• বরিশাল বিভাগ

    বামনায় ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে শিক্ষক বরখাস্ত

      প্রতিনিধি ৯ আগস্ট ২০২২ , ৬:৩১:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের শেরে বাংলা সমবায় বিদ‍্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৭ম শ্রেণীর এক তরুনীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃত শিক্ষকের নাম মোঃ হানিফ। তিনি ঐ বিদ‍্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক। এব‍্যাপারে প্রধান শিক্ষক কে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে!

    গত ১৯ জুলাই রামনা শেরে বাংলা সমবায় মাধ‍্যমিক বিদ‍্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে। পরে ৩০ হাজার টাকায় স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রফাদফা করা হয়। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বামনা উপজেলার শেরে বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ হানিফ প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে ওই স্কুলের ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষন করার চেষ্টা করে। পরে শিক্ষার্থীর ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে।

    গত মঙ্গলবার ১৯ তারিখ সন্ধায় শেরে বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে এঘটনা ঘটে। এবিষয়ে স্থানীয় আজিজ সহ এলাকাবাসী জানান, স্কুলে প্রাইভেট পড়ার নামে এসব নোংরামী কিছুতেই সয্য করা যায় না । এই স্কুলের সুনাম আছে। তা ধরে রাখার দ্বায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এই সহকারী শিক্ষক হানিফের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ উঠেছে। আমরা এরকম অসভ্য শিক্ষক থেকে বাচঁতে চাই।

    তারা আরও জানান, অভিযুক্তকারী শিক্ষক হানিফ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের কাছে মিমাংসার জন্য দেন। সে টাকা থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা ভুক্তভোগীর বাবাকে দেওয়া হয়। আর বাকী টাকা চেয়ারম্যনের পকেটে।

    ভুক্তভোগীর বাবা জানান, আমরা গরিব মানুষ। যা হবার হয়েছে। আমরা কিইবা করতে পারবো। আমরা কোথাও এর সুষ্ঠু বিচার পাবো না। তাই বেশি কিছু বলতে চাই না। আপনারা আমাদেরকে মাফ করুন। আমি এসব বিষয় আর কিছুই বলতে পারবো না।

    ভুক্তভোগী ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, রামনা শেরই বাংলা সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মাঞ্জুরুল আলম হানিফ এর কাছে প্রাইভেট পড়ত তার ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে। গত দুই মাস ধরে আর্থিক সমস্যার কারণে পাওনা টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে ওই শিক্ষক গত ১৬ জুলাই তার মেয়েকে আলাদা রুমে ডেকে শ্লীলতাহানি ঘটায়।

    তিনি আরো জানান, বিষয়টি তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারকে জানানো হলে তিনি ওই শিক্ষকসহ তাদের ইউনিয়ন পরিষদে ডাকেন। পরে ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান তাকে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে জোড়পূর্বক স্বাক্ষর নেন। এ ছাড়া তার স্বামীর বড় ভাই (ভাসুর) এর কাছে ৩০ হাজার টাকাও দেন তিনি। তবে অদ্যবধি সে টাকা তার হাতে পৌঁছায়নি বলেও অভিযোগ করা হয়।

    এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দার এবং শিক্ষক মঞ্জুরুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। রামনা শের-ই বাংলা সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসাইন বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি আমরা লোক মুখে শুনেছি। পরে ওই শিক্ষককে আপাতত ৭ম শ্রেণির পাঠদান থেকে বিরত রেখেছি।

    অভিযুক্তকারী শিক্ষক মোঃ হানিফ এসব বিষয় অন্বীকার করে জানান, গত বছর আমি তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছি। এবছর তাকে পড়াই না।আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা ও ভিওিহীন। তিনি আরও জানান, আপনারা যদি এসব বিষয় প্রমান করতে পারেন। তাহলে যেই শাস্তি হবে আমি তা মাথা পেতে নিবো।এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, এব্যাপারে আমি কিছুই জনিনা। কেউ আমার কাছে অভিযোগ দেয় নাই।

    স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এসব মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আছে তারা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশিরুল আলম জানান, এব্যাপারে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ