• আইন ও আদালত

    তানোরে জব্দ সার নিয়ে ইঁদুর-বেড়াল খেলা

      প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:০২:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ

    রাজশাহীর তানোরে কতিপয় কৃষি কর্মকর্তার যোগসাজশে পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) কৃষ্ণপুর থেকে চৌবাড়িয়া এলাকায় সার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ১৯ ডিসেম্বর সোমবার সার পাচারের সময় স্থানীয় জনতা দুটি ভুটভুটিতে ১০০ বস্তা সার আটক করেছে। পরে অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম এসব সার জব্দ করে প্রাণপুর আমপুকুরপাড়া নুরুল ইসলামের বাড়ির উঠানে জমা রেখেছেন। কিন্ত্ত স্থানীয় কৃষি বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ঘটনা ধাঁমাচাপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে জব্দ সার নিয়ে রীতিমতো ইঁদুর-বেড়াল খেলা শুরু করেছেন বলেও কৃষক মহল মনে করছে।কারণ হিসেবে তারা বলছে, জব্দ সারের বিষয়ে এখানো কোনো মামলা বা জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং সাধারণ কৃষকের সার বলে ঘটনা ধাঁমাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

    স্থানীয়রা জানান, প্রাণপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম ও কৃষ্ণপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক চোরাপথে বিভিন্ন এলাকা থেকে সার এনে মজুদ করে অতিরিক্ত দামে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। এখানো  কৃষ্ণপুর কলেজ সংলগ্ন তাদের গুদামে বিপুল পরিমাণ সার মজুদ রয়েছে। কৃষকেরা একাধিকবার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে অবগত করেন। কিন্ত্ত রহস্যজনক কারণে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। গত রোববার ভুটভুটি করে বিপুল পরিমাণ সার চৌবাড়িয়া পাচার হয় বলেও কৃষকেরা নিশ্চিত হয়েও  করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে কৃষ্ণপুর থেকে ক্রয় রশিদ ব্যতিত দুটি ভুটভুটি করে চোরাপথে সার নিয়ে মান্দার চৌবাড়িয়া যাচ্ছিল। প্রাণপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে স্থানীয়রা এসব ভুটভুটি থামিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের খবর দেন। খবর পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা এসব সারের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে চাইলে বখাটে রবিউল ইসলাম লাঠি হাতে মারমূখি হয়ে তেড়ে আসে।

    তিনি বলেন, মাদারীপুর মাঠে তার আলুর প্রজেক্ট আছে সেখানে সার পাঠানো হচ্ছে এবং এসব সার মুন্ডুমালা পৌরসভার এদদাদ এর দোকান থেকে কিনেছেন। তবে তার কাছে সার বিক্রির কথা এমদাদ অস্বীকার করেছেন। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সার বিপনন নীতিমালা অনুযায়ী এক এলাকার সার অন্য এলাকায় নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। স্থানীয়রা জানান, রবিউল কোন ব্যবসায়ী না হয়েও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা  রবিউলের যোগসাজশে সার পাচার করছে। তারা বলেন, রবিউল গভীর নলকুপের অপারেটর। ভুটভুটি চালকেরা জানান, তাদেরকে রবিউল সার লোড দিয়ে চৌবাড়িয়া যেতে বলেছে এর বেশি কিছু তারা বলতে পারবেন না। এসময় মোজাম্মেল এসে বলেন, তিনি  রবিউলের গভীর নলকুপে প্রজেক্ট করছেন এসব সার মাদারিপুর প্রজেক্টে যাচ্ছিল। এসব সার চৌবাড়িয়া  যাচ্ছিল প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, অনেক সারের প্রয়োজন, তাদেরকে আমি দিব, তারা আমাকে দিবেন। তিনি বলেন, বাড়ীতে এখানো প্রায়  ৫শ’  বস্তা সার আছে  বিএস রবিউল  ইসলাম তা জানেন।

    তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর তাদের কোনো আলুর প্রজেক্ট নাই। তারা এসব কথা বলে সার পাচার করে। এবিষয়ে পাঁচন্দর ইউপির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, গত সোমবারে গিয়ে সার জব্দ ও কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, কি ব্যবস্থা নিবে তারাই ভালো বলতে পারবেন। এদিকে ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  সাইফুল্লাহ আহম্মেদের কাছে আটক সারের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, মোজাম্মেল নাকি মাদারিপুরে আলুর প্রজেক্ট করেছে এজন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। মোজাম্মেলের মাদারিপুরে আলুর কোন প্রজেক্ট নাই, তাহলে কেন ব্যবস্থা হয়নি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু সারের কোনো ক্রয় রশিদ নাই সেহুতু সারগুলো মোজাম্মেলের না অপারেটর রবিউলের তিনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাইলে তিনি দেখছি বলে এড়িয়ে যান। এবিষয়ে রাজশাহী উপ-পরিচালক মাজদার হোসেন জানান,

    তিনি উপজেলা  কৃষি কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এতো সময় লাগার কথা না, সোমবারেই ব্যবস্থা নিবে বলে তাকে অবহিত করা হয়।  এখানো কেনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বেনজির আলমের অফিসের টেলিফোনে ফোন দেওয়া হলে রিসিভ করে বলেন, সার পাচার করার কোন সুযোগ নেই, আমি জেলা অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলছি,কিংবা আপনি অবহিত করেন, সার মন্ত্রনালয়ের মিটিংয়ে আছে, আমি স্যারের পিএ বলছিলাম। প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর মাসে তানোর পৌর এলাকার তালন্দ বাজারের বালাইনাশক ব্যবসায়ী মনিরুলের দোকানে সার পেয়ে কোন মেমো দেখাতে না পারার অপরাধে ১ লাখ ২৬ হাজার, একই কারনে টিপুর ১০ হাজার ও গণেশের ১৫ হাজার এবং কলমা ইউপির সার ব্যবসায়ী নজরুলের পাচারে দায়ে এক লাখ টাকা, ধানতৈড় মোড়ের খুচরা সার ব্যবসায়ী জসিম ট্রাকে করে সার নামানোর দায়ে ১৫ হাজার  টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তাহলে মোজাম্মেল ও রবিউলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেনো গড়ি-মসি ?  না কি ? নেপথ্যে  অন্য কিছু রয়েছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ