• সারাদেশ

    ভাইয়ের সঙ্গে অভিমান করে জঙ্গলে কাটিয়ে দিলেন ১৭ বছর

      প্রতিনিধি ২৯ মে ২০২৩ , ২:১৩:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:

    শিয়াল, সাপ, বিচ্ছুসহ জীবজন্তুর সঙ্গে অর্ধাহার-অনাহারে জঙ্গলের খুপড়িতেই কাটিয়ে দিলেন ১৭টি বছর। একটি ঘরের অভাবে রয়ে গেলেন চিরকুমার। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ১০নং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামে। সরেজমিনে উপজেলার মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভী বাড়ির পাশে একটি জঙ্গলে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে। ওই গ্রামের মৌলভী বাড়ির মরহুম লাল মিয়ার ছেলে মুজিবুর রহমান, বয়স ৬০। বিশাল একটি জঙ্গলের ঝোপ-বাঁশঝাড় পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যভাগে পলিথিনে মোড়ানো ছাউনির একটি ছোট খুপড়িতে বসে আছেন চিরকুমার মুজিবুর রহমান।

    সাংবাদিকদের কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে খুপড়িতে বসবাস করার জীবনের গল্প শোনালেন মুজিবুর রহমান। অশ্রুসিক্ত নয়নে শোনালেন জীবনের ৬০ বছর পার করার গল্প। অর্থ-বিত্তে সাজানো সংসার সৎভাইদের রোষানলে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তাকে জঙ্গলেই ঠাঁই নিতে হয়েছে। জঙ্গলের খুপড়িতে বসবাস করায় বিয়েটাও করতে পারেননি তিনি, রয়ে গেলেন চিরকুমার।

    মুজিবুর রহমান জানান, তার বাবা মরহুম লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে, এ সংসারে মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথম সংসারে দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সংসারে মো. মুজিবুর রহমান। তার বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। মুজিবুর কাইচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাশ করান। সেই জহিরুল ইসলামই তার পৈতৃক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নেয়। তাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

    তিনি জানান, স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপড়ি বানিয়ে ঠাঁই নেয়। মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ইলেকট্রিক লাইনের কাজ শুরু করে, বাম চোখটিও নষ্ট হয় গেছে। বয়স হয়েছে এখন কাজে নিতে চায় না কেউ। 
    তিনি বলেন, অর্ধাহার, অনাহারে রোদ, ঝর-বাদলে, শেয়ালের হাক-ডাকের মাঝেই খুপড়ির মধ্যেই থাকি। কখনো লাকড়ির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবণ মরিচ দিয়ে খাই, কখনো শুকনা খাবার খেয়ে থাকি।

    এ ব্যাপারে কথা বলতে মুজিবুরের বড় ভাই ফরিদুল ও জহিরুলকে পাওয়া যায়নি। তবে বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন বলেন, আমার কাকা অভিমানী, আমার দাদার জায়গা জমি ভাগ হয়নি এখনো, তবে জহিরুল চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছেন। চাচার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নাই।

    এদিকে সংবাদকর্মীরা ওই এলাকা ঘুরে আসার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটে যান দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সেখানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক চক্ষু চিকিৎসার জন্য মুজিবুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং তার সচ্ছলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

    ১০নং গুনাইঘর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কুমিল্লা (উত্তর) জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবগত হয়েছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, মজিবুর রহমানকে তার পিতার জমির কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ডের সঙ্গে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা জমি তাকে উদ্ধার করে দেওয়া হবে। না হয় তার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দেব।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ