• সাহিত্যে

    ভালোবাসার নামে ছিনিমিনি-মুশফিকা সবুর

      প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২২ , ১:৩৫:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    গভীর রাত ঘুমিয়ে আছে সারা শহর, মাঝে মাঝে জিজি পোকার ডাক শোনা যায় ,একসময় সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু বেড়ে গেল একজনের মনের চটপটানি, কিছুতেই যেন চোখ লাগতে চাচ্ছে না ।কত বছর ধরে না ঘুমানো চোখ তারপর ও যেন ঘুম আসতে চায়না। বারান্দার কোনাই গিয়ে দাঁড়ালো সে, বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো সবই অন্ধকার। একটা ঘরের বাতিও জ্বলছে না ।হঠাৎ মনের অজান্তেই চোখের কোনে ভিড় করলো ,একরাশ পানি ।গাল বেয়ে দু’ফোঁটা জল পড়ে গেল। সেই দিকে খেয়াল নেই ,রফিক সাহেব এক কম্পানিতে চাকরি করে। বিয়ে করার চার বছর পর তাদের কুল আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান। রফিক সাহেবের আনন্দকে দেখে রফিক সাহেবের স্ত্রী সালমা বেগম তার মেয়ের নাম রাখে সীমা। দেখতে দেখতে চোখের সামনে বড় হয়ে উঠে সীমা। স্কুল কলেজ পার করে এখন ভার্সিটির ছাত্রী সে, রূপে ,গুণে লেখা পড়ায় কেউ কখনো পিছাতে পারিনি ,আজ ভার্সিটির প্রথম ক্লাস কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হবে হঠাৎ এক দল ছেলে ক্লাসে প্রবেশ করলো,সীমার সেই দিকে খেয়াল নেই ,পিছন থেকে একজন বলে উঠল হাই আমি রাফি ,সীমা গাড় ঘুরিয়ে দেখলো একটি ছেলে দেখতে খুব সুন্দর সীমার দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে সীমা উওর দিলো আমি সীমা, এভাবে তাদের মাঝে অনেক কথা হলো দেখতে দেখতে তাদের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব হলো এক সময় দু’জন দু’জনকে খুব ভালোবেসে ফেলল । রাফি খুব বড় লোক বাবার সন্তান ,সীমা অনেকের মুখে রাফির সম্পর্কে অনেক বাজে কথা শুনেছে কিন্তু, সীমা রাফির মিথ্যা ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছে । তারা অনেক জায়গায় ঘুরতে বের হতো প্রায় পার্কে বসে গল্প করত, দিনে দিনে সীমা রাফির প্রতি বেশি দুর্বল হতে লাগলো। কিন্তু রাফির মনে ছিল অন্য কিছু কত মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে , তার কোন হিসাব নেই। তাদের সম্পর্ক তিন বছর হলো ,প্রায় রাফি সীমাকে তার বাসায় যেতে বলতো রাফি মেচে থাকতো তার বন্ধুদের সাথে । একদিন রাফি জোর করে সীমাকে তার বাসায় নিয়ে আসে,রূমে ঠুকে সীমা দেখলো কত গুলো বখাটে ছেলে বসে মদ খাচ্ছে ,, সীমা বললো রাফি আমি আসি আমি এখানে থাকতে পারবো না ।কিন্তু রাফি সীমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায় ভালোবাসার দোহাই দিয়ে বিয়ে করার আশা দেখিয়ে কেড়ে নেয় সীমার সতীত্ব , তারপর থেকে প্রায় তারা শারীরিক সম্পর্ক করতো । একদিন সীমা আপত্তি করার কারণে। রাফি বলে আমার কাছে সব ভিডিও করা আছে ,আমি এটা ভাইরাল করে দেব তখন তোমার এই সুন্দর চেহারাটা কোথায় লুকাবে? ভিডিওর ভয় দেখিয়ে চলতে থাকে অনেকদিন, কখনো দেখা যায় সঙ্গ দিতে হয় রাফির বন্ধুদের কেউ, বেলকনি তে দাঁড়িয়ে এগুলা নিয়ে ভাবতে ভাবতে চোখে জল চলে আসে সীমার। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা কিছুতেই পড়ায় মন বসছে না শরীরটা খুব খারাপ রাফি আর রাফির বন্ধু যেন সীমার প্রত্যেকটা অঙ্গ ছিরেছিরে খেয়ে ফেলেছে,, বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে,মা বাবার কাছে একটা চিঠি লেখে। রুমের সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সীমা ।শেষ হয়ে যায় একটা নিষ্পাপ প্রাণ, আর রয়ে যায় সেই রাফির মতন হাজারো বখাটে ছেলে। আজ সমাজে ভালবাসার নামে ইজ্জত নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে এতে আত্মহত্যা লিপ্ত হচ্ছে হাজারো প্রাণ। হারাচ্ছে মা তার সন্তানকে ,স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে একটা ভালো ছাত্রী। হেরে যাচ্ছে পবিত্র ভালবাসা ।আর এভাবেই জিতে যায় সব সময় রাফির মতন ছেলেরা।

    কলমে:
    মুশফিকা সবুর

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ