• Uncategorized

    একই সুরে কথা বলছেন মাওলানা ও ইমরান?

      প্রতিনিধি ১৯ এপ্রিল ২০২২ , ১০:৪৭:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

    আন্তর্জাতিক ডেস্ক
    আস্থা ভোটের আগ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ইমরানের কাছে ৩টি প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।

    এক : পদত্যাগ দুই : আস্থা ভোটের সম্মুখীন হওয়া ও তিন : নতুন নির্বাচন। ইমরান তৃতীয়টা গ্রহণ করেছিলেন। যদিও বিরোধীরা না মানায় সেটা আর হয়নি।

    পদ হারানোর আগে ও পড়ে ইমরান খান নির্বাচন চেয়ে আসছেন। তার এখন প্রধান দাবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

    এই দাবিতে এখন একমত মাওলানা ফজলুর রহমানও। তিনি গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট বলেছেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিৎ। তবে মুসলিম লীগ (এন) ও পিপলস পার্টি নির্বাচনের বিষয়ে একমত নয়। শাহবাজ শরীফ চাইছেন আরো কিছুদিন প্রধানমন্ত্রীত্ব করতে। বহু কষ্টে প্রধানমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েও হতে পারেননি এই শাহবাজ। বলা হয়তো শাহবাজ শরীফের হাতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেখা নেই। কিন্তু এবার তিনি হয়ে গেলেন। তাই এতো সহজে ছাড়তে চাইবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক। পিপিপি আছে দোলাচলে।

    এইদিকে মাওলানা ভোট চাইছেন। স্পষ্ট ভাষাতেই তিনি নির্বাচনের পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু কেন? মাওলানা কেন ইমরানের সুরে সুর মিলিয়ে ভোটের আওয়াজ তুলতেছেন?

    (এক) নির্বাচনে ভোট কমে যাওয়া

    গত বছরের শেষের দিকে খাইবার পাখতুনখোয়া রাজ্যে লোকাল নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বেশ ভালো ফলাফল করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (এফ)। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ফলাফলে সবচেয়ে ভালো করে জমিয়ত।

    প্রথম ধাপের ফলাফল-
    জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (এফ)- ২৩
    ইমরানের দল পিটিআই – ১৮
    ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ৭
    মুসলিম লীগ-(এন) – ৩
    জামায়াতে ইসলামী – ২
    পিপলস পার্টি – ১

    দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ফলাফল আসে এপ্রিলে ১ ও ২ তারিখ। এবারের ফলাফলে পিটিআই এগিয়ে যায়।

    ইমরানের দল পিটিআই – ৩০
    জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (এফ)- ৯
    জামায়াতে ইসলামী – ৫
    মুসলিম লীগ-(এন) – ৫
    ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি – ২
    পিপলস পার্টি – ২

    অর্থাৎ প্রথম ধাপে জমিয়ত যেভাবে এগিয়ে গিয়েছিলো, দ্বিতীয় ধাপে অনেকটাই তাদের আবার পিছিয়ে যেতে হয়েছে।

    গত পরশু খাইবার পাখতুনখোয়ার একটি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে একদিকে ছিলো ইমরানের দল পিটিআই অন্যদিকে ছিলো সম্মেলিত সরকারী জোট। সরকারী জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয় জমিয়ত (এফ)-এর নেতা মুফতী উবাদুল্লাহকে। কিন্তু ফলাফল দেখা যায় নির্বাচিত হয়েছেন পিটিআই-এর প্রার্থী নাদিম খান। এই ফলাফল বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এজন্য যে, ভোটাররা জানে নাদিম খান নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়ে আবার পদত্যাগ করে ফেলবেন। কারণ তার দলের অন্যরা ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। তারপরেও মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে।

    বলে রাখা ভালো যে, খাইবার পাখতুনখোয়া হলো জমিয়ত, পিটিআই ও জামায়াতের ঘাটি। এখান থেকেই মুফতী মাহমুদ রহ. মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।

    (দুই) জোট সঙ্গীরা ইমরানের সাথে চলে যাওয়া

    ২০০২ সালে মাওলানা সামিউল হক (জমিয়ত-এস), মাওলানা শাহ আহমদ নুরানী (বেরলভী), কাজী হুসাইন আহমদ (জামায়াত) ও মাওলানা ফজলুর রহমান (জমিয়ত-এফ) মিলে গঠন করেন মুত্তাহিদা মজলিশে আমাল। এটি দেওবন্দী, আহলে হাদীস, শিয়া ও বেরলভী উলামাদের দলগুলোর জোট। প্রথমে এর সভাপতি হোন বেরলভী আলেম মাওলানা শাহ আহমদ নুরানী আর সেক্রেটারি মাওলানা ফজলুর রহমান। মাওলানা নুরানীর ইন্তেকালে সভাপতি হোন জামায়াতের তৎকালীন আমীর কাজী হুসাইন আহমদ। সেক্রেটারি থাকেন মাওলানা ফজলুর রহমান।

    বর্তমানে এটির আমীর মাওলানা ফজলুর রহমান আর সেক্রেটারি জামায়াতে ইসলামীর লিয়াকত বেলুচ। গত নির্বাচনেও এক সাথে ছিলো এই দলগুলো।

    কিন্তু গতকাল জোটের অন্যতম প্রধান শরীক জামায়াতে ইসলামীর আমীর সিরাজুল হক ইমরান খানের সাথে ফোনালাপ করেছেন। জামায়াতের আমীরের কথায় স্পষ্ট যে, তারা অনেকটাই ইমরানের পক্ষে অবস্থান নিতে চলেছেন। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ধারণা করা যায়, মুত্তাহিদা মজলিশে আমালের অন্য দলগুলোও ইমরানের পাশে দাড়াতে পারে।

    (তিন) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

    ইমরানের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিলো দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া। সারা বিশ্বের মত পাকিস্তানেও সবকিছুর দাম বাড়তে থাকায় ইমরানের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিলো। বিরোধীরাও বারবার এই বিষয়ে অভিযোগ করে আসছিলেন।

    কিন্তু শাহবাজ শরীফ ক্ষমতায় এসে দাম কমানো তো দূরের কথা, বিদ্যুৎসহ অনেক কিছুর দাম ইতোমধ্যেই বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে খুব দ্রুতই জোট সরকারের জনরোষের মুখে পড়তে হবে।

    এজন্য মাওলানা সাহেব চাচ্ছেন দ্রুত নির্বাচন হয়ে যাক। যদি নির্বাচন এখন হয়, তাহলে ফলাফল হয়তো ইমরান বিরোধীদের পক্ষে থাকবে। কিন্তু যদি এভাবে আরো কিছুদিন যেতে থাকে, তাহলে ইমরানের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া খুব বেশি কঠিন হবে না।

    বাস্তবে ইমরানের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমতে ছিলো। বিরোধী পক্ষের কাজকর্মে ইমরানের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। পৃথিবীর ইতিহাসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পতন হওয়া কোন সরকারের পক্ষে এভাবে মানুষ মাঠে নামতে আগে দেখা যায়নি।

    ছবি : ২০০৫ সালে মোশাররফের বিরুদ্ধে মুত্তাহিদা মজলিসে আমাল আয়োজিত সমাবেশে জামায়াতের তৎকালীন আমীর কাজী হুসাইন আহমদ। জমিয়ত (এফ) এর সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান ও পিটিআই-এর চেয়ারম্যান ইমরান খান।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ