• আইন ও আদালত

    তানোরে গ্রাম্য সালিসে তালাক পিতৃহারা ৮ বছরের শিশু

      প্রতিনিধি ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৫:৩৬:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

    মমিনুল ইসলাম মুন বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি :

    রাজশাহীর তানোরের কলমা ইউনিয়নের (ইউপি) আলোচিত চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরীর বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্য ও সংসার ভাঙার অভিযোগ উঠেছে।
    এদিকে এখবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যর পাশাপাশি তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে একজন ইউপি চেয়ারম্যান তড়িঘড়ি সালিস বৈঠক করে, মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক তরফা তালাক দিয়ে একটি সংসার ভাঙতে পারে কি না ?
    জানা গেছে, উপজেলার কলমা ইউপির বহাড়া গ্রামের জনৈক ব্যক্তির পুত্র রাজিব হোসেনের সঙ্গে নাচোল উপজেলার জনৈক ব্যক্তির কন্যার প্রায় ১০ বছর পুর্বে একটি মোটরসাইকেল ও এক লাখ সাড়ে ৫ হাজার টাকা দেনমোহরে বিবাহ হয়।তাদের ঘরে ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। স্থানীয় বে-সরকারি একটি স্কুলে রাজিবের স্ত্রী শিক্ষকতা করেন।
    প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও অধ্যক্ষের ভাগ্নে শাহাদাৎ আলী স্কুলের কিছু কাগজপত্র নিতে সহকর্মী ওই নারী শিক্ষকের বাড়িতে যায়। কিন্ত্ত পুর্বে থেকে
    ওঁত পেতে থাকা কয়েক যুবক বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে হৈচৈ শুরু করলে ভয়ে সে প্রাচীর টপকে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় ওই নারী শিক্ষকের সঙ্গে পরোকিয়ার অভিযোগে শাহাদাৎ আলীকে আটক করে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরী ও ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান ওই রাতেই বহাড়া গ্রামে রাজিব হোসেনের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসায়। সালিশ বৈঠকে রাজিবের স্ত্রী ও শাহাদাৎ আলীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং শাহাদাৎ আলীর এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে সেই টাকা রাজিবের হাতে তুলে দেয়া হয় ও নারী শিক্ষকের শাস্তিস্বরুপ বিয়েতে তিনি রাজিবকে যে মোটরসাইকেল দিয়েছেন তা না দাবি করানো হয়। অপরদিকে জরিমানার এক লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্য এক লাখ সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে রাজিবের স্ত্রীকে তালাক দেয়া হয় এবং বাকি টাকা সমাজ খরচ, পরিষদ খরচ, সালিস খরচ ও ক্ষতি পুরুণসহ বিবিধখাতে খরচ দেখানো হয়েছে। সচেতন মহলের ভাষ্য অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত না হয়ে, শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তীতে জরিমানার টাকায়, তালাক দিয়ে একটা সংসার ভাঙা, এটা কি একটা দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির কাজ, তিনি কি এমন বিচার করতে বা
    মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক তরফা তালাকের রায় দিয়ে সংসার ভাঙতে পারেন ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান,জীবনে অনেক বিচার সালিশ করেছি দেখেছি। কিন্তু এটা বিচার ছিলনা এটা ছিল প্রহসন। কেন না ঘর ভাঙ্গা সহজ, কিন্তু ঘর জোড়ানো কঠিন। তিনি বলেন, কলমার ইতিহাসে এমন লজ্জাজনক ঘটনা এর আগে ঘটেনি, চেয়ারম্যানের চোখ শুধু টাকার দিকে, কোনো কিছু হলেই বিচার করে জরিমানা আদায় নিয়মে পরিনত হয়েছে। তিনি বলেন, উভয়ই দোষ অস্বীকার করেছে, তারা যদি অপরাধী হয় তাহলে তাদের আইনের হাতে দেয়া যেতো, সংসার ভাঙা কেমন বিচার ?
    অসমর্থিত সুত্র জানায়, বিনা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ঘর ভাঙার বেদনা সহ্য করতে না পেরে ওই নারী বাবার বাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এখন পশ্ন হলো সালিসের কারণে যদি কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে তার দায় কি সালিসদারগণ নিবেন, যদি না নেন তাহলে বিচারের নামে অবিচার করলেন কেন ? ৮ বছর বয়সের অবুঝ কন্যা সন্তানকে পিতৃহারা করা হলো কার স্বার্থে ?
    প্রসঙ্গত, এর আগেও এই চেয়ারম্যান ও মেম্বার ইউপির কেওয়াপাড়া গ্রামে যৌনহয়রানির অভিযোগে সালিসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে মাত্র ২০ হাজার টাকা ভিকটিমকে দিয়ে বাঁকি টাকা নয়ছয় করেছে বলেও আলোচনা রয়েছে। এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করেও ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুন নবী বাবু চৌধুরীর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান সালিসের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামাজিক বিচার-সালিস তারা করতে পারেন, জনগণের অনুরোধে তারা এই সালিস করেছেন। এবিষয়ে রাজিব হোসেন বলেন, মেয়ের অপরাধ স্বরুপ মোটরসাইকেল না দাবি ও ছেলের এক লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি বলেন, দেনমোহর বাবদ মেয়েকে এক লাখ এবং সমাজ খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে, বাকি ৫০ হাজার টাকা তার কাছে আছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ