ফাহিম হাসান সানি-বিশেষ প্রতিনিধি:
মাহে রমজান অন্য সকল মাস অপেক্ষা উত্তম ও তাৎপর্যপূর্ণ।প্রতি বছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে মাহে রমজান। রমজান মাসে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত। রমজান হচ্ছে সিয়াম সাধনা, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত তথা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যলাভের এক বিশেষ মৌসুম। ‘রমজান’ শব্দটি আরবি ‘রামাদ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রোজা মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রমজান’। সোনা আগুনে পোড়ালে খাদমুক্ত হয় তেমনি রমজানের দহনে সিয়াম সাধক গুনামুক্ত হয়ে ফেরেশতা-সুলভ জান্নাতি মানুষে পরিণত হয়।
রোজার আরবি হলো সিয়াম। যার অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার।
বস্তুপ্রেমের করালগ্রাস থেকে মুক্ত করা: বস্তুপ্রেম সব পাপের মূল। অন্যায়-অনাচার, খুন, রাহাজানি, চৌর্যবৃত্তি, সুদ, ঘুষসহ মানুষ যেসব অপকর্মে লিপ্ত হয়, তার সব কটির মূলে থাকে বস্তুপ্রেম। মানুষের কাছে বস্তু হলো সৌন্দর্যের প্রতীক। সে এই প্রতীকের পেছনে দৌড়ঝাঁপে ব্যয় করে তার জীবন। আল কোরআন মানুষের এই মনমানসিকতাকে যথার্থরূপে চিত্রিত করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালোবাসা, নারী, সন্তান, রাশি রাশি সোনা-রুপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগ্যসামগ্রী। আর আল্লাহ! তাঁর কাছে রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৪)।
হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত যতো নবী-রাসুল এসেছেন সকলের ওপর রোজা ফরজ ছিলো। হজরত আদম (আ.) প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা পালন করতেন। হজরত মুসা (আ.) জিলকদ ও জিলহজ মাসে দশ দিন রোজা রাখার পর তাওরাত কিতাব পেয়েছিলেন। হজরত নুহ (আ.) প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোজা রাখতেন। হজরত ইয়াহ্য়া (আ.)ও রোজা পালন করেছিলেন এবং ঈসা (আ.)ও রোজা পালন করেছিলেন। কিন্তু সে সময়ের রোজা আর আমাদের মুসলিমদের রোজার মধ্যে পার্থক্য আছে। তখনকার রোজার সময়সীমা, সংখ্যা, কখন তা রাখা হবে নির্ধারিত ছিলো না এবং ধারাবাহিকভাবে একমাস রোজা রাখার প্রচলন ছিলো না। পরবর্তীতে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় হিজরিতে পরিপূর্ণ একমাস রোজা রাখার বিধান নাজিল হয়। আল্লাহ্ তায়ালা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত- ১৮৩)
১. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্ তায়ালার কাছে মিস্কের সুগন্ধির চেয়েও পছন্দনীয়।
২. ইফতার পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
৩. আল্লাহ্ তায়ালা প্রতিদিন জান্নাতকে রোজাদারদের জন্য সজ্জিত করেন এবং বলেন অচিরেই আমার সৎ বান্দাগণ ক্লেশ-যাতনা দূরে নিক্ষেপ করে আমার দিকে ফিরে আসবে।
৪. রমজানে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। যাতে তারা এসব পাপ কাজ করাতে না পারে যা অন্য মাসে করানো সম্ভব।
৫. রমজানে রোজাদারকে শেষ রাত্রে মাফ করে দেওয়া হয়।’ -(মুসনাদ আহমাদ ইব্ন হাম্বল, হাদিস নং- ৭৯০৪)
আমাদের সবার জীবনে যেন রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়ুক।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে হেফাজত করুন, নেক কাজের তৌফিক দেন, সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার দৃঢ়তা দেন। আমাদের ঈমানকে মজবুত করার সুযোগ দেন। আমিন!
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.