• আইন ও আদালত

    অধ্যক্ষ আমজাদের খুঁটির জোর কোথায়

      প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৬:৪৪:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী নওগাঁ নিয়ামতপুর উপজেলার বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রী কলেজের আলোচিত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন পাহাড়সহ অভিযোগ মাথায় নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ, ক্ষমতার অপব্যবহার, কলেজের অর্থ নয়ছয়সহ একাধিক অভিযোগ প্রমানিত। কিন্ত্ত অজ্ঞাত কারণে এখানো সে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে এলাকাবাসির মাঝে তীব্রক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মহল দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনকে অপসারণ ও আটকের দাবিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর থেকে অধ্যক্ষ অনেকটা আত্মগোপণে রয়েছে, মাঝে মাঝে গোপণে অফিসে এসে কয়েকদিনের স্বাক্ষর করেই চম্পট দেয়, আবার অনেক সময় পিয়নকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে স্বাক্ষর করেন।
    জানা গেছে, অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ স্বাক্ষর জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এর আগে ওই কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক এরশাদ আলী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের সত্যতা পায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চল, রাজশাহী অফিস। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপরই বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে মাউশি।
    এদিকে গত ২০ মে মাউশির সহকারী পরিচালক আবদুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নাজমুল হাসান ও একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেনকে। চিঠিতে তাদের ১৪ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ বিষয়ে একজন তদন্ত কর্মকর্তা গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমরা সরেজমিনে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। ওই শিক্ষকের (এরশাদ আলী) অভিযোগ সত্য। আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তিনি বলেন, আমরা যেদিন তদন্ত করতে গেলাম, অধ্যক্ষ সেদিন কলেজে অনুপস্থিত ছিল। তিনি চলে গেলেন রাজশাহীতে। অথচ যাওয়ার আগে আমরা তাকে জানিয়েছিলাম বিষয়টা। ইচ্ছাকৃত তিনি এমনটা করেছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের তদন্ত শেষ, তবে প্রতিবেদন এখনও মাউশিতে পাঠানো হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা তা পাঠিয়ে দেব।
    জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন ইলিয়াসের পাঠানো পত্রের অনুমোদন সাপেক্ষে বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। ওই বছরের ৩১ আগস্ট বোর্ড গার্হস্থ্য অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিভাগের জন্য তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়। গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে ফারহানা আফরোজ, মনোবিজ্ঞানে মো. শহিদুজ্জামান ও অর্থনীতি বিভাগে এরশাদ আলী নামে তিন জন নিয়োগ পান। এতে বিচলিত হয়ে পড়েন বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন। কেননা, এনটিআরসিএ’র ক্ষমতা গ্রহণের আগেই আরও পাঁচজন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে গভর্নিং বডির কাউকে না জানিয়ে ওই তিন শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপরিচালকের প্রতিনিধি স. ম. আব্দুস সামাদ আজাদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সারওয়ার জাহানের স্বাক্ষর জাল করেন আমজাদ হোসেন। এর মাধ্যমে দর্শনে কামাল হোসেন, বাংলায় মানিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জাকির হোসেন, ইংরেজি রাজীব ও ভূগোলে আবু রায়হানসহ পাঁচ জন এবং আগের তিন জনসহ মোট আট জনকে নিয়োগ দেখান। কলেজ অধ্যক্ষ পাঁচ জনের অবৈধ নিয়োগ বৈধ করার জন্য প্রভাষক এরশাদ আলীর বৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত সব চিঠিপত্র এবং রেজুলেশন টেম্পারিং করেন। নিয়োগ বোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির চিঠি, ডিজি প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠি, সাক্ষাৎকার বোর্ডের ফলাফল শিট ও রেজুলেশনসহ নিয়োগ সংক্রান্ত সব ধরনের কাগজ নকল করে পাঁচটি বিষয়সহ মোট আটটি বিষয় নিয়োগ উল্লেখ করে বেতন আবেদন প্রস্তুত করেন তিনি।
    ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট তারিখের মূল রেজুলেশন কাটাকাটি ও ঘষামাজা দেখে সন্দেহ হলে এরশাদ আলী ও দর্শন বিভাগের শিক্ষক কামাল হোসেনের বেতন আবেদন বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চল, রাজশাহী অফিস। শিক্ষা অফিস থেকে অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করা হলে তিনি দীর্ঘদিন কোনো জবাব দেননি। একপর্যায়ে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক গত বছরের ২৭ অক্টোবর কলেজে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে অধ্যক্ষের সব জালিয়াতির প্রমাণ পান। এবিষয়ে গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি যতীন্দ্র মোহন প্রামাণিক বলেন, আমি তো সবে মাত্র এখানে এসেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আগের সভাপতি হয়তো বলতে পারবেন। এবিষয়ে বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সব অভিযোগ অস্ববীকার করে বলেন, টেম্পারিং ওভাবে করা হয়নি। প্রথমে তারা (অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ৫ জন) যখন যোগদান করেছে, তখন ভুলবশত রেজুলেশনের এক জায়গায় কাটাকাটি হয়েছে। জালিয়াতি করা হয়নি। একটি নিয়োগ চাহিদায় ৩ জন আরেকটিতে ৮ জন কেন ? টাকার বিনিময়ে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলোর সত্যতা নেই। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্যই হয়তো কেউ এটা করেছে। আমাদের কাছে আসল ও নকল কপি দুই ধরনের কাগজই আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস থেকে তদন্ত করেও জালিয়াতির প্রমাণ পায়নি।
    আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস টেম্পারিংয়ের সত্যতা পেয়েছে জানালে তিনি বলেন, মাউশির কেউ এর পেছনে থাকতে পারে। আবার আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস আমাদের ভালোভাবে দেখে না। তারাই হয়তো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ রটাচ্ছে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বেসরকারি কলেজ শাখার উপ-পরিচালক (কলেজ-২) এনামুল হক হাওলাদার বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব‍্যবস্থা নেয়া হবে

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ