বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।যে তিন ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা বলা হলো, বাংলাদেশে আমরা এই তিনটারই শিকার। তবে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বা রাষ্ট্রনেতারা এখনো আমাদের ট্রাম্পের ভাষায় আখ্যায়িত করেননি। কিন্তু আমাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এ দেশে ডিজিটাল ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেসব আইন করা হয়েছে, সেগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভীষণ প্রতিকূল।
সবচেয়ে কঠোর আইনটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এবং সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে এর প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ আইনের প্রতিটি ধারা আমরা ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছি, এটা কী সাংঘাতিক আইন। সরকার যদি এ আইন প্রয়োগ না–ও করে, এ আইনের অস্তিত্বই সাংবাদিকদের সব উদ্যম নষ্ট করে দিতে পারে। এ আইনে ১৯ ধরনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ আছে, সেগুলোর মধ্যে ১৪টাই জামিনের অযোগ্য। তাহলে একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়।
যেহেতু তিনি জামিন পাবেন না, বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগেই তাঁকে ছয় মাস, এক বছর কারাগারে কাটাতে হবে। একজন সাংবাদিকের মাথায় যদি এই দুশ্চিন্তা থাকে, তাহলে তাঁর পক্ষে কীভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা করা সম্ভব। তা ছাড়া, এ আইনে পুলিশকে খুব বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রয়োজন নেই, কোনো পুলিশ কর্মকর্তার যদি মনে হয় যে কোনো সংবাদ প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সে রকম কিছু করার সম্ভাবনা আছে, তাহলেই তিনি সেই সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করে নিয়ে যেতে পারবেন।
বাংলাদেশে তো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেশি মামলা হয় মানহানির অভিযোগে। হ্যাঁ, এটা আগে থেকেই ছিল, কিন্তু এত ব্যাপকভাবে এটার প্রয়োগ হতো না। মানহানির মামলা দুই রকমের হয়-একটা ফৌজদারি মানহানি, অন্যটা দেওয়ানি আদালতে মানহানির মামলা। সাধারণ নাগরিক কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মানহানি মামলা করতে গেলে আদালত হয়তো মামলা গ্রহণ করবেন না; কিন্তু কোনো প্রভাবশালী বা টাকাওয়ালা লোক মামলা করতে যান।
তাহলে তাঁর মামলা নেওয়া হবে এবং সেটা নেওয়া হবে ফৌজদারি আইনে; সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে। তা ছাড়া, আইনে স্পষ্ট লেখা আছে, মামলা করতে পারবেন শুধু সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি, অন্য কেউ নয়। যার মানহানির অভিযোগ উঠল, শুধু তিনিই মামলা করতে পারবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাঁর বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী, সমর্থক, অনুসারীরা মামলা করে এবং সেসব মামলা গ্রহণ করা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেটরা কিন্তু এসব মামলা না নিলেও পারেন, আইনে তাঁদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা এসব মামলা গ্রহণ করেন। এতে একই অভিযোগে ১০–১৫–২০টা মামলা হয়। আমার বিরুদ্ধে হয়েছে ৮৪টা মামলা। আইনে আরও বলা হয়েছে যে একটা মানহানির ঘটনায় একের বেশি মামলা হতে পারবে না।
সেখানে একাধিক মামলা হয় কীভাবে? কিন্তু আমাদের দেশে সেটাও হয়ে আসছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই মানহানির মামলা এখন এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর মানহানির মামলা-এই দুটো জিনিস আমাদের সাংবাদিকতা জগতে বিরাট ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সে জন্য সাংবাদিকদের সেলফ সেন্সরশিপ সাংঘাতিক বেড়ে গেছে। এখন বেশির ভাগ সংবাদ আমরা ছাপি না
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.