প্রতিনিধি ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ১২:১৫:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
রিকাবিবাজার খালের বেহাল দশা বিরাজ করছে। যে যার মতো খালের চারিদিকে ময়লা আর্বজনার স্তুপ করে রাখছে। এর ফলে খালের স্বাভাবিক পরিবেশে বিঘ্ন ঘটছে বলে অনেকেই মনে করছে। এর ফলে খালের মধ্যে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ইতোমধে বন্ধ হয়ে গেছে। এ খালটিতে একটু উদ্যোগ ও পরিচর্যার আওতায় আনলে এ খালটি হয়ে উঠতে পারে অর্থনৈতিক চাবিকাঠির মূলমন্ত্র।
এর ফলে এখানে বেকার সমস্যার কিঞ্চিত সমাধানও হলেও হতে পারে বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন। এখানে গড়ে উঠতে পারে গ্রীণ হাউজ। বছরের পর বছর এ খালটি পতিত অবস্থায় থাকায় এটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পূর্বের রিকাবিবাজার ইউনিয়নের নাম অনুসারে এ খালের নামও রাখা হয় রিকাবিবাজার খাল। সরকারিভাবে এ খালের খনন কাজ করা হলে এ খালটি পূর্বের জায়গায় প্রাণ ফিরে পেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এক সময়ে এ খালের পানিতে সারা বছর ভরে থাকতো। জোয়ার ও ভাটার পানিতে এখানে এ জনপদের মানুষ গোসল ও দোকানপাটের মালামাল উঠা নামা করতে। অনেকেই এ খালের ওপর দিয়ে নৌকা নিয়ে বিয়ে করতে কিংবা বরযাত্রী হয়ে গেছেন কনের বাড়িতে। কিন্তু বর্তমানে খালের ভেতরে পা ভিজানোর মতো পানি নেই। আগের বিষয়টি এখন রূপকথার স্বপ্ন হয়ে অনেকেই গল্প করে যাচ্ছেন মানুষের মাঝে মানুষ। এ খালের দক্ষিণে রয়েছে ধলেশ্বরী নদীর মুখ।
আর উত্তরে রয়েছে ইছামতি নদীর মুখ। এ দুটি নদীর মুখের কাছে ছোট্ট ছোট্ট আকারে চর পড়ায় এ খালে নদীর পানি প্রবাহ বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে জোয়ারের সময়ে এ খালের ভেতরে কিছু অংশ এলাকায় পানি প্রবেশ কওে বলে এলাকাবাসী দাবি করছে।
আর বর্ষার সময়ে কিংবা বন্যার সময়েও এ খালে ঐ কিছু অংশ এলাকায় পানি প্রবেশ কওে নিয়ম অনুযায়ি। কিন্তু সমগ্র এলাকার খালের ভেতরে কোনভাবেই আর এখন পানি প্রবেশ করতে পারে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এর কারণ হচ্ছে দক্ষিণ দিকের খালের পাড় ও নদীর পাড় ধরে যেসব রাইস মিল গড়ে উঠেছে, সেই রাইস মিলের পুড়া ছাইয়ের অংশ এ খালের মাঝে ফেলা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। যার কারণে এখানে সম্পূর্ণভাবে এখন নদীর পানির প্রবাহ কোন ভাবেই প্রবেশ করতে পারছে না।
যেসব রাইস মিলের কারণে আজ এ খালের এ অবস্থা তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য এখানকার মানুষ জোর দাবি জানিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তাদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হউক এমনটি দাবি করছে এ এলাকার মানুষ। এছাড়া এ খালের পাড় ধরে অত্র এলাকার ময়লা আর্বজনাও ফেলা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। তাতে এখানে চলাচলে সাধারণ মানুষ বড়ই বিপদের মধ্যে রয়েছে। এ কারণেও খালটি এখন নোংরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এ খালের সুন্দর্যও নস্ট হচ্ছে।
এ খালের ওপর দিয়ে একাধিক কাঠের পুল রয়েছে। সেই পুলের দুই পাড় দিয়ে এখানকার মানুষ ময়লা আর্বজনার স্তুপ গড়ে তুলেছে। সেখান দিয়ে মানুষ নাকে রুমাল চেপে চলাচল করে। এদিকে এ খালের ওপর দিয়ে কয়েকটি পাকা সেতু রয়েছে। তবে জোড়া সেতুর বেহাল দশা বিরাজ করছে অনেক বছর ধরে। অনেকের ধারণা এ খালটি পরিকল্পিত ভাবেই একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।
তাদের ধারণা হচ্ছে এভাবে এখানে এ কাজ করা হলে এ খালটি ক্রমশ গ্রাস করতে পারবে তারা। ইতোমধ্যে এ অবস্থা থাকায় খালের বেশিরভাগ অংশই খালের পাড়ের বসতিরা অনেকেই খালের জায়গা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ খালটি উত্তর-দক্ষিণে অনেকটাই বড় আকারে রয়েছে।
সেই হিসেবে এ খালটি পুন:খনন ও পরিচর্যা করা হলে এ খালে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ ছাড়া খালের পাড় ধড়ে বিভিন্ন ধরণের গাছপালা লাগালে এটি সবুজে ভরে উঠতে পারে একটু উদ্যোগ নেয়া হলে। সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তাতে সরকার এ খাত থেকে বড় ধরণের রাজস্ব আদায় করতে পারে। এখানকার মানুষ মনে করছেন এখানে সমবায় ভিত্তিতে একাধিক গ্রুপে খালটি বার্ষিক ইজারা দিলে খালটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
তারা আরো দাবি করছেন যে, ইজারাদার তার নিজের প্রয়োজনেই এ খালটি খনন ও পরিস্কার করে নিবেন মাছ চাষের জন্য। তাতে সরকারের এখানে বাড়তি অর্থ খরচ হবে না বলে তারা মনে করছেন। এ খালে যদি আগের মতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায় তবে এখানে গড়ে উঠতে পারে ভ্রমণ পিপাষুদের জন্য আড্ডাস্থল। এক্ষেত্রে এখানকার মানুষ মনে করছেন,
খালে পানি প্রবাহ সঠিক থাকলে এখানে রংবে রংয়ের নৌকা নিয়ে খুব সহজে ঘুরে বেড়াতে সকল মানুষেরা। আর এভাইে এখানে গড়ে উঠতে পারে পানিতে ভাষা হোটেল কিংবা রেস্তোরা।মিরকাদিম পৌর নাগরিক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান যে, এ বিষয়ে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণে সরকারকে প্রাথমিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তা হলে এটি আলোর মুখ দেখতে পাবে।