• চট্টগ্রাম বিভাগ

    কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: পর্যটন নগরীকে অপরাধমুক্ত করুন

      প্রতিনিধি ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ , ২:৩৯:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্কঃ

    পর্যটন শহর কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অনভিপ্রেত। বস্তুত কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি দেখে মনে হচ্ছে, এ জেলা এখন অপরাধী ও দুর্বৃত্তদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে এখানে শ্রমিক লীগের সভাপতিসহ অন্তত পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিন চুরি, ছিনতাই ও দখলসহ নানা অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে। সম্প্রতি সমুদ্রসৈকত এলাকায় এক নারীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।
    পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকার কক্সবাজারে অন্তত ২৫টি পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন, আধুনিক হোটেল-মোটেল নির্মাণ, মহেশখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, সোনাদিয়াকে বিশেষ পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলা, ইনানি সৈকতের উন্নয়ন, টেকনাফের সাবরায়েং ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ ইত্যাদি। সরকারের এসব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

    তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নসহ পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তা কতটা সুফলদায়ক হবে, এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানে কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন করা হলেও অভিযোগ রয়েছে, পর্যটনবান্ধব পরিবেশের ঘাটতি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিজনিত কারণে পর্যটকরা পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এগুলো নিঃসন্দেহে আমাদের পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
    বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম পর্যটন শিল্প। বিশ্বের অনেক দেশ, এমন কী আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারত ছাড়াও মালদ্বীপ পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে যথেষ্ট সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়ে এ খাতে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে।
    অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থার দৈন্যদশা, নিরাপত্তাহীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ অন্যান্য প্রতিকূল পরিবেশের কারণে পর্যটকরা এদেশে বেড়াতে আসার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ বোধ করেন না। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটাতে হলে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের পাশাপাশি কক্সবাজারসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য।
    বলার অপেক্ষা রাখে না, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে হত্যা-ধর্ষণসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে সঙ্গত কারণেই দেশবাসী উদ্বিগ্ন। হত্যা, ছিনতাই, ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধে যুক্তদের আইনের আওতায় আনতে না পারার ব্যর্থতায় এখানে অপরাধ প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
    এ অবস্থায় অপরাধীরা যাতে বেপরোয়া হতে না পারে, সেই পথ খোঁজা দরকার। হত্যা, ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্তরা কোনোরকম অনুকম্পা পাওয়ার যোগ্য নয়-এ বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হলে অপরাধীদের বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। অপরাধ বিজ্ঞানী, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষক, বিচারপতি, আইনজীবী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির চারটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে।
    এগুলো হল, ক্রাইম ম্যাপিংয়ে ‘হট স্পট’ চিহ্নিত না করা, খুনি বা অপরাধীকে ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, দুর্বল মামলা এবং তদন্ত রিপোর্ট ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবে শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হয়।
    এর ফলে একদিকে যেমন অপরাধীদের গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে গ্রেফতার হলেও তাদের আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ সারা দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপরোক্ত কারণগুলো নিরসন করা উচিত। তা না হলে সমাজে অপরাধের মাত্রা না কমে বরং উত্তরোত্তর বাড়বে, যা মোটেই কাম্য নয়।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ