• আমার দেশ

    এটিএম হেমায়েত উদ্দিন রহ.যার জীবনের সর্বত্র জুড়েই ছিল ইসলামী হুকুমতের সাধনা

      প্রতিনিধি ১১ অক্টোবর ২০২২ , ১:৩৫:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

    আরিফুল ইসলাম কারীমী-স্টাফ রিপোর্টারঃ

    জন্ম ও শিক্ষা জীবন এটিএম হেমায়েত উদ্দীন ১৯৫৯ সালের ১লা ডিসেম্বর মোড়লগঞ্জ থানার রাজৈর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রবীন আলেমে দ্বীন, বহু মসজিদ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা জনাব আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুল আলী। পিতার তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী রাজৈর নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রারাসায় তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। তিনি মক্তব শিক্ষা শেষ করে শিরোমনি হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে পবিত্র কুরআন মাজিদ হেফজ করেন। অতঃপর রাজৈর নেছারিয়া সিনিয়র মাদরাসা, বরিশাল সাগরদী ইসলামিয়া মাদরাসায় দাখিল ও আলিম পরবর্তীতে ঢাকা মাদরাসা-ই-আলিয়ায় ফাজিল ও কামিল সমাপ্ত করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (অনার্স) ও এম.এ(মাস্টার্স) ডিগ্রী লাভ করেন।

    সাংগঠনিক ও সংগ্রামী জীবন: বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এটিএম হেমায়েত উদ্দীন ছিলেন এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা। ছাত্র জীবন থেকে জীবনের অন্তিম সময়ে তিনি ছিলেন ইসলামী বিপ্লবের এক সক্রিয় রাজপথ কাঁপানো নেতা। স্বাধীনতার পর তিনি মাদ্রাসা ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সংগ্রামী কাফেলা “মাদ্রাসা ছাত্র পরিষদ” এ যোগ দেন। তিনি “মাদ্রাসা ছাত্র পরিষদ”-এর বরিশাল জেলার সভাপতি ছিলেন। আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার মানোন্নয়নে এটিএম হেমায়েত উদ্দীনের অবদান অনস্বীকার্য।

    ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন মাদরাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করলে তার প্রতিবাদে আয়োজিত বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্রনেতা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় ভর্তি হওয়ার পর জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ায় সম্পৃক্ত হন। পর্যায়ক্রমে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং ১৯৭৯-৮১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

    মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে ছাত্র শিক্ষকদের পক্ষে এটিএম হেমায়েত উদ্দীনের নেতৃত্বে জামিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার মাধ্যমে ১৭ দফা দাবী পেশ করেন এবং প্রায় লক্ষাধিক মাদরাসার ছাত্রদের নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকার বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমান দাবী মেনে নিতে বাধ্য হন। ১৯৮০ সালে তৎকালীন সরকার ছাত্র জনতার ন্যায্য দাবী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার পরিবর্তে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলে এটিএম হেমায়েত উদ্দিন এর নেতৃত্বে হাজার হাজার ছাত্র জনতা বঙ্গভবন ঘেরাও করলে পুলিশ বর্বোরচিত হামলা চালিয়ে তাকে সহ অনেককেই আহত করে।

    বাংলাদেশের রাজনীতিকে সামরিক শাসনের প্রভাবমুক্ত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্ণেল এম.এ.জি ওসমানীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনয়ন দানকারী নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবেও জনাব এটিএম হেমায়েত উদ্দীন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি “ইসলামী যুব আন্দোলন” গঠন করেন। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ হাফেজ্জী হুজুরের নেতৃত্বে “সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ” গঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ উত্তর গেইটে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন-এর প্রথম ঐতিহাসিক সমাবেশে তিনি পুলিশ কর্তৃক আহত হন।

    তিনি ১৯৯০ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৯৩ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদকালে পুনরায় গ্রেফতার হন। ১৯৯৯ সালে তাকে তৎকালীন সরকার আবারও কারাগারে বন্ধী করে। হেমায়েত উদ্দীন পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর নেতৃত্বে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যুগ্ম মহাসচিব, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর সভাপতি ও সর্বশেষ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

    ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কর্তৃক ইরাক, আফগান, ফিলিস্তিন, লেবানন ও কাশ্মীরসহ সকল আগ্রাসনের প্রতিবাদে তিনি অসংখ্য সমাবেশ ও বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। মৃত্যু : বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ও সফল ইসলামী সংগঠক ১১ অক্টোবর‘১৯ মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথীবি ছেড়ে চলে যান। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাকবারাকে আরো নূরানী করুন। আমীন!

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ