আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যারা ভাবছেন যুদ্ধে নেমে রাশিয়া বেকায়দায় পরে গেছে তারা এখনো পুতিন বা রাশিয়াকে চিনতে পারেন নি। বর্তমানে ইউক্রেনের সমর্থনে আমেরিকা বা ন্যাটো যা করছে তা নিতান্তই সামান্য। আমরা ভেবেছিলাম আমেরিকা বা ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে এগিয়ে আসবে, আর রাশিয়াও তা জেনেই যুদ্ধে নেমেছে। কিন্তু তারা যুদ্ধে আসেনি। দুর থেকে সহায়তা আর নিষেধাজ্ঞা দিয়েই বসে আছে। তাহলে যেখানে রাশিয়া সরাসরি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছে।
সেখানে এই সহায়তা আর নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার কতটুকু ক্ষতি করবে? তারা তো এর চেয়ে বড় সমস্যা মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিয়েই নেমেছে। মুদ্রার মান কমা, বানিজ্য নিষেধাজ্ঞা এগুলো যে ঘটবে তা নতুন কিছু নয়৷ রাশিয়া এসব জেনেই যুদ্ধ শুরু করেছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এসব নিষেধাজ্ঞা আর অর্থনৈতিক প্রতিবদ্ধকতা সাময়িক ভাবে চলবে। রাশিয়ার উপর দির্ঘ্যমেয়দি নিষেধাজ্ঞা দিলে আমেরিকার তেমন ক্ষতি না হলেও ইউরোপীয় দেশগুলো বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পুরো ইউরোপ চলছে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর।
গ্যাস সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হবে। কিন্তু রাশিয়া ইতিমধ্যে তার সেকেন্ড কাস্টমার পেয়ে গেছে। ইতিমধ্যে চীন এবং পাকিস্তান সাথে বড় আকারের গ্যাস চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তাই পশ্চিমারা নিজেদের স্বার্থেই রাশিয়ার উপর বেশিদিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখতে পারবেনা৷ পুতিন অত বোকা নয় যে ভবিষ্যতের পথ খোলা না রেখে যুদ্ধ শুরু করেছে। রুশ ফোর্সের ব্যান্ডেড করা বিভিন্ন অস্ত্রের ফুটেজ আসছে। যুদ্ধে দুপক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি।
কিন্তু যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনে। তাই ইউক্রেনের জনগণ বেছে বেছে রুশদের ক্ষতির ভিডিওই প্রকাশ করবে, নিজেদের মনোবল বাড়ানোর জন্য। একারনে রুশ ক্ষয়ক্ষতির ফুটেজ বেশি আসছে। তার মানে এই নয় যে রুশদেরই ক্ষতি বেশি হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধকে রাশিয়া তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেনা। তারা সব পুরাতন অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করছে। আমেরিকার ইরাক, সিরিয়া, আফগান হামলার মত গনহারে শত শত ক্রুজ মিসাইল মারেনি, ওটা করলে ইউক্রেন মুহুর্তেই ধশে পরতো, সাথে অগনিত নিরীহ মানুষ মরতো।
তার পরিবর্তে রাশিয়া কেবল এন্টি রেডিয়েশন মিসাইল মেরে SAM, রাডার ধ্বংস করেছে, সাথে কিছু কিছু ঘাটিতে MLRS হামলা করেছে।এসব সোভিয়েত ইরা অস্ত্রের মুখেই ইউক্রেন লন্ডভন্ড। তাহলে লেটেস্ট অস্ত্র ইউস করলে কেমন হতো।
ফেসবুকে জ্যালেভিন ATGM দিয়ে রুশ T-72 ট্যাংক ধ্বংসের ফুটেজ নিয়ে অনেকে মজা নিচ্ছেন। ভাই আপনাদের শরম পাওয়া উচিত। পশ্চিমাদের লেটেস্ট ATGM দিয়ে সোভিয়েত আমলের পুরাতন ট্যাংক ধ্বংস করে মজা নেন? পারলে লেটেস্ট ভার্ষনের T-90 বা T-14 ধ্বংস করুন। তখন সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই হবে। বুঝা যাবে কার দৌড় কতটুকু। পুরাতন মাল ধ্বংস করে কিসের বাহাদুরি?
আবার অনেকেই বলছেন, রাশিয়া যত দ্রুত প্রোগ্রেসের কথা ভেবেছিলো ততটা হয়নি। ভাই এই কথা রাশিয়া নয়, আমরা সাধারণ পাবলিক ভেবেছিলাম। আমরা ভেবেছি রাশিয়া দুইদিন যুদ্ধ করেই ইউক্রেন দখল করে নেবে। ইউক্রেন সামরিক ভাবে দুর্বল হতে পারে, কিন্তু দেশটি বিশাল বড়। এত বড় দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়া এত অল্প সময়ের কাজ নয়। রুশরা এসব ভালো করেই জানতো। তাই ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে আরো অনেক সময় লাগবে। তাছাড়া রাশিয়া কোনো ফুলস্কেল যুদ্ধ করছেনা। ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে কিছু সৈন্যকে ইউক্রেনে ঢুকিয়েছে।
নয়তো রাশিয়া যদি তার ১০ হাজার ট্যাংকের বহরকে ইউক্রেনের দিকে মার্চ শুরু করাতো তাহলে ইউক্রেনের মাটিতে গাছপালাও অবশিষ্ট থাকতো না। আরেকটা ব্যাপার হলো রাশিয়া নৃশংসতা, বর্বরতা, গনহত্যা, গনহামলা করছে না। আমরা দেখেছি ইরাক, সিরিয়া আফগানে আমেরিকা কিভাবে একনদিনেই হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে। কিন্তু রাশিয়া সিভিলিয়ানদের মৃত্যু এভয়েড করার চেষ্টা করছে। কেননা এটা কোনো অস্তিত্ব রক্ষার বা শত্রুতার লড়াই নয়, তাই রাশিয়া যথাসম্ভব ইমেজ রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছে।
তবে ইউক্রেনকে দখল করা বা আজীবন দখলে রেখে দেয়া রাশিয়ার লক্ষ্য নয়। তাদের লক্ষ্য ইউক্রেনকে শিক্ষা দেয়া এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাশিয়া যেই লক্ষ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে নেমেছিলো তার অনেকটাই সফল হয়ে গেছে। তারা ইউক্রেন সহ গোটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, নিজেদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাশিয়া সামান্যতম কম্প্রোমাইজও করবেনা, তার জন্য যদি পশ্চিমাদের মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয় তার জন্যও রাশিয়া রাজি আছে।
এখন রাশিয়ার কেবল তিনটি কাজ বাকি...
১. ইউক্রেন কোনোদিন ন্যাটোতে যোগ দেবেনা এই শর্তে চুক্তি সম্পন্ন করা।
২. তা না হলে, ইউক্রেনকে ভেঙে যে নতুন দুটি দেশ তৈরি করা হয়েছে তার ব্যাপারে ইউক্রেনের থেকে স্বীকৃতি আদায় করা। তাহলে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলেও উক্ত দেশ দুটি রাশিয়ার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
৩. তাও না হলে, ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে নামিয়ে রুশপন্থি সরকারকে ক্ষমতায় বসানো।
এই তিনটি কাজের যেকোনো একটি বাস্তবায়ন হলে রাশিয়ার উদ্দেশ্য সফল হবে এবং তারা ইউক্রেন থেকে ফিরে যাবে।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.