• Uncategorized

    চরমোনাইতে এশিয়ার অন্যতম সেরা বালিকা মাদ্রাসার উদ্ভোদন

      প্রতিনিধি ১০ মে ২০২৩ , ৪:২৮:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

    আঃ কাদের কারিমী বরিশাল জেলা প্রতিনিধি 

    সারা দেশে কওমী মাদ্রাসায় বালক শাখার পাশাপাশি বালিকা শাখাও এগিয়ে যাচ্ছে, তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল জেলার কোতোয়ালি সদর উপজেলায় চরমোনাই নামক ইউনিয়নে কওমী, আলিয়া শাখার পাশাপাশি মহিলা শাখাও বেশ সুনামের সহিত চলে আসছিলো।

    কিন্তু জানা গেছে বালিকা শাখায় ছাত্রী সংকুলান না হওয়ায় বহুতল ভবনের প্রয়োজন দেখা দিলে চরমোনাই কওমী শাখার দক্ষিণ দিকে ৬ তলা বিশিষ্ট বিশাল এক ভবন নির্মাণ করা হয়, যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম সেরা বালিকা শাখা বলে বিবেচিত হয়েছে।

    বৈশিষ্ট্য সমুহ-
    বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের নেতা, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী আলেম মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব হুজুর চরমোনাই’র তত্বাবধানে গড়ে উঠেছে এমনই এক প্রতিষ্ঠান।
    অবকাঠামোগত ভাবে যেন এক দুর্ভেদ্য প্রাচীর। প্রায় তিন একর জায়গায় বিস্তৃত এই স্থাপনায় মাঝখানে খেলাধুলা ও দৌড়ের জন্য সুবিশাল মাঠ ও প্লে-গ্রাউন্ড রেখে চতুর্পাশ থেকে স্কয়ার সিস্টেমে গড়ে তোলা হয়েছে সুরম্য ৬তলা ভবন।

    ভেতরে ঢুকতে প্রধান ফটক পার হওয়ার পর ভবনের মেইন গেইট। না, এখানে আপনি সরাসরি ঢুকতে পারবেন না। স্বল্প দীর্ঘ একটা ব্যারিকেড স্তর আছে। যা ঘুরে কাউকে ঢুকতে বা বের হতে হবে। যাতে জরুরি প্রয়োজনেও যেসব পুরুষকে মাদরাসার গেইট পর্যন্ত আসতে হবে, তারাও যেন ভেতরের কোন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে না পারেন। ঢুকতেই হাতের বামে অভ্যর্থনা, গেস্টরুম ও সাক্ষাৎকক্ষ। নারী অভিভাবকদের জন্য রয়েছে বিশ্রামের ব্যবস্থা।

    সাক্ষাত কক্ষের রয়েছে তিনটি কাউন্টার। যার প্রতিটিতে রয়েছে দু’টি স্তর। যে কোন অভিভাবক গিয়ে নাম পরিচয় ও প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শনের পর সাউন্ডবক্সে নাম ডেকে দিবে দায়িত্বরত (নারী) গার্ডরা। পুরুষ অভিভাবকদের জন্য দ্বিতীয় স্তর। তাতে রয়েছে আরও অভিনব পদ্ধতি। তাদের কাউকে ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে ঢোকারইপ্রয়োজন নেই। সাক্ষাত কাউন্টার বরাবর ভবনের বাইরের থেকে দরজার ব্যবস্থা। মাঝে গ্রিলের পার্টিশন। এক কথায় অসাধারণ।

    পুরো ভবন ঘিরে মাঝে রয়েছে বিস্তৃত খেলার মাঠ। যার চতুর্পাশে বসে খেলাধুলা দেখা বা গল্প করার জন্য বসার স্থান। মাঠের প্রত্যেক কোনেই আছে খেলাধুলা বা হাটাহাটি শেষে হাত-পা ধোয়ার জন্য পানির ব্যবস্থা।

    নিচ তলার উত্তর পাশে রয়েছে সুবিশাল ডাইনিং স্পেস। যার একপাশে ডিস্ট্রিবিউশন কাউন্টার। সেই কাউন্টারের বিপরীত পাশে পাকের ঘর। মাঝের দেয়ালের নিচ দিয়ে দুই বা তিন ইট পরিমাণ ফাঁকা। যা দিয়ে পাকের ঘর থেকে খাবারের ডিস কাউন্টারে হস্তান্তর হবে। প্রতিষ্ঠান কাঠামোর ভেতরে হওয়া সত্ত্বেও তা যেন একদম বৃত্তের বাইরে। তার সাথে ডাস্টবিন ব্যবস্থাপনা। সেই আরেক অভিনব কায়দা।

    নিচ তলারই পশ্চিম ও পূর্বপাশে কয়েকটি ক্লাসরুম। বাকি সব ওপরে। এখানে সেসব ক্লাসরুম রাখা হয়েছে, যেসব ক্লাসে মুরুব্বি পুরুষ শিক্ষকরাও পড়াবেন। নিচতলায় রাখার হেতু হলো, সেসব শিক্ষকদেরও যেন ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে না ঢুকতে হয়। তাই ক্লাসরুমের সাথে গ্রিল ও থাই গ্লাসের পার্টিশন রেখে পৃথক একটি ছোট্ট রুম করা হয়েছে, যার একমাত্র দরোজাটা ভবনের বাইরে। শিক্ষক মহোদয় সেদিক থেকে আসবেন, মাইকে ক্লাস নেবেন আবার চলে যাবেন।

    এখানে আরও আছে বিস্তৃত হলরুম। যা নিয়মিত ইসলাহী তারবিয়াহ ও পরীক্ষা কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার হবে।নিচতলায় আরও আছে ক্যান্টিন, হোটেল, ফার্মেসি ও প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে মেয়েদের নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের দোকান। যার ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই নারী।
    দোতলায় হাতের ডানেই কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র। সেলাই ও হাতের কাজ শেখার ব্যবস্থা। তার পাশে আছে কম্পিউটার ল্যাব। (প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি এখনো) এছাড়াও মেয়েদের চাহিদানুপাতে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে পর্যায়ক্রমে।

    দোতলা ও তিনতলা জুড়ে সাজানো সব ক্লাসরুম। আর প্রত্যেক ক্লাসরুমেই এ্যাটাচ ওয়াশরুম। এক কথায় নারীত্বের পরিপূর্ণ গুরুত্ব ও সম্মানের দিক থেয়াল রাখতে যেন কোন ত্রুটিই করা হয়নি।
    ভবনের ওপরের দিকে বাকি সবটুকুতে আবাসিক ব্যবস্থাপনা। সেইসাথে প্রত্যেক মেয়ের জন্য পৃথক কেবিনেট ব্যবস্থা। অসুস্থ হলে প্রাথমিক হসপিটালিটি ও ফার্স্টএইড ব্যবস্থা। যার প্রায় বেশিরভাগ সেবাই বিনামূল্যে মিলবে।

    আর শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্যই এতকিছু। মুন্তাযিমীনদের চেষ্টা আছে, সর্বদিক থেকে সেরা একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার। বিগত বছরগুলোতে বেফাক ও বাকুশির রেজাল্ট সেটারই বার্তা দেয়। আজ ১০ মে বুধবার বিকাল ৩ টার সময় বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন মুফতী সৈয়দ মোঃ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই) ও মুফতী সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই)।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ