নওগাঁ জেলায় ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে আলতাদীঘি (Alta Dighi) অবস্থিত। ধামইরহাট হতে গ্রামের আধা পাকা রাস্তা ধরে যতই এগিয়ে যাওয়া যায় ততই গাছগাছালি ঘেরা সবুজ প্রকৃতির মুগ্ধতাকে উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারিভাবে সংরক্ষিত শালবন এবং লাল মাটির পাহাড়ি এলাকার মতো বনের উঁচু-নিচু রাস্তায় হাঁটলে গ্রাম বাংলার বিচিত্র রূপের সৌন্দর্য আহরণ করতে পারবে পর্যটকরা।

আলতাদীঘির নামানুসারে আলতাদীঘি গ্রামের নামকরণ করা হয়। প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪০০ মিটার প্রস্থের প্রাচীন দীঘিটিকে বৌদ্ধ যুগের কীর্তি হিসাবে মনে করা হয়। কারণ দীঘির কাছেই পাল শাসনামলে নির্মিত জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত । এই বিহারে বিষ্ণু, শিব এবং কষ্টিপাথরের কারুকার্যখচিত নারীর মুখমণ্ডলের প্রতিকৃতি রক্ষিত আছে। সুবিশাল আলতাদীঘিতে আছে প্রায় ৫৫ প্রজাতির দেশীয় মাছ এবং ১৪ হাজার প্রজাতির বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বসবাস।

আলতাদীঘির উত্তর পাড় ঘেঁষে রয়েছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত। কাঁটাতারের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে বিএসএফের কর্মতৎপরতা দেখা যায়। শীতকালে আলতাদীঘিতে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এছাড়া দাঁড়টানা নৌকায় চাইলে নৌভ্রমণও করা যায়। আলতাদীঘি সংলগ্ন গ্রামের বেশিরভাগ ঘরগুলো মাটির তৈরী। একতলা, দোতলা ঘর দেখতে দেখতে গ্রামের ভেতরটা ঘুরে যেতে পারেন। গ্রামের আদিবাসী গোষ্ঠীর জীবনধারা আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। বর্তমানে আলতাদীঘিকে কেন্দ্র করে আলতাদিঘি জাতীয় উদ্যান (Altadighi National Park) গড়ে তোলা হয়েছে।

আলতাদীঘি নামকরণের ইতিহাস
হাজার বছর আগে বটু রাজা এই এলাকা শাসন করতেন। একদিন রানী একটি দীঘি খুঁড়ে দেয়ার জন্য রাজার কাছে আবদার করলেন। তখন রাজা বলেন, তুমি হাঁটতে শুরু কর, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ফেটে রক্ত বের না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটবে। আর যেখানে গিয়ে তুমি থামবে সেটাই হবে দীঘির সীমানা। রানী হাঁটা শুরু করলেন কিন্তু তার হাঁটা আর শেষ হয় না। রাজা চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং শেষে কৌশলে সৈন্য দিয়ে রানীর পায়ে আলতা লাগিয়ে রানীর পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে বলে উঠেন। সেই পর্যন্তই দীঘি খনন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই আলতাদীঘি আজো আবহমান বাংলার সৌন্দর্য ও সরলতাকে ধারণ করে চলছে।