আজিজুল হক-নরসিংদী প্রতিনিধি:
প্রায় ১৪০০ বদলী শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালস্থ বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ জুট মিলের আংশিক উৎপাদন ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করেছে। আর এ উৎপাদন বেসরকারী ভাবে চালু করেছে বিজেএমসি থেকে লিজ নেওয়া জুট এলায়েন্স লিমিটেড নামে একটিকোম্পানী।বদলী শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতাদি পরিশোধ না করে মিল চালুর খবরে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। মিল এলাকায় বদলী শ্রমিকরা প্রতিদিন জড়ো হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিতে যাচ্ছেন বলে জানান শ্রমিকরা।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২ জুলাই রাত ১০ টায় জুট মিল কর্তৃপক্ষ মিলের উৎপাদন বন্ধের বিজেএমসির নোটিশ বাংলাদেশ জুট মিলের প্রধান গেটে টানিয়ে দিয়ে মিলটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।মজুরি কমিশন-২০১৫ অনুযায়ী শ্রমিকদের সব পাওনাদী তাদের ব্যাংক হিসেবে পি এফ গ্র্যাচুইটি ও গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ সব পাওনা ৫০ শতাংশ নিজ নিজ ব্যাংক হিসেবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধের কথা থাকলেও মিলের ১৩৮০ জন বদলী শ্রমিক ও ৯ জন স্থায়ী শ্রমিকদের কোন বকেয়া পাওনাদি এখনো পরিশোধ করা হয়নি। ফলে টাকা না পেয়ে বদলী শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করে যাচ্ছেন।
নোয়াখালী বাড়ি মিলের ফিনিশিং বিভাগের নান্টু কুমার পাল নামে এক শ্রমিক জানান, আমার পাওনা টাকার আশায় গত দেড় বছর যাবৎ ভাড়া বাসা নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। কিন্ত কবে টাকা পাবো তাও জানিনা।মিলটির কাঞ্চন, কাদির, লাল মিয়া, মস্তফা নামে শ্রমিকরা জানান, ভাড়া বাসায় থেকে রিকশা, ভ্যান চালিয়ে ও দিন মজুরের কাজ করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অতি কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করে যাচ্ছি।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে বদলী শ্রমিকরা তাদের বকেয়া টাকার দাবীতে মিল এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করার প্রস্তুতি নিলে পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন তাদের সাথে কথা বলে আন্দোলন না করার পরামর্শ দেন এবং তিনি তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এর সমাধান করার আশ্বাস দেন। পরে শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন জানান, আমি বিজেএমসির প্রতিনিধি মিলের প্রকল্প প্রধানের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন অতি দ্রুত শ্রমিকদের সকল পাওনাদি পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন।
এ ব্যাপারে বিজেএমসির কাছ থেকে লিজ নেয়া জুট এলায়েন্স লিমিটেডের সমন্বয়ক হাসান মোহাম্মদ আরিফ জানান, বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল ২০২০ সালে ২ জুলাই বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে ঘোড়াশালস্থ বাংলাদেশ জুট মিলটি গত ১০ জানুয়ারী বিজেএমসির সঙ্গে ২০ বছরের চুক্তি করে জুট এলায়েন্স লিমিটেড এবং তা বুঝে নেয়। ১লা ফেব্রুয়ারি মিলটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করার পরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা মিলে আংশিক উৎপাদন শুরু করি।
তিনি আরও জানান, কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারবো। আমরা জানি শ্রমিকদের কিছু বকেয়া রয়ে গেছে। সব সময়ই বিজেএমসিকে তাগিদ দিয়ে আসছি বদলী শ্রমিকদের যেন বকেয়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেয়। বিজেএমসি কর্তৃপক্ষও আমাদের আশ্বস্ত করেছে অতি দ্রুত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে দিবে।
অপরদিকে বিজেএমসির প্রতিনিধি মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কাশেম মোহাম্মদ হান্নান জানান, কিছু স্থায়ী শ্রমিকদের ভোটার কার্ডে সমস্যা হওয়ায় টাকা দিতে দেরী হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা তাদের টাকা পেয়ে গেছি। বিজেএমসি অনুমোদন দিলেই আমরা তা পরিশোধ করবো। আর বদলীকৃত ১৩শ শ্রমিকের পাওনা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তাও আমরা দ্রুর পরিশোধের ব্যবস্থা নিচ্ছি।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.