নিউজ ডেস্কঃ
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ৪৯ দিনের মাথায় সংঘটিত হয় ইতিহাসের নৃশংসতম পিলখানা হত্যাকাণ্ড। নিহত হন মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, কর্নেল গুলজার, কর্নেল এলাহীসহ ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। রয়েছে ব্যাপক অপপ্রচার ও গুজব। তাই সামগ্রিকভাবে বিষয়টির বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
ঘটনার সূত্রপাত
বিডিআর সদস্যরা মূল তিনটি দাবিসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছয়টি দাবি পেশ করতে চেয়েছিলেন। ডিজি শাকিল আহমেদ নিজেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি এ ইস্যুতে কাজল নামের একজন জোয়ান স্টেজে উঠে মেজর জেনারেল শাকিলের দিকে বন্দুক ধরেন। একজন অফিসার তাঁকে ধরে ফেললে কাজল জ্ঞান হারান। এ সময় গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে জে. শাকিল এক সৈনিককে গুলি করে হত্যা করেছেন। বিডিআর সৈনিকরা অস্ত্রাগাররক্ষীদের মারধর করে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে। সশস্ত্র একটি দল দরবার হলের দিকে যায়। শুরু হয় গুলিবর্ষণ ও ব্রাশফায়ার।
কেন সেনা অভিযান চালানো হলো না
প্রারম্ভিকভাবে আক্রমণ সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি ছিল না। তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ জবানবন্দিতে বলেছেন, ৯টা ৫১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি ৪৬ ব্রিগেডকে অভিযানের নির্দেশ দেন। ১০টা ৪৫ থেকে ১১টা ৪০-এর মধ্যে সেনাদল ও এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড নিউ মার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, সাতমসজিদ রোডে মোতায়েন করে। আর্মির উপস্থিতি টের পেয়েই ৪ নম্বর গেট থেকে বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করা শুরু করে বিদ্রোহীরা। এতে চারজন সেনা সদস্য গুলিবিদ্ধ হন ও দুজন পথচারীর মৃত্যু ঘটে। বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় সিআইডিকে ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের মতে, সেনাবাহিনীর প্রথম দলটি পৌঁছানোর আগেই (সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট) বিদ্রোহীরা বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সবাই প্রায় একই সময় (আনুমানিক ৯টা ৩০ থেকে ১০টা) নিহত হয়েছিলেন। শুধু মিসেস শাকিলসহ কয়েকজন অফিসার ও বেসামরিক ব্যক্তি কয়েক ঘণ্টা পর নিহত হন।
অভিযান পরিচালনা হতে পারে এমন ধারণা থেকে বিদ্রোহীরা বিডিআরের ২ নম্বর গেটে জিম্মি করা সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারকে জড়ো করেন। প্রধানমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেওয়া ভাষণের পরপরই সন্ধ্যায় বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ শুরু করে।
এ অবস্থায় জীবিত ও মৃতের সংখ্যা না জেনে অভিযান পরিচালনা করতে সবাই সম্মত হতেন কি না সেটিও বিবেচ্য। এ ছাড়া নতুন ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ প্রতিষ্ঠিত হতো যে মূল হোতাদের নিশ্চিহ্ন করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
৯০ জন সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিজনসহ ৩০০ বেসামরিক ব্যক্তিকে জীবিত বের করে আনার মাধ্যমে বিদ্রোহ নিরসনের যে চেষ্টা করা হয় তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল।
বিচারপ্রক্রিয়া
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর কালবিলম্ব না করে তিন পর্যায়ে ঘটনার তদন্তকাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে—বিডিআর কর্তৃক তদন্ত, সেনাবাহিনী কর্তৃক তদন্ত এবং জাতীয় তদন্ত। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। বিএনপির নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়েছে ২৬২ জনের।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব : এ ঘটনায় কারা জড়িত
১. ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা রয়েছে। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ব্যারিস্টার তাপসের নাম আনা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে জাতীয় স্বার্থের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তার জন্য তাঁদের যাওয়া যে কর্তব্য ছিল সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয় না। তাঁরা অনুপস্থিত থাকলেও নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব হাজির করা হতো। একইভাবে তোরাব আলী একসময় বিডিআরে কর্মরত ছিলেন। এই বিদ্রোহে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কারণ ব্যক্তিগত ও পেশাগত হওয়াই স্বাভাবিক। আবার এমন প্রশ্ন তোলা হলে পিলখানা থেকে জীবিত ফিরে আসা ও চুয়াডাঙ্গা বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী কর্নেল কামরুজ্জামানকে নিয়েও সন্দেহ দেখা দিতে পারত।
২. অনেক সাবেক সেনা কর্মকর্তাও প্রশ্ন তোলেন কেন সেনা তদন্ত প্রকাশ করা হলো না! সেনা তদন্ত কি কখনো প্রকাশ করা হয়? সে প্রশ্ন যৌক্তিক।
৩. বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহতদের বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধের মতাদর্শের অনুসারী ছিলেন। জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডে তাঁদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। রাজনৈতিক কারণে বা নির্বাচনে জয়ী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিজিবিতে কর্মরত সেনা সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ থাকার কোনো কারণ নেই। ক্ষোভ যদি থাকে, তাহলে বিএনপি-জামায়াতেরই থাকার কথা। নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে তারা সেনাবাহিনীকে দায়ী করে। তাই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের অপপ্রচার কখনোই থেমে ছিল না।
৪. বিএনপি কেন বিদ্রোহ দমন ও প্রতিরোধে প্রণীত বিজিবি অ্যাক্টের বিরোধিতা করেছিল তা জানি না। তবে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আসামিদের পক্ষে যাঁরা আইনি লড়াই করেছেন তাঁদের প্রায় সবাই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
৫. নির্বাচনে পরাজিত দলের সাধারণত প্রথম দিকে তেমন কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থাকে না। কিন্তু গণমাধ্যমেই সূত্র রয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি সারা দেশ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশ দিয়েছিল বিএনপি। বিকেলে বিএনপির সভা শেষ হয়, রাত থেকে শুরু হয় বিডিআর সদস্যদের ক্ষুব্ধ করার অপতৎপরতা।
৬. বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দূত হিসেবে জিয়া ইস্পাহানি বাংলাদেশে আসেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার না করার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের প্রস্
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.