আরিফুল ইসলাম কারীমী-স্টাফ রিপোর্টারঃ
‘আল্লাহু আকবর’ বলে নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে দিলাম। কারোর পা, কারোর হাত, এমনকি মাথা ধরেও টেনে তুললাম। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কী হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম না, মাথা কাজ করছিল না। শুধু মনে হচ্ছিল, এক অবিশ্বাস্য শক্তি আমার দেহে ভর করেছে। কথাগুলো বলেছেন মানিক নামের এক যুবক। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির গ্রিল কারখানার দরিদ্র শ্রমিক তিনি। পুরো নাম মোহাম্মদ মানিক। তিনি এখন রীতিমত নায়ক বনে গেছেন রাজ্যে। গত বুধবার রাতে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মাল নদে দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের সময় হঠাৎ আসা পাহাড়ি জলপ্রবাহে ভেসে যায় ৫০ থেকে ৬০ জন।
সেই সময় অনেকে চেয়ে চেয়ে দেখলেও এই মানিক তীব্র পানির স্রোতের মধ্যে উদ্ধার কাজে ঝাপিয়ে পড়েন। এদিন ৪০ বা তার বেশি বিসর্জনকারী বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের অন্তত ৮ জনকে সাঁতরে এবং টেনে পাড়ে তুলেছেন এই মানিক। নদে যখন বিসর্জনকারীদের একাংশ ভেসে যাচ্ছিল, তখন পাড়ে দাঁড়িয়ে অন্য অনেকের মতোই ছবি তুলছিলেন মানিক। কিন্তু যখন তাঁদের কেউ কেউ ভেসে যেতে শুরু করলেন, তখন আর মাথা ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। ভারতের অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রে মানিকের ছবি ও সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। ২৮ বছরের মোহাম্মদ মানিক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভাবিনি, আমার জীবনে কখনো এই রকম দিন আসবে, যখন সব মিডিয়া সারাক্ষণ আমাকে দেখাবে।
বর্তমানে পরিবারের মোট ছয় সদস্যের প্রধান উপার্জনকারী এই মানিক। নিজের পরিবার বিশেষ করে তাঁর তিন বছরের একটি সন্তানের কথাও তখন ভাবেননি তিনি। তাঁর ভাষায়, ভেসে যাওয়া মানুষের চিৎকার শুনে তাঁর পরিবারের কথা মাথায় আসেনি। মানিক বলছিলেন, ‘পাশে আমার এক বন্ধু ছিল, তাঁর হাতে ফোনটা দিয়ে ঝাঁপ দিলাম। পানিতে নেমে অবশ্য বুঝতে পারলাম, উল্টো দিক থেকে প্রবল জোরে আমার দিকে ভেসে আসছে কিছু পাথর ও বোল্ডার। আঘাত লাগল, কিন্তু এত উত্তেজিত ছিলাম, ব্যথা অনুভব করিনি।’ওই উদ্ধার কাজের সময় মানিকের ডান পায়ে চোটও লেগেছে। পরিবারের লোক অবশ্য তাঁর এই কাজে খুশি। মানিকের বাবা-মা-ভাই সবাই বলছেন, মানিক ঠিক কাজই করেছে।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.