• আইন ও আদালত

    মুন্সীগঞ্জে কথিত সাংবাদিক ও মজনবাধিকার কর্মীদের দৌরাত্বে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

      প্রতিনিধি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৪:৪২:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

    মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

    বিশ্বায়নের এযুগে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ অনেক দূর এগিয়েছে বটে। পাশাপাশি অত্যাধুনিক এসব প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে কিছু কিছু মানুষের আচরন থেকে সৌজন্যবোধ ও শ্রদ্ধাবোধ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আবার কিছু মানুষ না বুঝে নিজেকে খুব বেশি জাহেরি করতে সম্মানজনক অনেক পেশাকে অবমাননা করে সমাজে অহরহ নানা বিতর্ক সৃষ্টি করছে। যেন অসির চেয়ে মসি বড়। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা গেছে কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিজস্ব মনগড়া কিছু উক্তি লিখে মহান পেশা সাংবাদিকতাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করছে, নাম সর্বস্ব বিভিন্ন পত্রিকা, প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইউটিউব চ্যানেল ও নিউজ পোর্টাল নিজে তৈরি করে ইউনিয়ন ভিত্তিক, পাড়া মহল্লায় ছবি সম্বলিত ভূয়া আইডি কার্ড সরবরাহ ও প্রদর্শন করে চলছেন। যেন গায়ে মানে না আপনি মোড়ল।

    তাদের এহন কার্যকলাপে মানুষ যে এখন ত্যক্ত বিরক্ত তা তাদের বোধদয় হচ্ছেনা বিধায় যেকোন সাধারন মানুষ সাংবাদিকতা পেশাকে নিয়ে যেকোন মন্তব্য করতে সুযোগ পাচ্ছে। একটি রাষ্ট্র ও সমাজের অন্যতম সম্মানজনক পেশা হচ্ছে সাংবাদিকতা। সে জন্যই সাংবাদিকদের সমাজের অতন্দ্র প্রহরী বা ‘গেট কিপারস’ বলা হয়। তাছাড়া সাংবাদিক সমাজ জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত। যারা রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষকে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সাংবাদিকতা পেশার অন্যতম লক্ষ হওয়া চাই সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবাধিকার সংরক্ষণ, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধোচারণ, অসহায়, অধিকার বঞ্চিত দূর্বল জনগোষ্ঠীর পক্ষধারণসহ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা। মুন্সীগঞ্জের ৬ টি উপজেলায় দিন দিন বেড়েই চলছে কথিত হলুদ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের দৌরাত্ম্য। রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মী লিখা স্টিকার লাগিয়ে কথিত এসব সাংবাদিকরা নাম্বারবিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে দাবিয়ে বেরাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন? এমনও কথিত সাংবাদিক রয়েছে যাদের মানসম্পন্ন কোন খবরের কাগজে নিয়োগ নেই। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, চটকদার নামের ইউটিউব চ্যানেল, বিভিন্ন নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই সংবাদ প্রকাশ করে।

    কথিত এসব সাংবাদিকদের কারনে দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ প্রাপ্ত সাধারন মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধাভাজন প্রকৃত সাংবাদিকরা এখন কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে গণহারে বেড়ে যাওয়া লেবাসধারী এসব লোকেরা রাস্তায় বাহির হলেই বীরদর্পে অকপটে পরিচয় দেয় আমিও সাংবাদিক। যার ফলে সাধারন মানুষ সংবাদ কর্মীদের এখন উপহাস করে অকপটে বলে ফেলেন ঐ যে দেখ সাংঘাতিক।

    তাছাড়া এসব কথিত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের অভিযোগ, কতিপয় লোকজন আবার সাংবাদিক পরিচয়ে সংবাদ প্রকাশের কথা বলে অর্থ আদায়, দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি, মোটরসাইকেলে সাংবাদিক লিখে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।কথিত সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় যেকোন সভামঞ্চে, রাজনৈতিক ময়দানে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, মিলাদ মাহফিল, স্মরণ সভায় যে কোন অনুষ্ঠানে কথিত এসব সাংবাদিকদের উপস্থিতির কারনে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সচেতন নাগরিক সমাজ এখন ত্যক্ত ও বিরক্ত।

    সচেতন নাগরিক সমাজের অভিমত, কথিত এসব সাংবাদিকরা প্রকৃত পক্ষে সমাজের নানা অসঙ্গতি, অনিয়ম, দূর্ণীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, দখল, ভরাট, মাদক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ভূমি সন্ত্রাস, পরিবেশ দূষণ, সামাজিক অবক্ষয়, লুটতরাজ, নদী দখল নিয়ে অনুসন্ধানী কোন প্রতিবেদন তৈরী করার কোন যোগ্যতাই তাদের নেই। তাদের অভিযোগ, অল্প শিক্ষিত অনেক হলুদ সাংবাদিক কিছু নাম সর্বস্ব পত্রিকার কার্ড বুকে-পিঠে ও কোমরে ঝুঁলিয়ে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন পূর্বক চাঁদাবাজি ও নানা কাজের তদবিরসহ বীরদর্পে অনেক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক সাধারন মানুষ ভূয়া সাংবাদিকদের হয়রানির শিকার হয়ে ভয়ে বা আতঙ্কে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বর্তমান সময়ে ভূয়া সাংবাদিকদের কারনে এখন প্রকৃত গনমাধ্যম কর্মীরা নানা ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

    তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূয়া সাংবাদিকরা ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় ভূয়া পরিচয়পত্র মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনে এনে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। পরে এসব কথিত সাংবাদিকরা সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে দু, চার কথা অথবা নাম সর্বস্ব পত্রিকায় মনগড়া বক্তব্য লিখে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। তাছাড়া কথিত এসব সাংবাদিকরা প্রতিদিন থানায় ঘুরাঘুরি করে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন অপকর্মের তদবির করে দাপটের সঙ্গে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

    তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছেন সরকারি ও বে-সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কোথাও কোন রকম জবাবদিহিতা না থাকায় এবং কেউ কোন প্রতিবাদ না করায় হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। অপর দিকে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে নিজেকে দাপটের সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন সিলেট সহ নানা জায়গায় সফরের নামে চাঁদা দাবি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা চাঁদা না দিলে তাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য জুড়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে বদলী করা হবে বলে হুমকি ধামকি দেয়া হয়।

    এসব হলুদ সাংবাদিকদের চাঁদাবাজীতে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। তাদের বিরুদ্ধে জেলা বা উপজেলা প্রসাশন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রকৃত সংবাদকর্মীদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে দাবী করেন সাধারণ মানুষ।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ