• Uncategorized

    মৃগী কি নিরাময় যোগ্য ??? আসুন জানি।

      প্রতিনিধি ৮ জানুয়ারি ২০২১ , ৩:৪৪:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মৃগী কি নিরাময় যোগ্য ??? আসুন জানি।

    মৃগী মস্তিষ্কের একটি রোগ যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Epilepsy। এটি একটি নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুবিক রোগ যার ফলে খিঁচুনি দেখা যায়। আমরা প্রতিনিয়ত যেসব কাজ করি তার জন্য মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল আসে কিন্তু মৃগী রোগীর সেই সিগনাল সঠিকভাবে আসে না।

    যার ফলে রোগীর শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়,  খিঁচুনি দেখা যায় ও মাটিতে পড়ে যায়। এটি স্নায়বিক রোগ হওয়ায় একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নিউরোলজিকাল ডিজিজ বলে। WHO এর তথ্যমতে,বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় 50 মিলিয়ন লোক মৃগী রোগে আক্রান্ত যার মধ্য শতকরা ৮০ ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে লক্ষ্য করা যায়।

    *** মৃগী রোগের কারণঃ-

    মৃগী রোগের সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। তবে মস্তিষ্কের টিউমার বা সংক্রমণ, জন্মগত ত্রুটি, জিনগত মিউটেশন, মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুকোষের অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ক্রিয়া প্রভৃতি মৃগীর প্রধান কারণ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব কারণে রোগীর খিঁচুনি, আবার অজ্ঞান হতে দেখা যায়।

    বংশগত কারণেও এরোগ হয় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে যদি কোনো সংক্রমণ হয় তাহলে তার জটিলতা হিসেবে মৃগী দেখা যেতে পারে, বাচ্চা যদি অনেক কম ওজন বা নির্দিষ্ট দিনের অনেক আগেই জন্ম নেয় তাহলেও মৃগী দেখা যেতে পারে। তবে 70% ক্ষেত্রে মৃগীর কারণ এখনো জানা যায় নি।

    *** মৃগী রোগের লক্ষণঃ-

    মৃগীরোগ কে সাধারণত দুইভাগে ভাগ করা হয়- বড় ধরনের মৃগীরোগ ও মৃদু ধরনের মৃগীরোগ

    §  বড় ধরনের মৃগীর লক্ষণঃ-

    Ø  কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে ।

    Ø  খিঁচুনি হওয়ার আগে রোগী বুঝতে পারে।

    Ø  আচরণের পরিবর্তন আসে।

    Ø  রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও মাটিতে পড়ে যায়।

    Ø রোগীর সব মাংসপেশিতে টান ধরে তখন রোগী চিৎকার করতে থাকে।

    Ø  খিঁচুনি শুরু হলে মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়।

    Ø  রোগীর জিহ্বা কামড় দিয়ে ধরে রাখতে পারে

    কখনো রোগীর অনিচ্ছাই পায়খানা প্রস্রাব বেরিয়ে যায়।

    Ø  ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়,পরে জেগে ওঠার পর কিছুই মনে করতে পারে না।

    §  মৃদু ধরনের মৃগীর লক্ষণঃ-

    Ø  এটি স্বল্পকাল স্থায়ী হয়ে থাকে সাধারণত 10 থেকে 15 সেকেন্ড।

    Ø  হঠাৎ করে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই রোগীর খিঁচুনি আরম্ভ হয় ।

    Ø  অজ্ঞান হয়ে পড়লে মাটিতে পড়ে যায় আবার কখনো জ্ঞান ফেরার পরপরই দাঁড়িয়ে যায়।

    Ø   রোগীর পায়খানা প্রস্রাব হয়ে যেতে পারে।

    Ø  জিহ্বায় কামড় লাগতে পারে।

    Ø  খিঁচুনির পর মাথাব্যথা ,চুপ হয়ে  থাকা, শুয়ে থাকা ইত্যাদি মৃদু মৃগীর লক্ষণ ।

    *** মৃগীরোগীর মানসিকতা

    মৃগী যেহেতু মস্তিষ্কের একটি রোগ তাই সাধারণ মানুষ তুলনায় মৃগী রোগের মধ্যে মানসিক আচরণিক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।যারা দীর্ঘদিন মৃগী রোগে ভুগছেন তাদের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় যেমন:- আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতা, মেজাজ খিটখিটে ধরনের।

    সামান্যতেই ঝগড়া শুরু করার প্রবণতা, বিষন্নতা ,কোন বিষয় নিয়ে অধিক চিন্তা, বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি। শুধুমাত্র 20% রোগীর ক্ষেত্রে এইসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা।মৃগী রোগীর এই ধরনের ব্যক্তিত্ব কে বলা হয় এপিলেপ্টিক পার্সোনালিটি।

    *** খিঁচুনি হওয়ার কারণঃ

    মৃগী মৃদু বা বড় যে ধরনেরই হোক না কেন তার প্রধান লক্ষণ হলো খিঁচুনি। আর যেসব কারণে মৃগী রোগীর খিঁচুনি দেখা যেতে পারে তা হলো  __

    o   অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে।

    o    মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ অতিরিক্ত হলে ।

    o   পর্যাপ্ত ঘুম না হলে।

    o    কোন রোগের সংক্রমণ থাকলে। ।

    o   গরম পানিতে গোসল করলে

    o  উচ্চশব্দে গান শুনলে ।

    o   অতিরিক্ত আলোর কারণে।

    o   আবার অনেক ঔষধ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারণে খিঁচুনি’ হতে পারে।

    *** মৃগী রোগের চিকিৎসা:-

    §  খিচুনি সময় প্রাথমিক চিকিৎসাঃ-

    রোগী মৃগীতে আক্রান্ত হলেই তার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকেনা আবার জ্ঞান আসার পরেও রোগীর কিছু সময়ের জন্য মানসিক বিভ্রম দেখা যায় তাই মৃগীতে আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে অবস্থানরত ব্যক্তিকেই রোগীর সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হয়।

    Ø  রোগীর নিকট হতে আগুন পানি বা ধারালো বস্তু থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।

    Ø  রোগীর দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় খিঁচুনি হলে তাকে সাবধানে শুইয়ে দিতে হবে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথায় আঘাত না পায়,মাথার নিচে নরম জাতীয় কোনো কিছু দিতে হবে যেমন বালিশ, ফোম বা নরম কাপড়।

    Ø  বাহিরে যদি রোগে আক্রান্ত হয় তবে আশেপাশে বেশি লোক ভিড়তে দেওয়া যাবেনা।

    Ø  রোগীর পরনে বেল্ট বা টাই থাকলে তা খুলে দিতে হবে, জামাকাপড় যতসম্ভব ঢিলা করে দিতে হবে ।

    Ø  মাথাটি পাশ ফিরিয়ে রাখতে হবে, যাতে সহজে শ্বাস নিতে পারে ও মুখের ফেনা,লালা সহজে গড়িয়ে পড়তে পারে।

    Ø  খিঁচুনি অবস্থায় রোগীকে সরানো যাবে না।

    Ø  খিচুনি থামানোর জন্য রোগীকে চেপে ধরা যাবেনা রোগীর মুখে জোর করে আঙুল ঢোকানো যাবে না এমনকি জিহ্বায় দাঁতের কামড় লাগলেও তা ছাড়ানোর চেষ্টা করা যাবেনা।

    Ø  সাধারণভাবেই খিঁচুনি শেষ করতে দিতে হবে।

    Ø  খিঁচুনি শেষ হওয়ার পর রোগীর নাড়ির স্পন্দন পরীক্ষা করতে হবে যে রোগী ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছে কিনা।

    Ø  খিচুনি যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে না থামে অথবা জ্ঞান ফেরার পূর্বে আবার খিঁচুনি শুরু হয় তবে অতিসত্বর হাসপাতালে নিতে হবে।

    §  মৃগী রোগ সনাক্ত করার জন্য যেসব পরীক্ষা করা হয়।

    Ø  ইলেকট্রোইনসেফালোগ্রাম-Electroencephalogram.

    Ø  কম্পিটারাইজড্ টোমোগ্রাফি-Computerized tomography.

    Ø  ব্লাড টেস্ট -Blood test.

    Ø  ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং-Magnetic resonance imaging.

    Ø  ফাংশনাল এম আর আই- Functionl MRI.

    Ø  ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স স্পেকট্রোসকপি-Magnetic resonance Spectroscopy.

    Ø  পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি-Positron emission tomography.

    Ø  সিঙ্গেল ফোটন ইমিশন কম্পিউটারাইজড্ টোমোগ্রাফি-Single -photon emission computerized tomography.

    Ø  নিউরোসাইকোলজিকাল টেস্ট-Neuropsychological tests.

    বর্তমানে মৃগী রোগের ভাল চিকিৎসা আছে। সকল খিঁচুনির জন্যই প্রথমেই সরাসরি মৃগী রোগের চিকিৎসা শুরু করা হয় না। বিশেষ করে প্রথমবার খিঁচুনি হলে এবং সেটা মারাত্মক অবস্থার দিকে না গেলে তবে এর জন্য দ্বিতীয় টার্মের অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসকরা সেডিটিভ জাতীয় ঔষধ প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে খিঁচুনি উপশম করতে পারেন।

    প্রথম থেকেই সতর্ক হলে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ঠিকমত ঔষধ সেবন এবং অন্যান্য বিষয় মেনে চললে সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি কারন- এই সকল ঔষধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যা খুবই মারাত্মক হতে পারে, যেমন- লিভার কিংবা কিডনির সমস্যা, স্টিভেন জনসন সিনড্রোম, রক্তের অণুচক্রিকা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

    তাই, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এবং সঠিক নিয়মে ঔষধ সেবন করতে হবে। এসব ওষুধ চলাকালীন সময়ে অ্যান্টাসিড, অ্যাসপিরিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। ওষুধ খাওয়ার সময় সন্তান নিতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে সাধারনভাবে মাতৃদুগ্ধ পানে কোন সমস্যা হয় না।

    §  মৃগী রোগের জন্য যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হয়ঃ-

    মৃগী রোগের চিকিৎসার জন্য যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হয় তাদেরকে বলা হয় এন্টি ইপিলেপ্টিক ড্রাগ যেমন:-

    §  অ্যাসিটাজোলামাইড- Acetazolamide  .

    §  ব্রিভারাসিটাম (ব্রাভিট্যাক্ট)-Brivaracetam (Briviact ).

    §   ক্যানাবিডিওল (এপিডিওলেক্স)-Cannabidiol(Epidyolex) .

    §  কার্বামাজেপাইন (টেগ্রেটল)-Carbamazepine (Tegretol).

    §  ক্লোবাজম (ফ্রিসিয়াম, পেরিজাম, ট্যাপক্লাব, জ্যাকো)-Clobazam(Frisium, Perizam, Tapclob, Zacco).

    §   ক্লোনাজেপাম-Clonazepam .

    §  এস্লিকারবাজেপাইন অ্যাসিটেট (জেবিনিক্স)-Eslicarbazepine acetate(Zebinix).

    §  ইথোসক্সিমাইড-Ethosuximide .

    §  এভারোলিমাস (ভ্যাটুবিয়া)-Everolimus (Votubia).

    §   গ্যাবাপেন্টিন (নিউরোন্টিন)-Gabapentin(Neurontin).

     

    ## মৃগী রোগীর জন্য করণীয়ঃ-

    নিয়মিত হবে সকল প্রকার ঔষধ খেতে হবে।  যত সম্ভব ঘুমাতে হবে। মানসিক  সকল প্রকার উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।রোগীর খিঁচুনির  মাত্রা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আগুন, পানি এসব থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে।খিঁচুনি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কখনোই পানিতে নামা, গাছে ওঠা কিংবা গাড়ি চালানো যাবে না।একজন মৃগীরোগীর সংসার ,কর্মজীবন, লেখাপড়া সকল ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।

    ****বিশ্ব মৃগী দিবসঃ-

    মৃগী রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সোমবার বিশ্ব   মৃগী দিবস পালন করা হয়।

    অনেকে মনে করে মৃগী রোগ একটি আছর বা আলগা দোষের ব্যাপার বা জিন-ভূতের ব্যাপার বা অভিশাপ। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এই রোগের রোগীদের লেখাপড়া, বিয়েশাদি, সংসার ইত্যাদিতে কোন সমস্যা নেই। এই রোগটি অনেকে গোপন করেন নানান কারনে।

    কিন্তু চিকিৎসা না করিয়ে রোগ গোপন করে মেয়েটির বা ছেলেটির আরও ক্ষতি হতে পারে। বর্তমানে এ রোগের উন্নত চিকিৎসা আছে। তাই, গোপন না করে সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহন করলে সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হবে।আমাদের সচেতনতাই পারে এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে।

    মোঃ আশিক মোস্তফা

    বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-

    প্রথম বর্ষ

    খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

     

    ***References:

     

    https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%97%E0%A7%80?fbclid=IwAR3sfFpT3TT3SMHHP8eGQfhYBo-Nmvdy3zjsWsCfw7S_mrQriLjj-tEupq4

    https://www.webmd.com/epilepsy/guide/diagnosing-epilepsy#1

    https://www.epilepsysociety.org.uk/list-anti-epileptic-drugs#.XwgSS20zbIV

    https://www.thehealthsite.com/photo-gallery/diseases-conditions-common-symptoms-of-epilepsy-b1017-522425/epilepsy-522426

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ