মু,হেলাল আহম্মেদ রিপন-পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি পণ্য সামগ্রী এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপ, আমেরিকার ও অষ্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য। বাউফল উপজেলার ৮নং মদনপুরা ইউনিয়ন ও ৬নং কনকদিয়া ইউনিয়নের পালপাড়া পরিদর্শণকালে জানা যায়, দূর্ঘাপূজাকে সামনে রেখে বর্তমানে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। মৃৎপল্লী ঘুরে চোখে পড়েছে মাটির তৈরী বাহারি সব তৈজসপত্র এবং শোনা যাচ্ছে নানা রং-বেরংয়ের খেলনার টুং টাং শব্দ। প্রতিযোগিতা চলছে দ্রুত সরবরাহের।
বাহারি ডিজাইনের পণ্য ফিনিশিং শেষে চলছে প্যাকেজিং। বাউফল পৌরসভার কাগুজিরপুল ব্রিজের ঢালে দাড়িয়ে থাকা গাড়িতে লোড করা হচ্ছে মাটির তৈরি পণ্য ভর্তি ঝুড়ি। বাজার ধরতে গাড়িগুলো যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বাউফলে আধুনিক মাটির পণ্য তৈরীর একাধিক পুরষ্কার প্রাপ্ত বিশ্বেশ্বর পাল জানান, এখানকার মাটির পণ্য দেশ এবং বিদেশে নন্দিত। এ সকল পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য আড়ং, কোর দি জুট ওয়ার্কস, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তিনি বলেন, প্লাষ্টিক পণ্যের প্রভাবে বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসা এই পেশা যখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তখন আমরা আধুনিক ডিজাইনের পণ্য তৈরির জন্য কৌশল অবলম্বন করি।
আশির দশকে ঢাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বাউফলের মাটির পণ্যের মান দেখানো হয়। ওই সময় আড়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়। তারা বাউফলে তৈরী মাটির পণ্য দেখে মুগ্ধ হন। সেই থেকেই তাদের সহযোগিতায় এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। এরপর ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে এরপর থেকেই ঢাকায় বাউফলে তৈরী নানা ধরণের মাটির পণ্য সরবরাহ শুরু হয়।তিনি আরও বলেন, আমরা কঠোর পরিশ্রম ও মনোনশীলতা দিয়ে বাউফলের মাটির পণ্যকে বিশ্বমানের আধুনিক পণ্যে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা গর্বের অংশীদার হয়েছেন।
বর্তমানে বাউফলের মাটির তৈরী নানা পণ্য এশিয়া মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাউফল পৌর সভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বাউফলের একটি মৃৎ শিল্প কারখানার মালিক শংকর পাল জানান, প্রতিবছরই পণ্যের ডিজাইনে পরির্বতন আসে। ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নতুন ডিজাইন করে তাদের চাহিদাপত্র দেন। সে অনুযায়ি নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য তৈরী হয়। তিনি বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর সবগুলো মাটির পণ্যেই নতুনত্ব এসেছে।
অপর মৃৎ শিল্পী শ্যামল পাল জানান, এ বছর ডিনার সেটে থাকছে প্লেট, গ্লাস, মগ, কারিবল, জগ, লবনদানি, সানকি (বাসন), কাপপিরিচ ও তরকারির বাটি। এ ছাড়াও নতুন ডিজাইনে তৈরী করা হয়েছে স্যুপ সেট। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে নতুন ডিজাইনের কয়েলদানি, মোমদানি, ঘটি, ফুলদানি ও নানা ধরণের খেলনা ক্রেতাদের আলাদা ভাবে আকৃষ্ট করবে। ডিনার সেট ছাড়াও আলাদা বিক্রির জন্য তৈরী করা হয়েছে মাটির প্লেট, গ্লাস, জগ, মগ, ইত্যাদি। রাসায়নিক কোন পদার্থের ছোঁয়া ছাড়াই তৈরী করা হয়েছে মাটির ওইসব পণ্য।
তিনি বলেন, পণ্যের গায়ে রঙ করা হয় পাহাড়ি গাছের রস দিয়ে।
মৃৎ শিল্প কারখানার মালিক শিল্পী বরুন পাল বলেন, এক সময় বাউফলের পাল পাড়ায় জালের কাঠি, পুতুল, কলস, বাচ্চাদের খেলনা, রসের হাঁড়িসহ গ্রামবাংলার ঘরে ব্যবহার্য নানা ধরণের মাটির সামগ্রী তৈরী হত। ক্রমান্বয়ে প্লাষ্টিক সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একই কাঁচামালে তৈরি হতে থাকে মোমদানি, অ্যাষ্ট্রে, ফুলদানি এবং পায়ের গোড়ালি ঘষোনি (ঝামা),ডিনার সেট, মোমদানি, অ্যাষ্ট্রে, ফুলদানি, কয়েল দানি, টি সেট, হুক্কা, ভর্তার বাটি, ল্যাম্পসেট, মাটির মালা, ব্রেসলেট ও কানের দুলসহ আর্কষনীয় মাটির শোপিচ। তিনি জানান, আধুনিক ডিজাইনের এসব মাটির পণ্য তৈরি করে অনেক পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে এই মৃৎ শিল্পে।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.