• চট্টগ্রাম বিভাগ

    বাঁধ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ,আতঙ্কে রামগতি-কমলনগরের মানুষ

      প্রতিনিধি ২৫ এপ্রিল ২০২২ , ৮:২৫:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

    এইচ.এম.আল আমিন-লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি:

    বর্ষা  ঘনিয়ে আসছে, সেই সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা উপকূলে ভাঙন আতঙ্কও বাড়ছে। এ আতঙ্কে নদী থেকে একটু দূরের মানুষও এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন না। থেমে থেমে ভেসে আসা ঝড়ো বাতাসের শব্দ তাদের কানে যেন ভাঙন আতঙ্কের ডাক দিচ্ছে।গেল জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের সভায় প্রায় ৩১শ’ কোটি টাকার মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সেই লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়নে মেঘনা এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু হয়। এ চার মাসে যতটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল, তার একভাগও সম্পন্ন হয়নি। এক মাস ধরে কাজ বন্ধ করে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। 

    নদী এলাকায় ঠিকাদারদের প্রতিনিধি ও শ্রমিকদের না দেখায় স্থানীয়দের দাবি ঠিকাদাররা ‘পালিয়েছে’।অন্যদিকে, বর্ষার আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণ জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করলে কমলনগর-রামগতির বিস্তির্ণ জনপদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে। কমলনগর মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরণা দিচ্ছেন তারা। গত ১১ এপ্রিল এ রামগতি-কমলনগর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার অসহায় মানুষ মানববন্ধন করে দ্রুত নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। এনিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণও করেছেন।

    স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সেনাবাহিনী দিয়ে নদী তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের দাবি থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ রেখে পালিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী ভাঙন অব্যাহত ছিল। সামনে বর্ষা, নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে ভাঙনে কমলনগর দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।সরেজমিন উপজেলার রামগতি,বিবিরহাট,সাহেবেরহাট, কালকিনি, ফলকন ও পাটোয়ারিরহাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোন কাজ চলছে না। ঠিকাদারের কোন লোকজনকে পাওয়া যায়নি। তবে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। 

    জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গেল জুন মাসে ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৪ প্যাকেজে ১৫ জন ঠিকাদার টেন্ডারে কাজ পায়। এরমধ্যে ১৩ জন ঠিকাদারই কাজ শুরু করেন। 

    তবে বালু সংকটের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে প্রশাসন কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, শুনেছি বালু পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ রেখেছেন। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, উদ্বোধনের পর থেকেই জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ চালু ছিল। চাঁদপুর থেকে বালু এনে ডাম্পিং কাজ করা হত। সেখানে বালু ব্যবস্থাপনা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ঠিকাদাররা সামায়িকভাবে কাজ বন্ধ রেখেছে। 

    আমরা নতুন মাধ্যম খুঁজছি। বালু পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু হবে। মে-জুন মাসে কাজ করে এবারের বর্ষায় ভাঙন রোধ করা হবে। এখন তিনজন ঠিাকাদার কাজ করছেন। বাকি ১২ জন ঠিকাদারকে দিয়েও কাজ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচিত হচ্ছেন রামগতি-কমলনগর (০৪) আসনের সাংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নান এমপি।রামগতি-কমলনগর উপজেলার মেঘনার ভাঙ্গন রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজের কোন অগ্রগতি নেই।এমন শিরোনাম দিয়ে বলেন মোঃরিয়াজ তাঁর ফেসবুকে বলেন
    গত ৯ ডিসেম্বর রামগতি কমলনগর বেড়িবাঁধের প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলেও সোমবার (১৮ এপ্রিল ) পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণে আর কোন অগ্রগতি নেই। ফলে রামগতির মানুষ দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। রামগতি ঘুরে কৃষক জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে রামগতির ভূখন্ড ও ফসলি জমি রক্ষায় বেড়িবাঁধ কাজের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতির খবর মিলেনি। শুধু মাত্র উদ্বোধনকৃত জায়গায় নেমপ্লেটে ও নামমাত্র মাটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

    এই দিকে মাননীয় এমপি মহোদয় মেজর আবদুল মান্নান সাহেব কোন আপডেট না দেয়ায় তার উপর চরম ক্ষীপ্ত সাধারণ জনগণ।তার এমন নিরবতা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ মানুষ , সাধারণ জনগণ বলেন..আমাদের জীবন নিয়ে আর চিলিমিলি খেলবেন না। আমরা আগেও বলেছি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আমাদের আস্তা নেই। আমরা সব সময় চেয়েছি বাংলাদেশের গর্ব বাংলাদেশের অহংকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হোক। তাহলে রামগতি মানুষ আবার আশার আলো দেখতে পাবে। সেই আশার প্রদীপ হাতে নিয়ে রামগতি মানুষ হাজার বছর বেঁচে থাকুক, সেই কামনায়।

    মোঃ রায়হান চৌধুরী বলেন আপনি থাকার কথা রামগতি-কমলনগর আসনের মাথার তাজ হয়ে থাকার কথা, অথচ রামগতি-কমলনগর বাসির কাছে আপনার অবস্থান কোথায় আপনি নিজে একবার চিন্তা করে দেখুন! সন্তানের ব্যথা মা ছাড়া কখনো খালা বুঝবে না, পর কখনো আপন হয় না, তার জলন্ত প্রমাণ আমাদের এমপি মহোদয়, আপনি কখনো রামগতি- কমলনগর মানুষ কে নিয়ে ভাবেন নিজের মত করে। প্লিজ স্যার একটি বার চিন্তা করে দেখুন তো আপনাকে রামগতি কমলনগরের মানুষ কতটুকু পাশে পাইছে? একদিকে জোয়ারের পানি আরেকদিকে মহামারি, অন্যদিকে নদী ভাঙ্গা,আসলেই আমরা আপনার কাছে পর পরেই থেকে গেলাম আমাদের আপনি আপন করে নিতে পারলেন না। হতে পারলেন না আপনি রামগতি-কমলনগর বাসির প্রশংসাপত্র।

    মীর ইরাকা বলেন ঘুমিয়ে আছে মাননীয় এম পি মহোদয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড রামগতি কমলনগর উপজেলার মেঘনার ভাঙ্গন রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজের কোন অগ্রগতি নেই।

    মোঃ মাঈন উদ্দীন বলেন ২০০০ কোটি টাকা নদী বাঁধ এর জন্য পাশ করিয়ে সালমান এফ রহমান যদি সেনাবাহিনী দিয়ে নদীর বাঁধ করাতে পারে তাহলে ৩১০০ কোটি টাকা দিয়ে আমরা কেনো সেনাবাহিনী পেলাম না?মেজর মান্নান সাহেব আপনি নিজে একজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর হয়েও কেন ব্যার্থ হলেন নাকি রাগব বোয়ালদের পকেট ভারী করার জন্য এমন উদ্যেগ আপনার। আবদুল্যাহ আল মামুন সাহেবতো তার সময়ে সেনাবাহিনী দিয়ে ঠিকি তার কাজ উদ্বার করে নিয়েছেন। তার মানে আপনি একজন ব্যার্থ সাংসদ। আপনি থাকার চেয়ে এই আসন শূন্য ঘোষনা করাই উত্তম আজকে নদী ভাঙ্গার যে ছবিগুলা দেখতেছেন এগুলো রামগতি থেকে লক্ষীপুর জেলা সড়ক ছিলো আজকে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

    আর এক যুগ পর হয়তো লক্ষ্মীপুর ৪ আসন নামের এই এলাকাটা থাকবে না। লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর আসনের সংসদ সদস্য, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান বলেছেন, আমি আপনাদেরকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, এ বর্ষার আগেই রামগতি-কমলনগরের প্রধান সমস্যা নদী ভাঙ্গন বন্ধ হবে। আপনারা আমার উপর ভরসা রাখুন। রোববার (২৪ এপ্রিল) রামগতি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিকল্পধারা বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর আবদুল মান্নান বলেন।

    ইতিমধ্যে নদী ভাঙন রোদে কাজ শুরু হয়েছে। এই বর্ষার আগেই ব্লক ঢেলে নদী ভাঙন বন্ধ হবে। আমি এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এই বর্ষার আগে যদি রামগতি-কমলনগরের কোন জায়গায় নদী ভাঙ্গে,তাহলে আমাকে বলবেন। আমি সে ব্যবস্থা করেছি। আমি বিভিন্ন ভাবে মন্ত্রী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলাপ করেছি। সুতারাং এ নদী ভাঙন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমাদের জীবনের প্রশ্ন। রামগতি-কমলনগরের মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমরা নদী ভাঙন যে কোন মূল্যে বন্ধ করবো। এবং তা এ বর্ষার আগেই করা হবে।

    তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগতি-কমলনগরবাসীর প্রাণের দাবী পূরণের লক্ষ্যে এ নদী ভাঙ্গন রোধে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন। এ প্রকল্পটির কাজ হবে তিন বছরে। এটি ছিলো চার বছরের প্রকল্প। আমি অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করে এবং বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়ে মেয়াদ কমিয়ে এনেছি। সরকার কখনোই এক বছরে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড় দেয়না। তিন বছরে তিন ভাগে এ অর্থ ছাড় দেয়া হবে। প্রথম বরাদ্ধে ড্রাম্পিং হয়ে ভাঙ্গন রোধ হবে। দ্বিতীয় বরাদ্ধে বেড়ী বাঁধ হয়ে যাবে এবং তৃতীয় বরাদ্ধে বেড়ীর দু পাশে ব্লক বসানোসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হবে।

    তিনি আরো বলেন,রামগতি-কমলনগরের কিছু লোক আছে। যারা এলাকার উন্নয়ন চায় না,এরা দুষ্টু লোক। ধান্দা করে বেড়ায়। তারাই দেখবেন সহজে ফেসবুক সহ সোশাল মিডিয়াতে আজে বাজে কথা লিখে গুজব ছড়ায় ।এদের কথায় কান দিবেননা। যারা এসব করে তারা এলাকার শত্রু। এদের চিহ্নিত করুন। এরা কাজটা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। তারা বিশাল এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে লেখে। এসব টাউট বাটপারদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ