• ময়মনসিংহ বিভাগ

    ত্রিশাল উপজেলা ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ১৯ বছর পর আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

      প্রতিনিধি ২০ জুলাই ২০২২ , ৪:৩৪:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    দীর্ঘ ১৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। আগামী ২১ ও ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ত্রিশাল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে দলের শীর্ষ পদ পেতে দৌঁড় ঝাপ শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এই প্রতিযোগিতায় থেমে নেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতরাও। স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজাকার পারিবারের আত্মীয়ও পদ পেতে দৌঁড়-ঝাপ শুরু করেছেন।

    তবে অভিযুক্তরা তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তাদের মন্তব্য, প্রার্থীরা একে অপরের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানিয়েছেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কেউ পদ-পদবী পাবে না। ত্রিশাল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা কারীরা এখন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

    জানা গেছে, ত্রিশাল সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ পাওয়ার দৌড়ে আছেন সাংসদ হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, জেলা আওয়াম লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ সরকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ও পৌরসভার মেয়র আনিছুজ্জামান আনিছ প্রমুখ।অভিযোগ রয়েছে নবী নেওয়াজ সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিপক্ষে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন। এ অভিযোগের বিষয়ে নবী নেওয়াজ সরকার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি।

    আমি এ দলের জন্য সবকিছু করতে পারি। আর স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থীও যিনি ছিলেন তিনিও আওয়ামী লীগের লোক। আনারস প্রার্থীর নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন স্বীকার করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়কালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নিয়ে আওয়ামী লীগ এতোটা হার্ডলাইনে ছিলো না। তবে এখন যে কঠিন নির্দেশনা দেয়া আছে যদি এমন নির্দেশনা থাকতো তবে আমি ওই প্রার্থীর প্রচারণায় যেতাম না।

    অপরদিকে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম পরিবহন শ্রমিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেখানকার নানা অভিযোগ ও সাংগঠনিক অদক্ষতার কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগ তার ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করে এবং জেলা আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সভায় তা গৃহীত হলে তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মন্তব্য জানতে তার মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

    এছাড়া ত্রিশালে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ইকবাল হোসেন, জিয়াউল হক সবুজ, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল সরকার, এ কে এম মাহাবুল আলম পারভেজ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মন্ডল প্রার্থীতার এ দৌঁড়ে আছেন।

    অভিযোগ রয়েছে, জিয়াউল হক সবুজের শ্বশুর পলাতক যুদ্ধাপরাধী ত্রিশালের কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার আদিল সরকার। তিনি তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী এবং পলাতক। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরোধিতা করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন করার অভিযোগ রয়েছে সবুজের বিরুদ্ধে।

    এসব অভিযোগের বিষয়ে জিয়াউল হক সবুজ বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের পদ পেয়ে দায়িত্ব পালন করেছি।

    তার শ্বশুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন বিয়ে করি তখন এ বিষটি আমি জানতাম না। যখন জানতে পেরেছি এরপর থেকে আমার শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে আমি কোনো সম্পর্ক রাখিনি। এছাড়া আমার বাবা একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। যদি জানতাম তাহলে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে এ সম্পর্কে যেতাম না। আমি ছাত্র থেকে রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী।

    এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আব্দুস ছাত্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বুলবুল ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক দুলাল ভূঞা, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. তারিকুল হাসান তারেক, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এ.কে.এম. হারুন-অর-রশীদ এবং ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাফির উদ্দিন আহমেদ।

    ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস ছাত্তারের ভাতিজা উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের সঙ্গে দলীয় রাজনীতিতে কোন্দল আছে। তাদের এই দ্বন্দ্বের কারণে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়। যদিও ওনারা এ বিষটি অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই।

    ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান সুমন গত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতার কারণে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার হন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ