• লাইফস্টাইল

    একটা সময় এমন ছিল আমাদের কারও ই নিজস্ব ফোন ছিল না।

      প্রতিনিধি ২২ আগস্ট ২০২২ , ৪:১৮:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    একটা সময় এমন ছিল আমাদের কারও ই নিজস্ব ফোন ছিল না। তখন ছিল অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা যে অভিজ্ঞতার কাছে আজ এই ডিজিটাল যুগে আমরা হার মেনে যাচ্ছি প্রতিনিয়তই। তখন ভালবাসাটাও ছিল খাঁটি ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা এখন আর মিলে না খুঁজে ও পাওয়া যায় না।
    তখন নিজস্ব ফোন ছিল না মায়ের কিংবা বাবার বাটন ফোন ছিল সেই ফোনটাই ছিল আমাদের একমাত্র অবলম্বন। বন্ধু হোক কিংবা বান্ধবী তাদের সঙ্গে কথা না বললেই মনে হতো কতই না দূরে আছি তাদের থেকে।

    পারতাম না কথা না বলে থাকতে, সময় খুঁজতাম কখন ফোনটা চার্জে লাগানো হবে অথবা কখন মা-বাবা থাকবে না।
    সেই সময়টা একটা মেসেজেরও ছিল অনেক মূল্য মানে এরকম সচরাচর মেসেঞ্জার ছিল না, ফেসবুক ছিলনা, ইমু ছিলনা, হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না, কিছুই ছিল না, ছিলো শুধু মা-বাবার ওই একটাই বার্টন ফোন। সেই ফোনে রিচার্জ করা টাকা থাকতো, সেই টাকা দিয়ে কুটকুট করে ইদুর যেরকম খাবার খায়। সেরকম আমরা ওই টাকা একটু একটু চুরি করে করে এসএমএস কিনতাম সেই দুষ্টু বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে ছোট ছোট কথা বলার জন্য।

    সে কথাগুলো ছিল এরকমঃ এই তুই কেমন আছিস? ওইপার থেকে উত্তর আসত, ভালো আছি । তুই কেমন আছিস? ভালো আছি। এই তুই কাল স্কুলে আসিস নি কেন? এমনি রে । কিসের এমনি আমাকে বল? শরীরটা ভালো ছিল না রে তাই যাই নি। এই কথা তুই আমাকে এখন বলছিস আমাকে আগে বলিস নি কেন? বলিনি তুই টেনশন করবি সেই কারণে। টেনশন করলে করতাম বললি না কেন? যা তোর সাথে কোন কথা নেই থাক আর এ ভুল হবে না, এখন থেকে তোকে সবই বলবো রাগ করে থাকিস না দোস্ত । আচ্ছা হয়েছে আর পাম দিতে হবে না, তুই কি করছিস এখন? এইতো দোস্ত তোর সঙ্গে কথা বলছি । ঈদের আগে তো আর স্কুলে দেখা হবে না তাইতো? হুম দোস্ত দেখা হবে না । যাইহোক দোস্ত এখন রাখি আম্মু চলে আসছে যদি দেখে আমি ফোন চাপাচাপি করছি আমাকে চরম ধোলাই দিবে । আচ্ছা দোস্ত ভাল থাক দেখা হবে ঈদের দিন ।
    ইনশাআল্লাহ

    এখন কার সময় এখনকার বন্ধুত্বঃ আজ সেই বন্ধুগুলো হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে অনেক দূরে ।
    তাদের সঙ্গে আজ ডিজিটাল যুগে কথা বলা হয়েছে সহজ, তবুও সময় বের করতে পাললেও চাইনা তাদের সঙ্গে কথা বলতে কারন আমরা মানুষ জাতিই তো স্বার্থ নিয়ে চলতে ভালোবাসি ।
    তখন হয়তো ছিলাম ছোট তাই বুঝতাম না স্বার্থ কাকে বলে । তাই যদি বুঝতাম চুপি চুপি এসএমএস কিনে খবর নিতাম না ।
    কারণ বন্ধুত্বটা আজ হয়ে গেছে এক ঘেয়ে তরকারির মত , যেমন একটা। তরকারির দিয়ে প্রতিদিন ভাত খেতে ভালো লাগে না, আমাদের কাছে এমন হয়েছে এখন বন্ধুত্ব এক বন্ধুর সাথে প্রতিদিন কথা বলতে ইচ্ছা হয় না ।
    কারন আমরা নেট চিনে গেছি, ইন্টারনেট বুঝে গেছি, আমাদের জীবনে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার বন্ধু ।
    তাই সেই বন্ধুগুলোকে আর মনে করতে ভালো লাগেনা আমরা ভেবে নেই ওর সঙ্গে কথা বল্লে ও ও আমার বন্ধু থাকবে , না বললেও থাকবে , তবে অন্য কারো সঙ্গে কথা বলি এই চিন্তা করতে করতে আমরা আমাদের জীবনের সেই আসল বন্ধুগুলোকে হারিয়ে ফেলি ।
    কারণ আমরা স্বার্থ চিনে গেছি কারণ আমরা সময়ের মূল্য দিতে শিখে গেছি কারণ আমরা এখন ইনজয় করতে ভালোবাসি কে বন্ধু থাকলো না থাকলো সেটা নিয়ে চিন্তা করি না ।
    শুধু ভাবতে থাকি তারা ছিল কোন একটা সময়ে আমার শুধুই মজার কারণ , কিন্তু কখনো বোঝার চেষ্টা করি নি এই যে ইন্টারনেটে এত মেয়ে পটানোর চেষ্টা আপনি একটু বেফাস কথা বলুন সে আর আপনার সঙ্গে কথা বলবে না ।
    আপনি একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলের সঙ্গে বেফাঁস কথা বলুন সে আপনার সঙ্গে আর কথা বলবে না ।

    কিন্তু আপনার সেই বন্ধুগুলা আপনি কি ভেবে কথাগুলো বলছেন কথাগুলোর মাঝে কি আছে সেগুলো খুজে বের করার চেষ্টা করবে হঠাৎ করেই রেগে যাবে না তারাই হঠাৎ করে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের জীবন থেকে , তারাই ছিল আমাদের আসল বন্ধু ।

    বন্ধুত্ব শুধু এখানেই ছিল না সীমাবদ্ধঃ ইস্কুলে গিয়ে ক্লাসরুমে বসে স্যার ম্যাডামের ভয়ে কথা বলতাম না এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সঙ্গে ।
    এক বান্ধবী আরেক বান্ধবী সঙ্গে

    তখন কি করতাম জানেন? চিরকুটে লিখে লিখে কথা বলতাম ! কেমন আছিস, চল পালাই, এই ম্যাডামের ক্লাস ভালো লাগছে না চল সবাই বের হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কিছু

    তাই আসুন এই হারিয়ে যাবার যুগে সেই বন্ধুগুলোকে হারিয়ে না ফেলি ।
    দূরে সরে না যেতে দেই কারণ সময়ের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তাধারা , তাই হয়তো আসল বন্ধুর কাছে না গিয়ে নকল বন্ধুকে বেশি সময় দেওয়া বন্ধুত্বের সম্পর্ক পৃথিবীতে স্বার্থ ছাড়া সম্পর্ক সেটা যে টিকিয়ে রাখতে পারে সেই জীবনের সার্থক ।

    ভালো থাকুক সকল বন্ধু

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ