• Uncategorized

    প্রবাসে বাঙালি নারীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত-শেখ জেসমিন জাহিদ।

      প্রতিনিধি ৫ মে ২০২১ , ৫:০৯:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    গণমাধ্যম ডেস্ক:

    ‘মা’ – ছোট্ট একটা শব্দ, কিন্তু কি বিশাল তার পরিধি! সৃষ্টির সেই আদিলগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটা শুধু মমতার নয়, ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার৷ মার অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়৷ তিনি আমাদের গর্ভধারিনী জননী৷ জন্মদাত্রী হিসেবে আমার, আপনার, সকলের জীবনে মায়ের স্থান সবার উপরে৷

    তাই তাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর জন্য একটি বিশেষ দিনের হয়ত কোনো প্রয়োজন নেই৷ তারপরও আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারটিকে ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার সূত্রপাত ১৯১৪ সালের ৮ই মে থেকে৷এই দিনকে কেন্দ্র করে অনেকেই দেন বিশেষ উপহার, মায়েদের কি আলাদা করে কোনো উপহারের প্রয়োজন পড়ে? তারা যে সন্তানের মুখে শুধুমাত্র ‘মা’ ডাক শুনতে পেলেই জীবনের পরম উপহারটি পেয়ে যান৷

    তেমনি একজন সফল নারী ও মা এবং একজন স্ত্রী হিসেবে নিজে কে আবিষ্কার করেছেন, পাশাপাশি শতশত অসহায় মানুষের মুখের হাসি হলেন যে ভাবে শেখ জেসমিন জাহিদ।পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ চায় সুন্দর করে বাঁচতে চায়, প্রাণ খুলে হাসতে কিন্তু কয়জন পারে। যেমন কিছু ফুল ফুটে, কিছু ফুল ফুটেনা, তা হতে পারে প্রকৃতির কারণে বা সঠিক পরিচর্যার অবহেলায়। তেমনি আমাদের সমাজের কিছু নারী পরিবার বা সমাজ ব্যাবস্থাপনার কারনে বা সমাজের কিছু কুর্চিত চিন্তার মানুষের অতিকথনের ভয়ে নিজেকে ঘুছিয়ে রেখেছেন।

    আবার কেউ নিজের প্রতিভাকে সমাজ ও পরিবারের রীতিনীতির উর্ধ্বে নিজেকে নারী বা পুরুষ নয়, মানুষ ভেবে বিকশিত করেছেন নিজের চিন্তা শক্তিতে রুপান্তরিত করে, কাজ করে যাচ্ছেন নিরবে নির্ভিতে।
    আর যখন এই সমাজ বা সে কুর্চিত চিন্তার মানুষটি দেখে তার সফলতা উকি মারছে আকাশের কালো মেঘকে ভেদ করে, তখনই বাহ বাহ দিতে থাকেন তারা, নেপুলিন বলেছিলেন; আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।

    নারী আমাদের মা, বোন, স্ত্রী,কন্যা সব কটি চরিত্র ভালোবাসার হলেও পুরুষত্ব্যের মিছে ভরাই প্রতিনিয়ত আমরা কোন এক অদৃষ্যতে ভাসছি। পুরুষের পাশা পাশি আজ হাজারো নারী দিয়েছে এক সুন্দর পৃথিবী যা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার একটি কবিতায় উল্লেখ করেছেন, “বিশ্বের যা কিছু চির কল্যাণকর, অর্ধেক করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”।

    আর তারা কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে, তেমনি একজন নারী শেখ জেসমিন জাহিদ। শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও এর এক কবি লিখেছিল একটি বাস্তবমুখি কবিতা, আমি হয়তো সে কবিতার মানুষটা কে দেখছি বাস্তবে।স্বামী শেখ মোহাম্মদ জাহিদ জাব্বার শ্রীমঙ্গলের একজন সফল ব্যবসায়ী, সকলের পরিচিত শেখ বাড়ির সন্তান তিনি। শ্রীমঙ্গলের সু-পরিচিত ব্যবসায়ী শেখ এম এ জাব্বার উনার পিতা, পরিবারের অন্যরা মূলত ঢাকাতেই স্থায়ী বসবাস করেন।

    বর্তমানে তার বড় মেয়ে সেই দেশের আইনজীবি, দ্বিতীয় মেয়ে Madical Cardiff University তে অধ্যয়নরত এবং আরো এক ছেলে এবং মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করছেন। তারাও নিজ নিজ অবস্থানে সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। শেখ জেসমিন জাহিদ বতর্মানে প্রবাসে শিক্ষকতায় কর্মরত আছেন,পাশাপাশি Community Care and Wellbeing Service এ কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে Aurav Multicultural Group এর Cultural Secretary পদে এবং Bangladesh Association এর Executive Member পদে কাজ করছেন।

    ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের ভালোবাসাকে হৃদয়ে নিয়ে শেখ জেসমিন জাহিদ যখন প্রথম যুক্তরাজ্য যান, তখন সেটা হয়তো বাংলাদেশের যে কোন সাধারণ নারীর জন্য সহজ ছিল না। তার পিতা ছিলেন চায়ের রাজধানী বা চায়ের দেশ খ্যাত মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের পরিচিত চিকিৎসক আলহাজ্ব ডা. মোহাম্মদ আসাদ উদ্দিন। পিতার উপদেশ ও প্রতিটি কথাই শেখ জেসমিনের জীবনে মূলমন্ত্র হিসেবে আজো হৃদয়ে রয়েছে।মনের অজান্তেই প্রিয় জন্ম ভূমিতে আত্বীয়স্বজনকে রেখে পারি দেন প্রবাসে।

    পিতা সেই শৈশবেই বলেছিলেন- “জীবনে যখনই সুযোগ পাবে কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করবে”। বাবার এই কথা তিনি শুধু ধারণই করেননি সুদূর প্রবাসে গিয়ে যখন জীবনের প্রয়োজনে প্রয়োগ করতে শুরু করলেন তখন বুঝতে পারলেন- কতোটা মুল্যবান ছিলো তার পিতার এই আদর্শ বাণী। তার পিতাও ছিলেন ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত মানবতাবাদী চিকিৎসক, তিনি সে সময়ে বিদেশের অনেক সুখ বিলাসের হাতছানি কে পিছু ফেলে এদেশের চা বাগান অঞ্চলের সাধারণ অসহায় মানুষগুলোর জীবনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন,যা এখনো শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় স্মরণ করেন সে সব মানুষ।

    শেখ জেসমিন ১৯৯৩ সালে যখন কার্ডিফে যান তখন তিনি এদেশের প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও পাশ্চাত্য জীবনে নিজেকে উপযুক্ত করে তোলা ছিল যে কারো জন্য অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু তিনি মোটেও বিচলিত হননি, সেখানে গিয়েই বর্তমান জীবনের জন্য যুগোপযোগী প্রায় সকল শিক্ষাই অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে গ্রহণ করতে শুরু করলেন। প্রশিক্ষণ নিতে থাকলেন একের পর এক ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে এমনকি স্বেচ্ছাসেবা মূলক কর্মকাণ্ড সহ নার্সিং পর্যন্ত।

    জীবনের শুরুতে পাশ্চাত্যের সমাজ জীবনে ভলান্টিয়ার হিসেবে তিনি যে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছিলেন তা আজো তার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
    সুদূর প্রবাসে গিয়ে নিজের জীবনকে গতিশীল করার পাশাপাশি সংসার সন্তান সামলে গেছেন সমানতালে, সামাজিক সাংস্কৃতিক সকল কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকেছেন হৃদয় দিয়ে। এমনকি সে দেশে ২০১৮ সালে দীর্ঘ ১৩ মাইল হাফ ম্যারাথনেও অংশ নেন তিনি, Bawso থেকে যা ছিলো যেকোন নারীর জন্যই চ্যালেঞ্জিং-বিশেষত বাঙালি মেয়েদের জন্যতো বটেই, এ যেন স্বপ্নকে বাস্তবায়নে তার অবিরাম পথ চলা।

    তার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হিসেবে তিনি মনে করেন প্রাইমারি স্কুল ভলান্টিয়ার হিসেবে ১ শতাধিক স্কুলে নিজের কর্ম দক্ষতার অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়টিকে। সর্বপোরি তিনি একজন সফল নারী হিসেবে পরিবার সমাজ ও বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরষ্কার পাচ্ছেন কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নানা সংগঠন এবং সংস্থা থেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১৪ সালে Piller Production এর পক্ষ থেকে “মা আমার মা অরগানাইজেশন” এ অল রাউণ্ডার মায়ের স্বীকৃতি, যে সম্মান আর স্বীকৃতি তাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের ধার প্রান্তে, এ যেন এক উদ্দীপ্ত তরুণীর ছুটে চলা।

    একাধিক বার এই পুরষ্কার তিনি পরবর্তীতে লন্ডন বার্মিংহাম এবং জয়টেল এর পক্ষ থেকেও অর্জন করেন। যা তার জন্য ও বাংলার নারী সমাজের এক গৌরবময় মুহুর্ত ছিলো। এছাড়া পেয়েছেন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কার্ডিফ সম্মাননা পদক। জড়িত রয়েছেন বাওসো নারী নির্যাতন বিরোধী সংস্থা, কিরন গ্রুপ, কিংস মোকটন প্রাইমারি স্কুল কমিউনিটি কালচারাল গ্রুপ প্রেকটিসনাল হিসেবে, এবং লন্ডনে বসবাসরত সিলেটের শ্রীমঙ্গল বাসীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হৃদয়ে শ্রীমঙ্গল এর মহিলা সম্পাদিকা হিসেবে।

    আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সহ আরো বেশ কয়েকটি সংগঠনের হয়ে সামাজিক ও মানবিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নিরবে। সংগঠনের বাইরেও বিশ্বব্যাপী মহামারি কোভিড এর কারণে যারা কর্মহীন হয়েছে সে সময়ে স্বদেশী ও বিদেশের মাটিতে গৃহহীন অসহায় হয়ে পরা বয়স্কদের জন্য প্রায় প্রতিদিনই মানবিক সহায়তায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন তিনি।

    শুধু তাই নয় নিজ দেশ থেকে আসতে থাকে অসহায়ের ফোন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আবেদন নিজের স্বাধ্যের বাহিরে গিয়েও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মানবতার হাত।বলতে বড়ই ইচ্ছে হয়, এক গ্রামে একটি মেয়ে অনেক জ্ঞান তার,কত যে দুঃখির হাত ধরে নেন সুখের পাড়।কন্ঠ যেমন মিষ্টি তাহার মিষ্টি ব্যবহার,মিষ্টি কথায় তুষ্ট করে হৃদয় যে সবার।প্রতিবেশি সবাই বলে মেয়েটি বড়ই সৎ, দুঃখির বিপদে এগিয়ে আসে সাধ্য যতাযথ।

    এভাবে হাটি হাটি পা পা করে অনেক পথ পারি দিয়ে শেখ জেসমিন নিজেকে একজন আদর্শ ও মানবিক নারী হিসেবে মানুষের সেবায় বিলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।তিনি মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান প্রতিনিয়ত ও মনে করেন মানব সেবাই সর্বত্তম সেবা, সৃষ্টির সেবাতেই স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ।তাই সকলের সহযোগিতায় এভাবই এগিয়ে যেতে চান তিনি।

    লেখক: মোঃ আবেদ আহমেদ
    সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ