• আমার দেশ

    পটুয়াখালীতে বিড়ল ঘটনা, শিয়ালের সাথে মানুষের বন্ধুত্ব, নাম তার পন্ডিত!

      প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ১১:৪৪:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

    পটুয়াখালীতে বিড়ল ঘটনা, শিয়ালের সাথে মানুষের বন্ধুত্ব সম্পর্ক, নাম তার পন্ডিত! কার্টুন কিংবা সিনেমায় দেখা যায়, মানুষ ও হিংস্র প্রানী শিয়ালের বন্ধুত্ব। আধুনিক সভ্যতায় এমন দূশ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন, কেননা শিয়াল সাধারণত লোকালয়ে আসে না। সভ্যতার অগ্রগতিতে যখন বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব সংকটে, তখন ধূত শিয়ালের সাথে মানুষের বন্ধুত্ব বিস্ময়কর ঘটনাই বটে। পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের দিনমজুর সাহেব আলী শিয়ালের বাচ্চাকে পোষ মানিয়ে বড় করে তুলেছেন। গৃহপালিত অন্য পশুর মতই, শিয়ালটি মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকে। বন্য স্বভাব পরিবর্তন করেই চলছে শিয়ালটি। মুরগী চুরির চরিত্রও নেই তার। মানুষের মতন ভাত,মাছ,মাংস,চা,বিস্কুট,রুটি সবকিছুই খায়।
    পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী মিলে একটি শিয়াল ও তার চারটি বাচ্চা ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে। কিন্তু একটি বাচ্চা বেঁচে যায়। এক মাসের ছোট্ট বাচ্চাটিকে সাহেব আলী ও তার স্ত্রী ছেলে ও মেয়েদের মতই আদর যত্নে করে লালন পালন করতে থাকে। বর্তমানে শিয়ালটির বয়স ৩ বছর। পরিবারে সকলে তার নাম রেখেছেন পন্ডিত। বন্য শিয়ালকে ভালোবাসা দিয়ে তাদের সঙ্গে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেছেন পশুপ্রেমী সাহেবআলী। পরম মমতায় সাহেব আলী নিজে না খেয়ে থাকলেও ক্ষুধার্থ শিয়ালকে মুখে খাবার তুলে দেন। হিংস্র শিয়াল আর মানুষের এই ভালোবাসার মিতালী দেখতে প্রতি দিন লোকজন ভিড় করে সাহেব আলীর বাড়িতে। কেউ বিস্কুট, কেউ রুটি কেউ বা মুরগির মাংস নিয়ে আসে শিয়াল পন্ডিতের জন্য। সভ্যতার অগ্রগতিতে যখন বন্য প্রাণীদের অস্তিত্ব সংকট চলছে, তখন ধূর্ত শিয়ালের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা। মানুষের সঙ্গে বন্য শিয়ালের বন্ধুত্ব দেখে অনেকেই সাহেব আলীকে পশুপ্রেমী হিসেবেও আখ্যয়িত করেছেন।
    মোঃ সাহেব আলী বলেন, শিয়ালের বাচ্চাকে ছোটবেলা থেকে আদর যত্ন করে বড় করে তুলেছি। হিংস্র শিয়াল হলেও আমার কাছে শিয়ালের হিংস্র আচরণ কখনই চোখে পড়েনি। ভালোবাসায় সব হিংস্রতা জয় করা সম্ভব কোন প্রাণীই হিংস্র নয়। কোন হিংস্য প্রাণীর কাছে যেতে পারলে, মন বুঝতে পারলে, সবাইকে আপন করে নেওয়া যায়। যতদিন বেঁচে থাকবেন শিয়ালের প্রতি এই ভালবাসা ততদিন অটুট থাকবে। আমি সকালে উঠে ২ কাপ চা নিয়ে এক কাপ চা আমি খাই আর এক কাপ চা শিয়ালকে দেই তিনি আর বলেন, আমি একটি কারণে শিয়ালকে লালন পালন করে বড় করে তুলেছি, ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনী আমাদের বাংলাদেশের মা,বোন,ভাইদের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার ও হত্যা করে শিয়াল, কুকুর দিয়ে খাওয়াইছে এই কারণে সবাইকে দেখানোর জন্য শিখানোর জন্য আমি এই শিয়ালকে পালি।
    সাহেব আলীর স্ত্রী ময়না বেগম বলেন, এক সময় আমার স্বামীর এমন শিয়ালপ্রীতি দেখে খুবই বিরক্ত হতাম। নোংরা প্রাণী বলে রাগ হত। অবশ্য এখন বেশ ভালো লাগে। দূর দুরন্ত থেকে মানুষ শিয়াল পন্ডিতকে দেখতে আসে তখন আমার অনেক ভাল লাগে। শিয়ালের বাচ্চাটিকে যখন আমি পাই তখন তার বয়স এক মাস, বাচ্চা শিশুদের মত ফিডারে দুধ ভরে খাওয়াইছি। অনেক সময় দুধ খাইতে চাইত না তখন ডিম ভেঙ্গে খাওয়াইছি। অনেক অভাব অনটনের মধ্যেও আমার ছেলে, মেয়েদের যা খাওয়াইছি তাই শিয়াল পন্ডিতকে খাওয়াইছি।
    মুরগী ব্যাবসায়ী মোঃ আলিম গাজী বলেন, আমি মুরগী ব্যাবসা করি অনেক সময় আমার মুরগী মারা যায় আমি কোথাও ফেলে না দিয়ে শিয়াল পন্ডিত কে এনে দেই। আমি কাছে গেলে কিছু বলে না আমাকে অনেক ভালবাসে। আমার সাথে খেলা করে।
    স্কুল ছাত্র মোঃ মনির হোসেন বলেন, আমি প্রতিদিন এখান থেকে আসা যাওয়া করি, প্রতিদিন শিয়াল পন্ডিতের জন্য বিস্কুট ও টোস্ট নিয়ে আসি। আমাকে অনেক ভালবাসে ।আমার সাথে খেলা করে। আমার অনেক ভাল লাগে। আমার স্কুলের অনেক বন্ধুরাও আমার সাথে আসে শিয়াল পন্ডিতকে দেখতে।
    আউলিয়াপুরে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ রহিম মিয়া বলেন, বন্য প্রাণীর সঙ্গে সাহেব আলী যে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেছেন এক কথায় বলতে গেলে অনবদ্য। সাহেব আলী সত্যিই পশুপাখি প্রেমী। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি। সাহেব আলীর একজন দেশপ্রেমী তার বাড়িতে নিজ উদ্দ্যোগে গড়ে তোলেন শিশু ভাস্কর্য ও বিনোদন কেন্দ্র। নিজে না খেয়ে থাকলেও তার মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা দেশকে কিছূ করে দেখান। সাহেব আলী একজন দিনমজুর, রাজমিস্ত্রী।
    স্থানীয় মেম্বার মোঃ খলিল গাজী বলেন, অনেকেই না বুঝে বন্যপ্রাণীদের অত্যাচার করে। তাদেরকে আমি সতর্ক করে দিয়েছি। এছাড়াও প্রাণীদের হত্যা বা নির্যাতন করলে বন্যপ্রাণী আইনের সাজা হতে পারে বলেও সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। শুধু বন্যপ্রাণী কিংবা পশু পাখির প্রতিই সাহেব আলীর ভালোবাসা সীমাবদ্ধ নয়, নানা সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও সম্পৃক্ত সাহেব আলী। দুস্থ-অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য সাহেব আলী তার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন শিশু ভাস্কর্য ও বিনোদন কেন্দ্রে যা দেখতে ছুটে আসে দূর দূরান্ত থেকে।

    এমনটাই আশা ব্যক্ত করেন শিশু ভাস্কর্য বিনোদন কেন্দ্রের মালিক সাহেব আলী।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ