• খুলনা বিভাগ

    পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

      প্রতিনিধি ২৩ মার্চ ২০২৩ , ৮:০৩:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

    আলোকিত ইসলাম ডেস্ক:

    আরবী বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। ১২টি মাসের শ্রেষ্ঠ মাস।
    ∆সাওম/রোজা এর আভিধানিক অর্থ হলো: বিরত থাকা বা ভস্ম করে দেয়া। ∆শরিয়তের পরিভাষায়:আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিয়তে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার,স্ত্রী সহবাস,নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকা।

    আসুন আমরা জেনে নেই সাওম/রোজা কি?
    ইসলাম ধর্মে মহান আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক,প্রাপ্ত বয়ষ্ক,জ্ঞান সম্পন্ন,নারী-পুরুষের উপর সাওম/রোজা ফরজ করেছেন।সাওম/রোজা হলো ইসলামের তৃতীয় রোকন/স্তম্ভ।

    রমজানের সাওম/রোজা ফরজ,যা পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।
    আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
    {يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام كما كتب علي الذين من قبلكم لعلكم تتقون }
    অর্থঃ হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর , যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পারো। ( সুরা বাকারাঃ ১৮৩)

    অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:
    {شهر رمضان الذي انزل فيه القران هدا للناس وبينات من الهدى والفرقان فمن شهد منكم الشهر فليصمه}
    অর্থঃরমজান মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে মানুষের পথপ্রদর্শনের জন্য স্পষ্ট দলিল হিসেবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে, সে যেন রোজা রাখে। (সুরা বাকারাঃ ১৮৫)

    ∆ হাদিসের আলোকে পবিত্র রমজান:
    হযরত ইবনু উমর রাঃবর্ণনা করেন:রাসুল সাঃ ইরশাদ করেন:
    بني الاسلام علي خمس :شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلاة وايتاء الزكاة والحج وصوم رمضان
    অর্থঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বস্তুর ওপর আল্লাহর একাত্ববাদ ও রাসূলের সাঃ রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত কায়েম করা,জাকাত আদায় করা, হজ্ব ও রমজানের রোজা পালন করা।( সহিহ বুখারিঃ৮,সহিহ মুসলিমঃ১৬,)

    ∆পবিত্র রমজানের ফজিলত :
    হাদীস নং -১
    ———————————
    হযরত আবু হুরাইরা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন:
    اذا دخل شهر رمضان فتحت ابواب السماء،وغلقت ابواب جهنم،وسلسلت الشياطین
    অর্থঃ যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানদের বেধেঁ ফেলা হয়।( বুখারি ১৮৯৯)

    হাদীস নং -২
    ———————————-
    হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন:
    اذا دخل رمضان فتحت ابواب الجنان كلها، فلم يغلق منها باب الي اخر الشهر ،وغلقت ابواب النار فلم يفتح منها باب الي اخر الشهر ،وسلسلت مردة الشياطين ،ولله عتقاه عند وقت كل فطر يعتقهم من النار
    অর্থঃ যখন রমজান মাস আসে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। এ মাসের শেষ পর্যন্ত একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসের শেষ পর্যন্ত জাহান্নামের একটি দরজাও খুলে দেওয়া হয় না। এ মাসে দুষ্ট শয়তানদের বেঁধে রাখা হয়।এবং আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা প্রত্যেক ইফতারের সময় অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দেন। (প্রগুক্তঃ৮১৩৯)

    হাদিস নং -৩
    ————————————
    হযরত আনাস রাঃ বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন:
    هذا رمضان قد جاء، تفتح فيه ابواب الجنة وتغلق فيه ابواب النار ، وتغلق فيه الشياطين، بعدا لمن ادرك رمضان ولم يغفرله ،اذا لم يغفر له فيه فمتي
    অর্থঃ এটি রমজান মাস,এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানদের বেঁধে রাখা হয়। হতভাগা সেই লোক, যে রমজান পেল; কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। যদি রমজানে না পারে তাহলে কখন পারবে? (আল মুজামুল আওসাতঃ৭৬২৭ তাবরানি)

    হাদিস নং-৪
    ———————————–
    হযরত সালমান ফারসী রাঃ বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ শাবানের শেষ তারিখে আমাদের উদ্দেশ্য করে একটি ভাষণ দেন।তাতে তিনি বলেন,হে লোক সকল, তোমাদের কাছে সম্মানিত ও বরকতময় একটি মাস এসে উপস্থিত হয়েছে।এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে,যে রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।আল্লাহ তা’আলা এ মাসে রোজা ফরজ করেছেনএবং তারাবিকে সুন্নাত করেছেন।কেউ এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে আল্লাহ তা’আলা তাকে একটি ফরজ ইবাদতের সাওয়াব প্রদান করবেন।এ মাসে কেউ একটি ফরজ আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা অন্য মাসে ৭০ টি ফরজ আদায়ের সাওয়াব দান করবেন।এ মাস ধৈর্যের।আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। ( সহিহ ইবনি খুজাইমাঃ১৮৮৭)

    #সম্মানিত পাঠকবৃন্ধ আমরা হাদিসের আলোকে রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানলাম।এখন আমরা রমজানের সাওম/রোজার ফজিলত সম্পর্কে জানবো ইনশাআল্লাহ।

    ∆∆রমজানের রোজার ফজিলত:
    হাদিস নং-১
    ————————————
    আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত,রাসুল সাঃ ইরশাদ করেন:
    كل عمل ابن ادم له،الاالصيام،فانه لي وانا اجزي به ،والصيام جنة،واذا كان يوم صوم احدكم فلا يرفث ولا يصخب ،فان سابه احد او قاتله ،فليقل اني امرؤ صائم
    অর্থঃ মানুষের প্রত্যেকটি আমল সে নিজের জন্য করে,রোজা ব্যতিত। মানুষ আমার জন্য রোজা রাখে এবং আমিই সেটার প্রতিদান প্রদান করবো।তোমাদের কেউ রোজা রাখলে সে যেন গালিগালাজ এবং হট্টগোল না করে।কেউ তাকে গালি দিলে কিংবা হত্যা করতে উদ্যত হলে সে যেন বলে আমি রোজাদার।( মুসনাদে আহমদ;২৩৫৬)

    হাদিস নং-২ ————————————
    হযরত আবু হুরাইরা রাঃ বর্ণনা করেন, আমি রাসূল সাঃকে বলতে শুনেছি,তিনি বলেছেন:
    كل عمل كفارة،والصوم لي، وانا اجزي به،
    অর্থঃপ্রত্যেক আমলের প্রতিদান দিয়ে দেওয়া হয়। রোজা ছাড়া কেননা, রোজা আমার জন্যই,আমিই তার প্রতিদান দীবো।( মুসনাদু আহমাদঃ৪২৫৬)

    হাদিস নং-৩
    ————————————
    হযরত আবু সায়িদ খুদরি রাঃ বর্ণনা করেন, রাসুল সাঃ ইরশাদ করেন:
    لخلوف فم الصيام اطيب عند الله من ریح المسك ،قال صام هذا من اجلي، وترك شهوته عن الطعام والشراب من اجلي،فالصوم لي وانا اجزي به
    অর্থঃ রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তা,আলা ইরশাদ করেন,বান্দা আমার জন্য রোজা রেখেছে।আমার কারণে সে তার জৈবিক চাহিদা ও খাবার ছেড়েছে।রোজা আমার জন্য আমিই সেটির প্রতিদান দিবো।( প্রাগুক্ত ১০০২৫)

    হাদিস নং-৪
    ———————————–
    হযরত জাবির রাঃ, বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন:
    الصيام جنة يستجن بها العبد من انار هو لي وانا اجزي به
    অর্থঃ রোজা হলো ঢালস্বরূপ,এর দ্বারা বান্দা জাহান্নাম থেকে বাঁচবে।আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,রোজা আমার জন্য আমিই এর প্রতিদান দিবো।

    ##সম্মানিত পাঠক বৃন্দ:
    পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারলাম যে,রমজান মাস কল্যাণ ও বরকতের বসন্তকাল। এজন্যই এ মাসে আমল দ্বারা মুমিনগণ জান্নাতে তাদের আবাসস্থল বানিয়ে নিবে।এছাড়াও তাওবা করে নিজের অতিতের গুনাহ আল্লাহর নিকট হতে মাফ করিয়ে নিবে।কারণ, রমজানেই এর সুবর্ণ সুযোগ। রমজান পেয়েও যদি কেউ সে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারে, নিজের গুনাহ মাফ করাতে না পারে, সেই হলো প্রকৃত হতভাগা।

    ∆∆∆∆∆
    হযরত কাব ইবনু উজরা রাঃ বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন:
    احضروا المنبر فحضرنا فلما ارتقي درجة قال: امين ،فلما ارتقي الدرجة الثانية قال: امين ،فلما ارتقي الدرجة الثالثة قال: امين ،فلما نزل قلنا : يا رسول الله لقد سمعنا منك اليوم شيئا ما كنا نسمعه قال : ان جبريل عليه الصلاةوالسلام عرض لي فقال : بعد لمن ادرك رمضان فلم يغفر له قلت : امين ،فلما رقيت الثانية قال : بعد لمن ذكرت عنده فلم يصلي عليك قلت: امين، فلما رقيت الثالثة قال : بعد لمن ادرك ابواه الكبرعنده او احدهما فلم يدخلاه الجنة قلت; امين
    অর্থঃ তোমরা মিম্বারের কাছে আসো, আমরা এলাম।তিনি যখন একটি সিঁড়িতে উঠলেন,তখন বললেন,আমিন।
    দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠার সময়ও বললেন, আমিন।
    তৃতীয় সিঁড়িতে উঠার সময়ও বললেন, আমিন।
    রাসুল সাঃ যখন মিম্বার থেকে নামলেন তখন আমরা বললাম,ইয়া রাসুলুল্লাহ সাঃ, আজকে আপনার থেকে এমন কিছু শুনেছি,যা আগে কখনো শুনিনি,তখন রাসূল সাঃ বললেন, জিবরাইল আঃ,আমার কাছে এসে বলেছেন,যে রমজান মাস পেয়েও তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে হতভাগা। তখন আমি বললাম আমিন,। দ্বিতীয় সিঁড়িতে জিবরাইল আঃবলেছেন, যার সামনে আমার নাম ( নবী কারীম সাঃ এর নাম) পাঠ করা হলো,কিন্তু সে আমার উপর দুরুদ পড়ল না,সে হতভাগা। তখন আমি বললাম আমিন।
    ” তৃতীয় সিঁড়িতে জিবরাইল আঃ বললেন” যে তার পিতা মাতাকে অথবা উভায়ের একজনকে বৃদ্ধা অবস্থায় পেল, কিন্তু জান্নাত অর্জন করতে পারলো নাসে হতভাগা। ” আমি বললাম আমিন। ( আল- মুসতাদরাক,৭২৫৬)

    লেখক:
    মুফতী আহমাদুল্লাহ হাবিবী

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ