• Uncategorized

    পটুয়াখালীতে জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তবিত কমিটি নিয়ে চলছে বিতর্কের ঝড়!

      প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২০ , ৭:৫৪:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    ডেক্স রিপোর্টারঃ

    পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বইছে বিতর্কের ঝড়। এই কিমিটিতে অনেক ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা-কর্মীরা জায়গা পায়নি। অথচ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদসহ সদস্য করা হয়েছে যারা আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনের সঙ্গে কোনোদিন জড়িত ছিলেন না। এমনকি দলের কর্মকাণ্ডেও কোনো ধরণের ভূমিকা নেই। ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে অন্তত ২৫টি পদে ঠিকাদারসহ বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শের ব্যক্তিকেও কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগ করে এটিকে ঠিকাদার কমিটি আখ্যা দিয়েছেন সংক্ষুব্দ ও সাধারণ নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে এই পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে সংক্ষুব্দ অনেকেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্দ দলের বঞ্চিত নেতাকর্মীসহ প্রবীণ রাজনীতিকরা। কর্মী-সমর্থকদের মাঝেও হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

    গত বছরের ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে কাজী আলমগীর হোসেন ও আব্দুল মান্নানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু এতে নেতা-কর্মীদের সমর্থনা বা মতামত নেওয়া হয়নি। প্রস্তাবিত এই কমিটিতে ঢাকায় বসবাসকারী একটি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ফিরোজ আলমকে (জাপানী ফিরোজ) দেওয়া হয়েছে সহসভাপতির পদ। ক্যাসিনোকাণ্ডে বহিস্কৃত কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা প্রিন্স মহব্বত, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানের ভগ্নিপতির যোগ্যতায় এক সময়ের বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম সালাম, ঢাকার ব্যবসায়ী গাজী মহিবুর রহমান বাচ্চু ও বিএনপি পরিবারের সদস্য ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমেদকে করা হয়েছে সদস্য। তার বড় ভাই ঠিকাদার আজদের স্ত্রী জেলা জামায়াতের রোকন এবং তার চাচাত ভাই মনির হোসেন বিএনপির নেতা।

    ’৭৫ পরবর্তী জাগো দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বনানীর কাঞ্চন মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম চান মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি কোনো দিনই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমনকি তার আপন ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম লিটন জেলা যুবদলের সভাপতি। ষাটের দশকে তুখোর ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে মামলা-হামলার শিকার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রশিদ বাদলের মেয়ে মাকসুদা লাইজু দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকলেও তাকেও কোনো পদ দেওয়া হয়নি। অথচ কখনও দলীয় কর্মসূচিতে না থাকলেও বিশেষ কারণে মারুফা আক্তার মণিকে দেওয়া হয়েছে মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের পদ।

    বাউফলের  রাজনীতিতে ডিগবাজি খাওয়া এস এম ইউসুফ ও এডভোকেট ওবায়দুল রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা না থাকলেও তারা পদ পেয়েছেন। প্রস্তাবিত এই কমিটিতে ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনকে সদস্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা এবং বিএনপি -জামায়াত জোট সরকারের সময় এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডে দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে ঠিকাদির নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ঠিকাদার রিয়াজ মৃর্ধা, বালি মিজান, মনিরুজ্জামান লিটু, মিজানুর রহমান, আনিসুর রহমান, রাহানুল হক (নাক সুমন), কামাল ও আল আমিন শিকদারকে জেলা কমিটির সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে আছে চরম নেশায় আসক্ত থাকার অভিযোগও।

    অথচ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা এবং দুর্দিনের কাণ্ডারি ত্যাগী নেতা-কর্মীদের প্রস্তাবিত জেলা কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬৯ সালের পটুয়াখালী সরকারী কলেজের ভিপি (প্রথম) ও পরবর্তীতে জেলা কমিটিতে থেকে রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা আগের কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট নুরুল হক তালুকদার, ১৯৬৪ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদে ছাত্রলীগের ভিপি পদে নির্বাচন করা থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগ ও বিপদে আপদে সহায়তাকারী সক্রিয় কর্মী আমিনুল হক আহসান, শহরের আদালত পাড়ার প্রথম আওয়ামী লীগ কর্মী শিকদার মতিয়ার, ৭৫ পরবর্তীতে যাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালিত হত সেই পরিবারের সদস্য ও ছাত্রলীগ, ওই সময়ে সংগ্রামে ২-১জন নারী কর্মীদের মধ্যে সক্রিয় জেলা কমিটির সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট বিভা রাণী সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা দুলাল, ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য তরুণ কুমার কুণ্ড এবং ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও তার ক্যাডার বাহিনীর অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিগৃহের শিকার দলের সক্রিয় কর্মী রুস্তুম আলী মোল্লাসহ অনেককে জেলা কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি।

    মির্জাগঞ্জের রুস্তুম মোল্লা ও তার স্ত্রী নাসিমা জাহান ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী আলতাফ চৌধুরী বাহিনীর হাতে নির্যাতিত ও আহত আওয়ামী লীগ দলীয় কর্মীদের নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়ে চিকিৎসা সেবা, আইনী সহায়তাসহ ও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও আর্থিক সহযোগিতা অব্যহাত রেখেছেন।  ফলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর রোষাণলে পড়ে ব্যবসায়ে ক্ষতিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের স্বীকার হন রুস্তুম মোল্লা, যা দলীয়ভাবে স্বীকৃত। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কথা দিয়েও তাকে কমিটিতে রাখেননি।

    অভিযোগ উঠেছে, ১০ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে বিতর্কিতদের এসব পদ-পদবী বিক্রি করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান নিজেদের বলয়ের লোকদের কমিটিতে ঢুকিয়েছেন। এ ঘটনায় বঞ্চিত নেতাকর্মীসহ দলীয় সিনিয়র নেতা ও সাধারণ কর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা ওইসব নিস্ক্রিয়, অরাজানৈতিক, ঠিকাদার, নেশাখোর ও বিতর্কিতদের বাদি দিয়ে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের কমিটিতে পদ-পদবী দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

    জানা গেছে, কাজী আলমগীর হোসেন জেলা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর গত এক বছর ধরে শহরের দলীয় কার্যালয়ে তেমন একটা যান না। তিনি তার বাসার কাছে সবুজবাগে বটতলায় একটি ব্যক্তিগত অফিস খুলেছেন। সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে ‘সভাপতি মহোদয়ের কার্যালয়’। এটা এখন ‘বটতলা অফিস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই বটতলা অফিসে বসেই তিনি অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে তদবির, শালিস ও কমিটি বাণিজ্য চালাচ্ছেন।

    আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কাজী আলমগীর অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে চরম বিতর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথম আনন্দ মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে কাজী আলমগীরের বিরুদ্ধে। এছাড়া ‘৭৯ এর নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন সুলতান মিয়ার পক্ষে কাজ করা ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাত্তারের পক্ষে লতিফ স্কুলে সিল মারার বিষয়টি নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। ’৭৫ থেকে ’৮৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী রাহনীতিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তিনি সিনেমা হলের টিকেট বিক্রি ও মাছের ব্যবসা করতেন বলেও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।

    আর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে রয়েছে জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সদস্য প্রয়াত এডভোকেট অমিত মকুমার বাড়ৈর পুরান বাজারে বসত বাড়ির প্রায় ৭ শতাংশ জায়গা জবর দখলের অভিযোগ রয়েছে। তিনি ঘুডু মান্নান ও ভিপি মান্নান নামে পরিচিত। তার শশুড় শান্তি কমিটির অন্যতম নেতা মোন্তাজ বিহারী মুক্তিযুদ্ধের সময় শহরের পুরান বাজারে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আব্দুর রাজ্জাকের বাকশালে যোগ দেন আব্দুল মান্নান। বিদেশ থেকে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত কমিটিতে টাকার বিনিময়ে কাউকে পদায়ন করা হয়নি। এ কমিটিতে বিএনপি-জামায়াতের  কোন ব্যক্তিকেও নেওয়া হয়নি। সবার বিষয় খোঁজখবর নিয়েই কমিটিতে পদ-পদবী দিয়েছি।

    তবে, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, কমিটিতে পদ-পদবী দেওয়ার জন্য যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকেন, সেটা আমার জানা নেই। প্রমাণ পেলে তার ব্যবস্থা নেব। আর জামায়াত -বিএনপির কোন ব্যক্তিকে পদে নেওয়া হয়নি। যারা নিষ্ক্রিয় ছিল তারা বাদ পড়েছেন। আমরা প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা খোঁজখবর নিয়ে কমিটি অনুমোদন দেবেন বলে জানাযায়।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ