• বরিশাল বিভাগ

    পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনে এবার আরোবেশি লাভ জনক অবস্থায় থাকবে, পায়রাও

      প্রতিনিধি ২৪ জুন ২০২২ , ১২:৩৪:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

    পদ্মাসেতু শুভ উদ্বোধন হতে না হতেই এবার সারা দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে এখনই ঝুঁকছে দক্ষিণ অঞ্চলের পায়রার দিকে। বন্দরের আশপাশ এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়তেনশুরু করেছে। এর পাশাপাশি খাদ্য ও মাছে উদ্বৃত্ত পটুয়াখালী থেকে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। দক্ষিণ অঞ্চলের অন্য সব জেলার মতো পটুয়াখালীবাসীর তরও যেন এখন আর সইছে না এসব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের। এই সেতুর এখানকার পর্যটনের পাশাপাশি মৎস্য, খাদ্যশস্য আর পায়রা সমুদ্রবন্দরের আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

    এদিকে চট্টগ্রাম আর মোংলার তুলনায় সড়কপথে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য আনা-নেয়া খুব সহজ হবে পায়রা পোর্ট এলাকা দিয়ে। সেই সাথে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে পায়রা প্রধান কর্তৃপক্ষবৃন্দরা। পাশাপাশি বন্দরসংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা হবে বলে তারা আশাবাদী।খাদ্যশস্য উৎপাদনে পটুয়াখালীর সুনাম আছে। দেশে উৎপাদিত মুগ ডালের অর্ধেকেরও বেশি হয় এখানে। দেড় হাজার কোটি টাকার তরমুজ আর সমপরিমাণ টাকার আমন ধান বিক্রি হয় এ জেলায়।

    পদ্মা সেতু চালু হলে এসব পণ্য ঢাকায় পরিবহন অনেক সহজ হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, জেলাভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদনে পটুয়াখালী বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। এক মৌসুমে চাল উৎপাদন ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯৮ টন। এ জেলায় মানুষের প্রয়োজন ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৫ টন। উদ্বৃত্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৩৩ টন চাল অন্য জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।

    চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৮৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টন মুগ ডাল উৎপন্ন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এর সিংহভাগই অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে।চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫০ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। সারা দেশে তরমুজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে পটুয়াখালী জেলা প্রথম অবস্থানে।মহিউদ্দিন বলেন, ‘চাল, মুগ ডাল আর তরমুজ সরবরাহের ক্ষেত্রে ফেরিঘাটে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতো বিগত বছরে। তরমুজ পচে যেত, দাগ পড়ে যেত।

    এতে ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। যে কারণে ঢাকাসহ অন্যান্য বাজারে পটুয়াখালীর তরমুজের মূল্য থাকত চড়া। ভোক্তারা অনেক বেশি মূল্য দিয়ে তরমুজ ক্রয় করতে হতো।‘কিন্তু এখন আর সেই দুশ্চিন্তা থাকছে না। মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে এ এলাকার তরমুজ ব্যবসাসহ সকল প্রকার রবিশস্য । ফলে প্রান্তিক চাষিরা ফসল বিক্রি করে তাদের ন্যায্যমূল্য নিতে পারবে।

    নতুন করে বলার কিছুই নেই দক্ষিণ অঞ্চলের মুগ ডাল দেশের বাইরে বিশেষ করে চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে বহুবছর ধরে এই রুটের ফেরির ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা ছিলেন অতিষ্ঠ। কিন্তু আগামী মৌসুমে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন এ অঞ্চলের কৃষকসহ ব্যবসায়ীরা।এব্যপারে পটুয়াখালীর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, জেলার সাগর ও নদনদী থেকে ২০২০-২০২১ সালে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৯ টন দেশি, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরা হয়েছে। জেলায় চাহিদা ৩৬ হাজার ৯৪৩ টন।

    বাকি ৮৭ হাজার ৩৬ টন মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। ‘ফেরিঘাটে ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় বরফ গলে মাছ নষ্ট হয়ে যেত। বিশেষ করে মাওয়া ঘাটে এ দুর্ভোগ ছিল চরমে। এখন এসব মাছ ঢাকাবাসীর হাতের নাগালে থাকবে বলে জানান। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে চলে যাবে এগুলো। এতে বজায় থাকবে প্রোটিনসহ মাছের গুণগত মান।’

    সারা দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে এখনই ঝুঁকছেন পায়রার দিকে। বন্দরের আশপাশ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার হিড়িক পড়েছে।পায়রা সমুদ্রবন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘পদ্মা সেতু আর পায়রা সমুদ্রবন্দর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বন্দরের অন্যতম শর্ত সড়ক সংযোগ, যেটি নিয়ে এতদিন জটিলতা ছিল। কিন্তু ২৫ তারিখের পর এই সমস্যা আর থাকছে না। এখানে পণ্য খালাসের জন্য ফোর লেনের সড়ক অনেক আগেই হয়েছে।

    ‘পায়রা হবে একটি আধুনিক বন্দর। ইতোমধ্যে মূল টার্মিনাল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। নাব্যতা সমস্যা দূর করতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজও চলছে। এই বন্দরে দেশি, বিদেশি অনেক জাহাজের আগমন ঘটবে। এতে আমাদের রাজস্ব আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে।’ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরের দূরত্বে সমান হলেও মোহাম্মদ সোয়াহেলের ধারণা, ব্যবসায়ীরা পায়রাকে বেছে নেবেন বন্দরের সুবিধা ও সড়কপথে যাতায়াত সহজতর বলে।

    সড়কে চাপ কম বলে চট্টগ্রামের চেয়ে দ্রুততর যাতায়াত করা যাবে এখানথেকে। এনিয়ে সোহায়েল আরো বলেন, পায়রা‘বন্দরকে কেন্দ্র করেই পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন এলাকায় ইপিজেড নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আর এটি চালু হলেই এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।.

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ