• Uncategorized

    কিশোর অপরাধ দমনে নজরদারি দরকার সাংবাদিক আরজু

      প্রতিনিধি ২৭ অক্টোবর ২০২০ , ৬:৩৬:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    সাদ্দাম হোসেন মুন্না-নারায়ণগঞ্জ জেলা রিপোর্টারঃ

    ইদানিং প্রায়সই শোনা যাচ্ছে কিশোর অপরাধের নানান ধরনের ঘটনা। কী কারণে দিন দিন কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে? আর কেনই বা সংঘবদ্ধ এই কিশোরথরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে? তা নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরাও আজ বেশ চিন্তিত। কিশোররা কেবল হাতাহাতিতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা এখন পরিকল্পিত হত্যার সাথেও সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে।

    অপরাধমূলক কাজে তাদের উৎসাহিত করছে কারা? আর কেনইবা অপরাধমূলক কাজ থেকে কিশোরদের ফেরানো যাচ্ছে না? এ প্রশ্ন এখন সমাজর সকল শ্রেনীর মুখে মুখে। কিভাবে কিশোররা পরিবার সমাজ ও আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনে দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। এর জন্য দায়ী কে? সমাজ পরিবার না কি আইনি প্রণয়নকারী সংস্থা ও প্রয়োগকারী সংস্থা দূর্বলতা বা দুর্বল ব্যবস্থাপনা। এই সব প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে মানুষের মনে। কিশোর শ্রেনীর অপরাধীদের লাগাম ধরবে কে?

    প্রতিটি পরিবারের স্বপ্ন থাকে সন্তানকে নিয়ে গর্ব করার। প্রত্যাশা থাকে সন্তানটি একদিন বংশের নাম উজ্জ্বল করবে। সামাজের সাধারন মানুষের আকাঙ্খা থাকে ছেলেটি সমাজের জন্য কাজ করে এলাকার সুনাম বয়ে আনবে।

    আর এই প্রত্যাশা নিয়েই পরষ্পর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো। সন্তানের অপরাধের কারণে বহু পিতাকে মাথা নিচু করে চলতে হচ্ছে। আর সন্তান চিহ্নিত কুখ্যাত অপরাধী হলে শুধু ওই কিশোরের পিতা নয় গোটা গ্রামবাসীকেই অপমানে অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করে চলতে হয়।

    আমাদের সকলেরই উচিৎ কিশোর যুবকদের খারাপ কাজে নিরুসাহিত করে ভাল কাজের দিকে ফিরিয়ে আনা। তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দ্বায়িত্ব এককভাবে পরিবার কিংবা প্রশাসনের নয়। বরং সকলের নৈতিক দ্বায়িত্ব তাদেরকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনা।

    আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ সন্তানদের আচরণ, গতি ও প্রকৃতির দিকে নজর রাখা। সেই সাথে তাদের বন্ধু কারা তা চিহ্নিত করা। তাদের অর্থনৈতিক আয়ের উৎস কী? তাদের পেছনে কারা সাহস যোগাচ্ছে। কারা ওদের নিয়ন্ত্রণ করছে? তা জানা সমাজের সকল অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব।

    সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের বখাটেদের যেসব বিষয় লক্ষনীয় তা হলো লেখাপড়ার প্রতি নিরুসাহিত হওয়া, কাজে কর্মে অনীহা, সময় অসময়ে বাইরে যাওয়া, এমন কী রাতে বাড়ি না ফেরা, বৈরী আচরণ, ¯েœহ ও সম্মান সূচক আচরণ না করা। উগ্র মেজাজে বকে যাওয়া একজন কিশোর বা যুবকের অধপতনের বা বিপদগামীতার লক্ষণ বলে ধরে নেয়া যায়।

    এই দিকগুলো যদি আমরা পরখ করতে পারি তাহলেই অতি সহজে বুঝতে পারবো আমাদের সন্তান অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে কিনা। আর প্রাথমিক কালেই যদি অপরাধের সাথে জড়িত কিশোর বা যুবকদের এ লক্ষনগুলো দেখা যায় তবে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তাহলেই অপরাধের পথ থেকে নবীন অপরাধীকে সুপথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। নয়তো এ সন্তানকে নিয়ে পাড়া মহল্লা, সমাজ প্রশাসন, দেশ রাষ্ট্র সকলকে পস্তাতে হবে।

    কখনো কখনো এমনও তথ্য পাওয়া যায়। সুবিধাবাদী নামধারী কিছু নেতা নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য কিশোরদেরকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করে। অধিক মুনাফালোভী ওই সব নেতা বা প্রভাবশালী অপরাধীচক্র কিশোরদের দিয়ে বিভিন্নভাবে সুকৌশলে মাদক বিক্রির কাজে ব্যবহার করে। সেই সাথে তাদের দিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জবরদখল, হত্যার মতো ঘৃণীত অপরাধমূলক কাজও করিয়ে নেয়।

    বিগত দিনে রাস্তার মোড়ে, অলিতে গলিতে কিংবা পরিত্যাক্ত কোন ভবনে তাদের বিচরণ লক্ষ্য করা গেলেও সম্প্রতি নবরূপে কিশোররা বেপরোয়া স্টাইলে মটর সাইকেল, গাড়ি কিংবা বাইসাইকেলে দশ থেকে ত্রিশ জনের মতো দলবেঁধে দিনে কিংবা রাতে উচ্চ আওয়াজ করে জনসাধারনের মধ্যে আতঙ্ক বিস্তারের চেস্টা করার প্রবণতা লক্ষনীয়। তাদের মধ্যে অনেকেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক এমন কী ড্রাইভিং লাইন্সহীন। ওরা কীভাবে প্রশাসনের চোখের সামনে এমন বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে? কিশোরদের এ ধরণের সংঘবদ্ধ আড্ডা ও অপরাধমূলক কাজের প্রতি নজর দেয়া গোয়েন্দা সংস্থার যেমন দায়িত্ব।

    তেমনি সমাজের জনপ্রতিনিধিদেরও সামাজিক শান্তি শৃংখলা রক্ষার জন্য বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়ে তাদের রয়েছে বিস্তর উদাসীনতা। একজন অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কৌশলে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু সেই অপরাধীর প্রতি যদি পুলিশ প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারি থাকতো তবে সে হয়তো কষনও অপরাধের সাথে আর জড়াতো। অসুস্থ জীবন যাপন ছেড়ে সুস্থ জীবন যাপন করতো।

    অভিজ্ঞ মহলের কেউ কেউ কিশোর অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারন বলে মনে করেন সামাজিক দূর্বলতাকে। তাদের মতে সমাজিক বিচার ব্যবস্থা আজ অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আর তাই অপরাধীদের প্রতিরোধ করা থেকে অনেকে আজ অপরাধীদের ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

    সামাজিকভাবে একজন অপরাধী হলেও আইনের চোখে সাক্ষী প্রমাণ না দিতে পারায় অপরাধী ব্যক্তিটি হয়ে উঠে অপার শক্তিধর। তাই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রিয় আইন ও পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ সমযোপযোগী করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই সামাজিক অবক্ষয় দূর করতে হবে।

    রাষ্ট্রকে তার সঠিক দায়িত্ব নিতে হবে। প্রশাসনকে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। সেই সাথে আইন বাস্তবায়নের জন্য কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে পেশীশক্তির ভয়ে, ক্ষমতার দাপটে, অর্থের লোভে কারো পক্ষে কাজ করা যাবে না। বরং সাহসিকতার সাথে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। বীরত্বের সাথে অপরাধ দমনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সমাজ সুন্দর সুশৃংখল হলে কোন সন্তান অপরাধী না হয়ে, হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের গর্বিত সন্তান।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ