাসবিহ হাতে শুধু ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করার নামই জিকির নয়। তবে দুনিয়ার প্রতিটি কাজ শুরুর আগে সুন্নাহ পদ্ধতিতে আল্লাহর স্মরণই জিকির।
Advertisement
এ জিকিরে যেমন নেয়ামত লাভ হয় তেমনি দুনিয়ার সব অর্নিষ্টতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। মহান আল্লাহর জিকির বা স্মরণ- তারই নির্দেশ। তিনি কুরআনে এভাবে ঘোষণা দেন-- ‘অতঃপর তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করবো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)- ‘এবং তোমাদের প্রভু বলেন, আমাকে ডাক, আমার কাছে চাও; আমিও তোমাদের ডাকে সাড়া দেব, তোমাদের চাওয়া-পাওয়া গ্রহণ করবো।’ (সুরা গাফের : আয়াত ৬০)
মানুষ সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে পারবে। জিকিরের প্রতি মনোযোগী করতে আল্লাহ তাআলা জিকিরের পদ্ধতি উল্লেখ করে ঘোষণা দেন-- ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব (মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টি) নিরর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯১)
হাদিসে পাকেও জিকিরের পর যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভে এবং কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণের কথা উল্লেখ করেছেন বিশ্বনবি। সুনানে বায়হাকিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই জিকির ও জিকিরের প্রাপ্তি সম্পর্কিত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। আর তাহলো-একদিন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক আরব বেদুইন এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে কোনো একটি ভালো কাজ শিক্ষা দিন-প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তার হাত ধরলেন। তাকে এ শব্দগুলো শেখালেন- سُبْحَانَ الله : সুবহানাল্লাহ- اَلْحَمْدُ للهِ : আলহামদুলিল্লাহ- لَا اِلَهَ اِلَّا الله : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- اَللهُ اَكْبَر : আল্লাহু আকবার। লোকটির হাত ধরে প্রিয় নবি বললেন, এ শব্দগুলো বেশি বেশি পড়বে।
লোকটি এ কথা শুনে চলে গেলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর লোকটি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে ফিরে আসে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, লোকটি কি যেন চিন্তা করছে।লোকটি ফিরে এসে প্রিয়নবির সামনে বসে বললেন-‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ আপনি যে বাক্যগুলো আমাকে শেখালেন, এ বাক্যগুলোতে আল্লাহর জন্য আর আমার জন্য কী রয়েছে? এগুলো পড়লে আমি কী পাবো?এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন-তুমি যখন বলবে, ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ তখন প্রতিটি শব্দের উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি সত্য বলেছ।
তখন জিকিরকারী আল্লাহর কাছে নিজের (কাঙিক্ষত) চাহিদাগুলো (ধারাবাহিকভাবে) তুলে ধরবে->> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ) আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِىْ) ‘আল্লাহুম্মার জুক্বনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিজিক দান করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমাকে ইতিমধ্যে রিজিক দান করেছি।’>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْحَمْنِىْ) আল্লাহুম্মার হামনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অনুগ্রহ করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, ইতিমধ্যে তোমার প্রতি রহম করেছি।
জিকিরের পরে বান্দা এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অচিরেই তা দান করবেন বলেই আরব বেদুইনকে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।উল্লেখ্য, এই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতার সময় আল্লাহর কাছে জিকির-আজকারের পর রোনাজারি সঙ্গে সঙ্গে তার থেকে মুক্তি লাভে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার সে আবেদনেও সাড়া দেবেন, যা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত।
লেখক- মুফতী আরিফুল ইসলাম কারীমী
ইসলামী কলামিস্ট, শিক্ষক, খতীব ও সাংবাদিক।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.