• Uncategorized

    সরাইলে কলেজছাত্র ইকরাম হত্যা মামলায় ৩ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের চার্জশীট দাখিল

      প্রতিনিধি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৫:০৮:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

    সরাইলে কলেজছাত্র ইকরাম হত্যা মামলায় ৩ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের চার্জশীট দাখিল।

    দীর্ঘ ১৮মাস তদন্তের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সরকারি কলেজের প্রথমবর্ষের কলেজছাত্র ইকরাম হোসেন হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশীট) আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনজনকে। ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় অভিযোগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে দুইজনকে।

    গতকাল মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে ‘পুবের আলো’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল থানার এসআই গৌতম চন্দ্র দে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ তদন্তের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশীট) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ মামলার পাঁচজন আসামির মধ্যে চার্জশীটে ইমরানুল হাসান সাদী ও শিমুল এবং সোহাগ এই তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অপর দুই আসামি নাজিম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।’
    উল্লেখ্য, বিগত ২০১৯ সালের ১১ আগস্ট সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ বারজিবিপাড়ায় খালাত বোন লাভলী বেগমের বাড়ির খাটের নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় ইকরামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ইকরাম হোসেন (১৬) একই এলাকার সহিদুল ইসলামের ছেলে। কাছাকাছি বাড়ি এবং খালাতো বোন লাভলীর স্বামী বিদেশে থাকেন; সেই সুবাদে ইকরাম তার খালাত বোনের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতেন।
    এদিকে লাশ উদ্ধারের দিনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারজিবিপাড়ার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন ও তার ছোটবোন স্কুল শিক্ষিকা নাজমা বেগম এবং নিহতের ভাগিনা ও সরাইল সদরের বড্ডাপাড়া গ্রামের মজনু মিয়ার প্রতিবন্ধী ছেলে ইমরানুল হাসান সাদী এই তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন (১২ আগস্ট) এ হত্যাকাণ্ডের দায়ভার স্বীকার করে নিহত ইকরামের ভাগিনা প্রতিবন্ধী ইমরানুল হাসান সাদী (১৮) স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেয়। সাদী পুলিশকে জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে সে সহ শিমুল ও সোহাগ নামে দুই যুবক অংশ নেয়। লাভলী বেগমের বাড়ির লাগোয়া প্রতিবেশি শিমুল ও সোহাগ তারা দুই ভাই। বারজিবিপাড়ার মৃত রবিউল্লাহ’র ছেলে তারা। বড় ভাই শিমুল পেশায় পোল্ট্রি ফার্ম ব্যবসায়ী; আর সোহাগ কাঠমিস্ত্রী।
    পরে ১২ আগস্ট নিহত ইকরামের বাবা সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ইমরানুল হাসান সাদী, নাজিম উদ্দিন, শিমুল, সোহাগ ও নাজমা বেগম এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ নাজিম উদ্দিন, নাজমা বেগম, শিমুল ও সোহাগকে পুলিশ রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে কিছুই পায়নি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে নাজমা বেগম ও নাজিম উদ্দিন আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসেন। সাদী, শিমুল ও সোহাগ জেলহাজতে রয়েছে।
    এরআগে ইমরানুল হাসান সাদী আদালতে জবানবন্দি দেয়। সাদী জানায়, শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে ইকরামের সঙ্গে ঘরে সাদীও ঘুমাতে যায়। রাত ১১টা-১২টার দিকে ইকরামের নাম্বারে একটি ফোন আসে। রাত ১২টার সময় ইকরাম ঘর থেকে বের হয়ে যায়। রাত সোয়া ১২টার দিকে সাদী শিমুলের মুুরগির ফার্মে যায়। সেখানে গিয়ে সাদী দেখে শিমুল ও সোহাগ বসে আছে।
    এরা দুইজন সাদীকে বলে ইকরামকে মেরে ফেলবে। সাদী বলে ইকরামকে মারার দরকার নেই। না মেরে হাত-পা ভেঙে দিলেই হবে। সাদী যথারীতি ইকরামের সঙ্গে থাকতে যায়। রাত তখন ১টা ৩০ মিনিট। ইকরাম ঘুমোচ্ছে। আর সাদী সোফায় শুয়ে মোবাইলে ভিডিও দেখছে। ঘরের দরজা খোলা। এর ৩০-৪০ মিনিট পর সোহাগ ও শিমুল ছুরি, দড়ি, বস্তা নিয়ে ঘরে ঢুকে। তাদের কথামতো সাদী ঘুমন্ত ইকরামের পা চেপে ধরে। সোহাগ ইকরামের দুই হাত চেপে ধরে। আর শিমুল ঘরে থাকা দা দিয়ে প্রথমে ইকরামের গলা কাটে। পরে দা-ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোঁচ মারে। দেহকে ছোট করার জন্য পা দুটিকে বিভিন্ন ভাবে বাধার চেষ্টা করে। বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলে রেখে শিমুল ও সোহাগ পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সাদীও বের হয়ে যায়। সকালে পুলিশ সাদীকে তার নানা মো. লাল মিয়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
    এদিকে সাদী এ খুনের ব্যাপারে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিলেও এ নিয়ে খোদ প্রশ্ন তুলেছেন নিহত ইকরামের নিকটাত্মীয় সহ প্রতিবেশী লোকজন। সাদীর পরিবারের লোকজনও দাবি করছেন এ খুনের সঙ্গে সাদীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আদালতে সাদী যা বলেছে তা শেখানো মনগড়া কথা। শিমুল ও সোহাগের মা দাবি করেছেন, এ খুনের সাথে তার দুই ছেলে জড়িত নয়। ষড়যন্ত্র করে ওরা আমার দুই ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। এ খুন ইকরামের খালাতো বোন লাভলীর নেতৃত্বে হয়েছে। লাভলী ষড়যন্ত্র করে আমার দুই ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
    অপরদিকে লাভলী বেগমের দাবি, সাদীকে ব্যবহার করে শিমুল ও সোহাগ পরিকল্পিত ভাবে ইকরামকে খুন করেছে। শিমুল আমার মেয়েকে উত্যক্ত করতো। এতে ইকরাম বাধা দিতো; এসব ঘটনায় শিমুল ক্ষুব্ধ ছিল ইকরামের ওপর।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ