• Uncategorized

    জাতি আরেকজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো!

      প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৬:৩৮:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মহাপ্রয়ানে জাতি আরেকজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো। তিনি গতকাল রাত ১১ঃ৪০ সিএমএইচে ৮৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজেউন।

    এই মহাপ্রয়ানে বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের বিকাশে সাজেদা চৌধুরীর ভূমিকা অনন্য। তিনি বাংলাদেশের প্রথিতযশা নারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

    ১৯৩৫ সালের ৮ মে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঢাকায় পরিবার নিয়ে চলে আসেন ও ছয়দফার পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেন।
    ১৯৬৯–১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

    ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি এবং রাজশাহীর জিন্নাতুনন্নেসা তালুকদারসহ কয়েকজন নারী কলকাতায় মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এইচএম কামরুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চান। এরপর কলকাতায় সেখানে কামারুজ্জামানের প্রচেষ্টায় শুরু হওয়া গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের পরিচালক নিযুক্ত হন সাজেদা চৌধুরী। মেয়েদের নার্সিংসহ বহুমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

    ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের জাতীয় কমিশনার ছিলেন।

    পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত নারীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, যুদ্ধশিশুদের বিদেশে দত্তক হিসেবে প্রেরণ এবং অসহায় নারীদের বাঁচাতে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। বোর্ডের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান সাজেদা চৌধুরী। তিনি ছুটে বেড়ান সারা দেশে। রাজশাহীতে নারী পুনর্বাসন বোর্ড ও চিকিৎসাকেন্দ্র হয় কাদিরগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলের দক্ষিণের বাড়িটিতে।

    স্বাধীনতার পর রাজশাহী হেলেনাবাদ স্কুলের বিশাল মাঠে প্রতিবছর গার্লস গাইড ক্যাম্প হতো। সেখানেও যেতেন জাতীয় কমিশনার সাজেদা চৌধুরী। ক্যাম্প ফায়ারের আলো আঁধারিতে ফিরোজা বেগমের গান ছাত্রীদের উদ্দীপিত করতো। গার্ল গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদকও অর্জন করেছেন তিনি।

    ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার পান। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

    পরবর্তীতে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

    বরেণ্য রাজনীতিবিদ সাজেদা চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

    ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউট কর্তৃক ‘উইম্যান অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত’ হন তিনি। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
    একাদশ জাতীয় সংসদে সাজেদা চৌধুরী ফরিদপুরের কৃষাণপুর ইউনিয়ন (ফরিদপুর-২: নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়ী হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি পরিবেশ ও বন-মন্ত্রী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
    আদর্শবান রাজনীতিবিদের এই শুন্যতা সত্যিই অপূরণীয়। আমি কয়েকবছর আগে একজন রাজনীতিবিদের জীবনী লিখতে গিয়ে বলেছিলাম যে সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান রাজনীতিবিদগণের স্বাভাবিক মহাপ্রয়ান হয়তো ঘটবে আগামীতে তখন রাজনীতিতে মহাশুন্যতা দেখা দিবে, সংখ্যাগত বিচারে নয়, আদর্শ ও সততার মাপকাঠিতে। সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে আজ ওই কথাই আমাকে স্বরণ করিয়ে দিলো। তাঁর প্রতি বিনম্র অতল শ্রদ্ধা।

    তথ্যসূত্রঃ
    ইত্তেফাক ও সাংবাদিক আহমেদ শফিউদ্দিন ও গেরিলা ৭১। ছবি কৃতজ্ঞতা – তাঁর পুত্র সাজেদ আকবর। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার থাকাকালীন সময়ে তোলা নিচের ছবিটি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ