প্রতিনিধি ২৯ জুন ২০২২ , ১:০৮:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ
চলনবিলের ঐতিহ্য নৌকা। বর্ষাকালে চলনবিল এলাকার মানুষের পারাপারের একমাত্র বাহন নৌকা। চলনবিলে প্রবাদ আছে ‘বছরে ১২ মাসের ৪ মাস নায়ে, আর ৮ মাস পায়ে।’ অর্থাৎ বিল এলাকার মানুষের শুষ্ক মৌসুমের ৮ মাস পায়ে হেঁটে এবং বর্ষা মৌসুমের ৪ মাস নৌকায় চলাচল করতে হয়। তাই বর্ষা সামনে রেখে নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে চলনবিল এলাকায়। জানা গেছে, চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, গুরুদাসপুর ও আত্রাই উপজেলায় বসবাসরত বেশিরভাগ গ্রামের মানুষ বর্ষায় ৩ থেকে ৫ মাস, বা নিচু এলাকায় এর চেয়েও র্দীঘ সময় ধরে পানিবন্দি থাকে।
এসব পানিবন্দি মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। তাই বর্ষা এলেই এলাকায় নৌকার কদর বেড়ে যায়, সঙ্গে কদর বাড়ে নৌকা তৈরির কারিগরদেরও। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই শুরু হয় নতুন নৌকা তৈরি আর পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ। সম্প্রতি চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারিগররা নতুন নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামতে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন।চলনবিল এলাকায় সাধারণত শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা ও বাইচের এই ৩ ধরনের নৌকা তৈরি হয়।তবে বিল এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মালবাহী এবং যাত্রীবাহী নৌকার কদর বেশি।
এ ছাড়াও ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা মাছ ধরার ও বাইচের নৌকা তৈরি করছে। বর্ষা মৌসুমে চলনবিল অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নৌকা চালকদের আঞ্চলিক ভাষায় মাঝি বলা হয়। মাঝিরা নিজের আবার অন্যের নৌকা চুক্তিভিত্তিক চালিয়ে অর্থ উর্পাজন করেন।
হান্ডিয়াল মিস্ত্রিরিপাড়ার নৌকা তৈরির কারিগর শ্রী শংকর সুত্রধর বলেন, আমি ছোট থেকেই নৌকা তৈরির কাছে জড়িত। আগে ভালো ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হতো। এখন শিমুল, আম, কড়ই, বাবলা দিয়েই বেশি নৌকা তৈরি করা হয়। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল, আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে, যা নৌকাকে দীর্ঘদিন টেকসই রাখে।
বাউনগ্রামের মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর বন্যার প্রাদুর্ভাব বেশি বলে মনে হচ্ছে। তাই হাট থেকে ডিঙি নৌকা কিনেছি। পানি এসে গেছে, যেভাবে পানি বাড়ছে, নৌকা ছাড়া কোন উপায় নেই। ১০-১২ হাত নৌকা তৈরি করতে খরচ হয় আড়াই হাজার টাকা। প্রতিটি নৌকা ৫০০-৬০০ টাকা লাভে বিক্রি করা হয়। নৌকা তৈরির কারিগরা বলেন, ১২-১৫ হাত একটি নৌকা তৈরি করতে খরচ হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। ১০-১২ হাত নৌকা তৈরি করতে খরচ হয় আড়াই হাজার টাকা। প্রতিটি নৌকা ৩০০–৪০০ টাকা লাভে বিক্রি করা হয়।
নৌকার মাঝির মোঃ মাসুম হোসেন বলেন, একসময় ডিঙি নৌকা বেশি ব্যবহার হতো। এখন মানুষের প্রয়োজনে বড় বড় নৌকা তৈরি হচ্ছে। নৌকা তৈরিতে বিশেষ কোনো কাঠ ব্যবহার হয় না। তবে সাধারণত নৌকার ক্ষেত্রে কড়ই, হিজল, মেহগনি কাঠ বেশি ব্যবহার হয়। কেউ কেউ ছোট নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে কাঁঠাল গাছের কাঠও ব্যবহার করে থাকে। নৌকা তৈরিতে আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক লাগে একটি ডিঙি নৌকা তৈরি করতে। ১২ হাতের নৌকা তৈরিতে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ পড়ে। নৌকা তৈরিতেই খরচ কম। আবার তৈরি করা নৌকা কিনতে গেলে দাম বেশি পড়ে। তাই নিজেই একটা নৌকা তৈরি করলাম।
সংবাদদাতা