এম কামরুল হক-স্টাফ রিপোর্টারঃ
নিজের ভাঙ্গা মাটির ঘর মেরামত করার জন্য ভিক্ষা করে দুই বছর ধরে ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গান্ধিগাঁওয়ের মো. নাজিম উদ্দিন (৮০)। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়। বিষয়টি নাড়া দেয় ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনকে। গত ২১ এপ্রিল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কর্মহীন মানুষের সহায়তায় গঠিত ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ত্রাণ তহবিলে সেই টাকার পুরোটা দিয়ে দেন নাজিম।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে এলে দেশে ব্যাপক আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে এলে তাঁর নির্দেশে দানবীর নাজিম উদ্দিনকে ২৩ এপ্রিল সংবর্ধিত করে জেলা প্রশাসন। পরে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকারি জমিতে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৫ হাজার টাকা অনুদানও দেওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় শেরপুর জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গত তিন মাসে ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন নাজিম উদ্দিনকে খাসজমি বন্দোবস্তসহ সেই বাড়ি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে। আজ রবিবার সকালে নতুন বাড়িটি ও খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার দলিল নাজিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এসব আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।
যে জমিতে নাজিম থাকতেন সেটি ছিল খাসজমি। সেখানে তিন কাঠা (১৫ শতক) সরকারি খাস জমি তাঁর নামে বরাদ্দ করে বন্দোবস্ত দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া বাড়ির পাশেই গান্ধীগাঁও বাজারে পাকা দোকানঘর করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁকে আর ভিক্ষাবৃত্তি করতে না হয়।
গতকাল শনিবার গিয়ে দেখা যায়, তিন কক্ষের বিশাল পাকা বাড়ি। ওপরে টিনের চাল। সঙ্গে পাকা রান্নাঘর ও পৃথক ল্যাট্রিন। সারা জীবন ‘অন্ধকারে’ থাকা নাজিম উদ্দিন পেয়েছেন বিদ্যুৎ সংযোগও। তাঁর বাড়ি এখন আলোকিত। সব মিলিয়ে একটি পরিপাটি আবাসস্থল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন নাজিম উদ্দিন। নতুন বাড়িতে উঠে দারুণ খুশি নাজিম উদ্দিন ও তাঁর পরিবার।
দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদকে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো খুশির ওপরে খুশি। জীবনে এই রহম ঘরে থাহার কতা স্বপ্নেও ভাবি নাই। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় দান করি নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যহন এইডা আমারে দিছে, ভালাবাইসা আমগরে এই ঘর দিছে। আমার খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করছে। অহন আর ভিক্ষা করন লাগে না। দোয়া করি আল্লায় শেখ হাসিনারে বাঁচাই রাহুক। তিনি যেন দীর্ঘদিন আজত্ব (রাজত্ব) করবার পান।’
স্থানীয় লোকজন ভিক্ষুকের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দরদ দেখে অভিভূত। গান্ধিগাঁওয়ের মুদি দোকানি জহির মিয়া বলেন, ‘মাইনষের থাকলেও মানুষ কারোরে দেয় না। আমগর গেরামের নাজিম উদ্দিন চাচা ভিক্ষার জমানো টাকা দান কইরা এলাকার সম্মান বাড়াইছে, দেশের সম্মান বাড়াইছে। তাঁর জন্য আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিক্ষুককে ঘরবাড়ি বানাই দিয়া মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। দোয়া করি প্রধানমন্ত্রীরে আল্লায় আরো দেশের সেবা করার তৌফিক দেক।’
ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ বলেন, নাজিম উদ্দিনের আগে থেকেই বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ছিল। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁর পরিবারের প্রতি মাসের খাবার খরচও দেওয়া হচ্ছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর নাজিম উদ্দিনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.