• ঐতিহ্য

    ইসলাম ভাষা শহীদদের যেভাবে মূল্যায়ন করেছে-মুফতী আরিফুল ইসলাম কারীমী

      প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ১২:২৮:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    ভাষা শহীদদের মূল্যায়ন ও করণীয়
    ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন) বাংলাভাষা আন্দোলনের রক্তঝরা ও অগ্নিঝরা এক মহান স্মৃতি বিজড়িত দিনের নাম। যা যুগ যুগ ধরে বিশ্ব মানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। ইতিহাসের সে অধ্যায় রচিত হয়েছিল আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। অকুতোভয় সালাম, রফিক, জব্বার ও বরকতের মতো আরও অনেক যুবকের তাজা রক্তের বিনিময়ে। মাতৃভাষা বাংলাভাষা, যে ভাষার সঙ্গে এ দেশের মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। সে ভাষায় কথা বলা তথা মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তারা নিজেদের মহামূল্যবান জীবন নির্দ্বিধায় বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাদের এ আত্মদানকে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে, তারা শহীদ কি না?

    উল্লেখ্য যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একক সার্বভৌমত্ব, শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত ও শেষ বিচারের দিনসহ পরকালীন অন্যান্য বিষয়ের প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে নিজের আন্তরিক বিশ্বাসের মৌখিক ঘোষণা দান এবং রিসালাতের মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রেরিত আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত মানবজীবনের বিধান সমাজ জীবনের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের সংগ্রামে ইসলাম বিরোধী শক্তির হাতে মৃত্যুবরণ করাকেই শহীদ বলে।

    মাতৃভাষা ব্যবহার করার অধিকার মানুষের সৃষ্টিগত তথা জন্মগত অধিকার। কারণ, আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সঙ্গে তাকে তার ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহ! তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনিই তাকে দিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে।’ -সূরা আর রহমান: ১-৪

    আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে জানা যায়, মানুষ সৃষ্টির সঙ্গে ভাষার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই মাতৃভাষা মানুষের একটি সৃষ্টিগত অধিকার। কেউ যদি এ অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায় তার প্রতিরোধ করা অপরিহার্য। আর এ প্রতিরোধে কেউ মারা গেলে ইসলামের দৃষ্টিতে তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন।
    তবে শর্ত হলো, তাদেরকে প্রকৃতভাবে এমন মুসলিম হতে হবে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মারা যায়।

    আমরা বাংলাদেশের অধিবাসী, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। আমরা মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলি। এর পেছনে এ সব শহীদদের অবদান রয়েছে সর্বাগ্রে। কাজেই ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদেরও কিছু করণীয় রয়েছে, দায়িত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে উদাস থাকার কোনো সুযোগ নেই।

    মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় যে সব অকুতোভয় মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তারা যদি ইসলামি শহাদাতের শর্তগুলো পূরণ করে থাকেন, কোরআন-হাদিসের আলোকে তাদেরকে আমরা ইনশাআল্লাহ জান্নাতবাসীই বলব। তাদের নাজাতের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালাই সর্বজ্ঞাত। অন্যথায় তাদের ভেতর যদি সে রকম শর্তাবলী অনুপস্থিত থেকেও থাকে, তবুও তারা যেহেতু আমাদের অধিকার আদায়ের জন্যেই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন সুতরাং মুসলিম হিসেবে তাদের জন্য আমাদের কর্তব্য হলো- আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া। কেননা এটি একটি সদকায়ে জারিয়ার মতো।

    আর এ প্রসঙ্গে হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, ‘যদি কেউ কোনো সদকায়ে জারিয়ার মতো সৎকাজ সম্পাদন করে, তাহলে যত প্রাণী তা থেকে উপকৃত হবে, সে ওই সব মানুষের নেকির একটি অংশ পেয়ে যাবে।’অবশ্য কোনো কোনো ধর্ম ও সমাজে গান-বাজনার মাধ্যমে তাদের দেব-দেবিদের স্মরণ করেন এবং এর মাধ্যমে তারা তাদেরকে খুশি করার চেষ্টা করেন। সেটা তাদের ধর্মীয় ব্যাপার।

    আমরা মুসলিম, মুসলিমদের বিশ্বাসমতে শহীদরা আখেরাতে অবস্থান করছেন। তাই আমাদের উচিৎ, যে সব কাজ-কর্ম তাদের উপকারে আসে সে সব কাজ বেশি বেশি করা।
    পরিশেষে ভাষা আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে যার যতটুকু ভালো আছে তা গ্রহণ করে এবং মন্দটুকু বর্জন করে উদার মন নিয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে মাতৃভাষার উৎকর্ষ সাধনে কাজ করা একান্ত আবশ্যক।

    লেখক-ইসলামী কলামিস্ট,শিক্ষক ও সাংবাদিক

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ