• চট্টগ্রাম বিভাগ

    মুরাদনগর গণপরিবহনে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

      প্রতিনিধি ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:০০:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

    স্টাফ রিপোর্টার:

    নেপথ্যে সরকার দলের দুই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান কুমিল্লার মুরাদনগরে গণপরিবহনে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজী। স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে সড়ক মহাসড়কে সব ধরনের গণপরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সরকার দলের দুই প্রভাবশালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে চাঁদা না দিলে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এবং আশপাশের সড়ক গুলোতে যানবাহনের চাকা ঘুরে না। স্থানীয়দের অভিযোগ কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় বসে চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রন করছেন নবীপুর পুর্ব ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের এবং তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেন। প্রশ্ন এসেছে কে এই খায়ের চেয়ারম্যান? যাকে চাঁদা না দিলে গাড়ীর চাকা ঘুরে না। তার নেপথ্যে কে? চাঁদাবাজীর এসব চিত্র কি পুলিশ কিংবা প্রশাসনের চোখে পড়ে না? কি কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? এমন নানা প্রশ্ন এখন পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
    অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডের বাহিরে মহাসড়কের উপরে গণপরিবহন আটকে দেদারসে চাঁদা আদায় করছে দুই চেয়ারম্যান সিন্ডিকেটসহ কয়েকটি চাঁদাবাজ চক্র। এই বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১০-১২টি সার্ভিসের গণপরিবহন প্রতিদিনই ঢাকা, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে। এসব গণ পরিবহন একটা সময় সাধারণ মালিকগণ নিয়ন্ত্রণ করলেও গত ইউনিয়ন নির্বাচনে জয়ী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ স্ট্যান্ডের সকল গণপরিবহনের নিয়ন্ত্রন নিজ হাতে তুলে নেন কাজী আবুল খায়ের চেয়ারম্যান। এতে সহযোগী হিসেবে জাকির চেয়ারম্যানকেও সাথে রাখেন। স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রনে নিয়েই সকল পরিবহনে চাঁদার হার বাড়িয়ে এ দুই চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট। এ সময় মালিক এবং শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলেও তাদের হুমকি ধমকির কাছে টিকতে পারেনি। তাছাড়া থানা পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন সরকার সমর্থক এ দুই চেয়ারম্যানের হাতেই। দুই চেয়ারম্যান সিন্ডিকেটের চাঁদা আদায় নিয়ে মালিক শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে এ দুই চেয়ারম্যানের ফোনে যেকোন সময় মুরাদনগর থানা পুলিশ স্ট্যান্ডে হাজির হয়ে যায়। যার ফলে সহজেই সব কিছু নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন তারা। পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা দেদারসে চাঁদাবাজী করছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। ওই দুই চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট ১০-১২ টি গনপরিবহন সার্ভিস থেকে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ সাধারন মালিকদের। সুত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী তিশা গোল্ডেনের প্রতি গাড়ি থেকে প্রতি ট্রিপে জিপির বাহিরে অতিরিক্ত ২শত টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে হানিফ সুপার থেকে ২শ, হানিফ ক্লাসিক থেকে ২শ,শাপলা থেকে ২শ, প্রান্তিক থেকে ২শত, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট থেকে ২শ, টিপু ফ্যাশন থেকে ২শ, নিউ জনতা থেকে ১৩০ টাকা, ফারজানা থেকে ৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অবিলম্বে প্রশাসন এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মালিক এবং শ্রমিকদের। নিউ জনতা পরিবহনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম এবং ইকবাল হোসেন বলেন, খায়ের এবং জাকির চেয়ারম্যান সাধারণ মালিকগনকে জিম্মি করে ৫৮টি নিউ জনতা বাস থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা চাঁদা তুলে নিচ্ছে। আমরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই তাদেরকে এসব চাঁদা দিতে হয়। একই অভিযোগ করেছেন জনতার বেশ কয়েকজন চালক এবং শ্রমিক।

    তিশা পরিবহনের পরিচালক আবুল খায়ের মিয়া বলেন, কাজী আবুল খায়ের চেয়ারম্যান এবং জাকির চেয়ারম্যান বিগত ইউনিয়ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েই আমাদের তিশা পরিবহন কাউন্টার দখল করে নিয়েছে। এখন আমি নিজেই প্রতি ট্রিপে প্রতি গাড়ী থেকে দুইশত টাকা করে চাঁদা আদায় করে তাদেরকে দিচ্ছি, প্রতিদিন তাদেরকে গড়ে আমাদের পরিবহন থেকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। তারা সরকার দলের লোক তাই বাধ্য হয়েই চাঁদা দিচ্ছি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, জনতা পরিবহনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা আছে, অন্য কোন গণপরিবহনে চাঁদাবাজীর সাথে আমি জড়িত নই। ভিপি জাকির হোসেন বলেন, আমি যানজট কমিটির সভাপতি হিসেবে স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রন এবং যানজট নিরসন করতে হয়, কিন্তু কোন প্রকার চাঁদাবাজীর সাথে আমি জড়িত নই। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মুরাদনগর সার্কেল) পিযুস চন্দ্র দাস বলেন, কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় গণপরিবহনে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, যেহেতু আজকে আপনাদের কাছ থেকে জেনেছি, অবশ্যই তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তাছাড়া পুলিশের কোন সদস্যও যদি সম্পৃক্ত থাকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ