প্রতিনিধি ১৩ জানুয়ারি ২০২১ , ১২:২২:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
১০৪ কি.মি মিটারগেজ রেলপথ বদলে দেবে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতি রেল যোগাযোগ নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। রেলপথে ভ্রমণে মানুষের ঝোঁকও বেশি। পণ্য পরিবহণেও সড়ক পথের চেয়ে রেলপথ সাশ্রয়ী বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। তবে মিশ্রগেজ রেলপথ না থাকায় মিটার গেজে চলা ট্রেন রাজশাহীতে আসতে পারে না।
ফলে সারা দেশের সাথে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত আছেন।ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিটারগেজ রেলপথের সুবিধা থাকলে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি রাজশাহীতে কন্টেনারে পণ্য আনা-নেয়া করা সম্ভব হতো।
জানা গেছে, দেশের প্রায় সর্বত্র মিশ্র গেজ রেলপথ চালু আছে। শুধু পশ্চিম রেলওয়ের নাটোরের আবদুলপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ ও মিটারগেজ রেললাইন রয়েছে। আবদুলপুরের পরে রাজশাহী ও জেলা শহর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ থাকলেও নেই মিটারগেজ লাইন। তাই এই অঞ্চলের কৃষিপণ্য ও আম পরিবহনে উচ্চ ভাড়ায় কুরিয়ারে ধর্না দিতে হয়। মিটারগেজ রেললাইন হলে রাজশাহী-চট্টগ্রামের মধ্যে ব্যবসায়ী যোগাযোগ সহজ হবে।
রাজশাহী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নাটোরের আবদুলপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ১৫টি স্টেশন মিলে ১০৪ কিলোমিটার পথ। আবদুলপুর থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত সাতটি স্টেশন মিলে ৪২ কিলোমিটার পথ। এই পথের স্টেশনগুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, হরিয়ান, সরদহ, নন্দনগাছী, আড়ানী ও আবদুলপুর। এছাড়া রাজশাহী স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার। আর রাজশাহী থেকে রহনপুর পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার। রাজশাহী ও রহনপুরের পথে আটটি স্টেশন।
এগুলো হলো- কোর্ট স্টেশন, শীতলাই, কাঁকনহাট, ললিতনগর, আমনুরা, আমনুরা বাইপাস, নিজামপুর ও নাচোল স্টেশন রয়েছে।এই পথটুকুতে মিশ্র রেললাইন স্থাপন করা গেলে এ দুই জেলায় বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানি আরও সহজ হবে। এতে একদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে, অন্যদিকে সময় ও পরিবহন খরচ দুই কমবে।
রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা জানায়, রাজশাহীতে শুধু মিটারগেজ রেললাইন না থাকায় পরিবহন খরচ বেশি হয়। মিটারগেজ লাইন চালু হলে বিভাগীয় এই শহরের উপর দিয়ে নবাবগঞ্জের রহনপুর রুটেও পণ্য পরিবহন সহজ হবে এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঢাকা থেকে নাটোরের আবদুলপুর স্টেশন পর্যন্ত রয়েছে মিশ্রগেজ লাইন রয়েছে। শুধু নেই রাজশাহী-চাঁপাই ও আর ঈশ্বরদী বাইপাস থেকে নেই খুলনা পর্যন্ত মিটারগেজ লাইন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী স্টেশন রহনপুর। রহনপুর স্টেশন পর্যন্ত মিটারগেজ লাইন হলে দেশে বিভিন্ন পণ্য ভারত থেকে আমদানি-রফতানি করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
পণ্য আমদানি-রফতানি: গত বছরে (২০২০) করোনাভাইরাসের সময়ে ট্রেনে আম, সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এছাড়া কুরিয়ার বা অন্য মাধ্যমে বিভাগীয় শহরগুলোতে আম পরিবহণ করা হয়েছে।
সেই সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন, ট্রেনে পণ্য পরিবহনে খরচ তুলনামূলক কম। আর ট্রেনের বগিতে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় আম ও সবজি নষ্টের আশংকা কম থাকে। এতে করে এই অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ট্রাক ও কুরিয়ারের আশায় থাকতে হবে না। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি আরো সচল হবে।
ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি: চট্টগ্রাম থেকে পণ্য রেলপথে ঢাকায় আনতে হয়। এরপরে ঢাকা থেকে ট্রাকযোগে রাজশাহী-চাঁপাইতে আনতে হয়। এতে সময় ও খরচ বেড়ে যায়। মিটারগেজ লাইন স্থাপন করা গেলে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি রাজশাহীতে পণ্য আনা সম্ভব হবে। তাহলে বাড়তি পরিবহণ ভাড়া গুনতে হবে না। যদিও ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ট্রেনে পণ্য আনতে ভাড়া দিতে হবে ব্যবসায়ীদের।
তবে সড়ক পথের তুলনায় কম বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক তৌহিদ আল মাসুদ রনি জানান, রাজশাহীতে শিল্প প্রতিষ্ঠার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। যোগাযোগ ভালো করা গেলে ট্রান্সপোর্ট খুব সহজ ও সুলভ হবে।
সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অনেকভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাজশাহীতে শিল্প-কারখানা স্থাপনের। রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন পণ্য কিনতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে পণ্য সরাসরি রাজশাহীতে আনা সম্ভব না। ট্রেনে ঢাকায় আসার পরে ট্রাকে করে রাজশাহীতে আনতে হয়। এতে খরচ ও সময় বেশি লাগে।
তিনি আরও বলেন- রাজশাহী চাঁপাইয়ে প্রচুর আম ও সবজি উৎপাদন হয়। সেগুলো ট্রাকে বিভিন্ন বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক সময় পরিবহন বন্ধ থাকলে ব্যাপক সমস্যায় পড়েন ব্যবসায়ীরা। আর মিশ্র রেলপথ স্থাপন করা গেলে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতি পালটে যাবে।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবদুল করিম জানান, মিশ্রগেজ রেলপথ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও ভালো হবে। এছাড়া ভারতের সাথে পণ্য আমদানি-রফতানি সহজ হবে। এতে করে কমবে পরিবহণ খরচও।